ধরুন আপনার সাথে এমন কিছু ঘটল, যেটা আপনি মোটেও পছন্দ করছেন না। তখন আপনার রিএকশনটা কেমন হয়?
কেমন হওয়া উচিত আমাদের প্রতিক্রিয়াগুলো?
বিরূপ পরিস্থিতির বিপরীতে আমাদের প্রতিক্রিয়ার তিনটা স্তর আছে।
📍 প্রথম স্তর হচ্ছে, ধৈর্য ধরা এবং এটা সর্বনিম্ন স্তর।
শুনতে অবাক লাগে না যে, ধৈর্য ধরাই সর্বনিম্ন স্তর ?
সামনে পড়তে থাকুন, তাহলেই বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
🔸 এই স্তরে থাকা অবস্থায় বান্দা তার পছন্দ অনুযায়ী কিছু হচ্ছে না দেখে খুব কষ্ট পায় এবং কষ্টের পাশাপাশি ধৈর্য ধরে
🔸 সে টেনশান করে, দুশ্চিন্তা করে- কিন্তু কথায়/কাজে আল্লাহ অখুশি হবেন, এমন কিছু করে না। আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন এমন কিছু মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে না।
🔸 কান্নাকাটি করেও সবর করা যায়, ধৈর্যশীল হওয়া যায়। আচরণে আল্লাহ অখুশি হবেন, এমন কিছু করা যাবে না।
🔸এই ব্যক্তির কাছে বিপদ আসা না আসা সমান নয়, বিপদ আসলে সে কষ্ট পায়।
🔸 এই সর্বনিম্ন স্তরের ধৈর্য্য টুকু যদি আমরা ধারণ করতে না পারি, তাহলে গুনাহগার হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেল। ন্যূনতম ধৈর্য না রাখলে বান্দার গুনাহ হবে।
————
📍 দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে Contentment অর্থাৎ বিপদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রশান্ত চিত্তে অন্তর শান্ত রাখা।
🔸 এই স্তরে বান্দা আল্লাহর সিদ্ধান্ত নিয়ে খুশি।
সে বিপদ আসলে কষ্ট পায় না। খুশি থাকে আল্লাহ যা দিয়েছে সেটা নিয়েই, কারণ সে জানে দুঃখ-কষ্ট উভয় পরিস্থিতি তার জন্য কল্যাণকর।
🔸 বিপদ আসা এবং না আসা এই ব্যক্তির জন্য সমান! সে বিশ্বাস করে, সবই তার জন্য কল্যাণ।
“মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজই তার জন্য ভালো। এটা মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। যদি তাকে কল্যাণ স্পর্শ করে সে আল্লাহর শোকর আদায় করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর যদি তাকে ক্ষতি স্পর্শ করে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়।”
(সহীহ মুসলিম)
🔸সে প্রথম স্তরের বান্দাদের মত কষ্টের তীব্রতা অনুভব করে না।
🔸 এই স্তর পর্যন্ত আসতে না পারলে বান্দার উপর কোন গুনাহ নেই।
———–
📍 তৃতীয় এবং সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে বিপদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কৃতজ্ঞ থাকা! Gratefulness সর্বোচ্চ স্তর – সুবহান আল্লাহ!
🔸 অর্থাৎ এই বান্দা তার পছন্দমত কিছু না হলে, বরং আল্লাহর কাছে আরো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে!
🔸 এই বিপদ আল্লাহ তাকে দিয়েছেন, সেজন্য অভিযোগ করা তো অনেক দূরের কথা, বরং সে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কারণ তার অন্তর দুনিয়াতে কোন কিছু পাওয়ার মায়া থেকে মুক্ত।
🔸 সেই বিপদের পুরোটুকুর বিনিময় আল্লাহর কাছে আখিরাতে সে চেয়ে নিবে, এই প্রশান্তি চিত্তে সে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ থাকে। চরম বিপদ পাওয়ার পরেও!
🔸 এই স্তর পর্যন্ত আসতে না পারলেও বান্দার উপর কোন গুনাহ নেই।
একজন প্রসিদ্ধ স্কলার বলেছেন, “যদি বান্দার অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা গভীর পর্যায়ে থাকে, তাহলেই বান্দা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাতে পারবে, যদিও বিপদ আপদ তার কাম্য নয়।”
“আর হ্যাঁ, জান্নাতে তাদের ঘরের প্রত্যেক দরজা দিয়ে ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এবং বলবে, ‘তোমাদের প্রতি সালাম’। কারণ, পৃথিবীতে তোমরা সবরকে নিজেদের আদর্শ করে নিয়েছিলে। কতই না উত্তম আখেরাতের এ ঠিকানা।’
(সূরা রা’দ : আয়াত ২৩-২৪)
এই তিনটা স্তর সম্পর্কে বিস্তারিত শিখলাম আমাদের অরিন আপুর কাছ থেকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপুকে উত্তম প্রতিদান দিক।
এখন চিন্তা করি তো, আমরা কোন লেভেলে আছি?
অপছন্দনীয় পরিস্থিতিতে আমাদের রিএকশনগুলো কেমন হয়?
আমরা নিজেদেরকে কোন স্তরে দেখতে চাই?
-শারিন শফি অদ্রিতা