আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্যের অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) কিছু শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবস্থান নেন শিক্ষকরা। এ সময় তাদের হাতে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগসংবলিত নানা প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে।
এ সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন বলেন, ‘আমরা সাধারণ শিক্ষক। আমরা সম্মানের জন্য কাজ করি এবং সম্মানের জন্যই এ পেশায় এসেছি। আমরা চাষাভুষা নই যে, আমাদের যা খুশি তাই বলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কেমন শিক্ষার্থী তৈরি করছি যে, আমাদের নিয়ে যা খুশি তাই বলবে।’
শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার বিষয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ‘এটি আমরা জানি না। এ হামলা কে বা কারা করেছে এটি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। রাষ্ট্র এ তদন্তের কাজ করতে পারে।’
শিক্ষক ফাহমিদা রহমান খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ রকম ভাষা কখনোই কাম্য হতে পারে না। তারা যে ভাষা ব্যবহার করছে তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। … শিক্ষকদের নিয়ে এমন ভাষা ব্যবহারের পর আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না।’
সহকারী অধ্যাপক জাহিদ হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন তার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষকদের নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য ও অশোভন ভাষা ব্যবহার কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।’
শনিবারের ঘটনায় ভুল স্বীকার করে সৈয়দ মুজতবা আলী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ আরফিন খান বলেন, ‘আমাদের একটা ভুল হয়ে গেছে। আপনারা ভুলটা খতিয়ে না দেখে ভিসির পদত্যাগে চলে গেলেন। একজন ভিসি যাবেন, আরেকজন ভিসি আসবেন। এ সমস্যাগুলো সমাধান করার প্রক্রিয়ায় আসেন।’
গেইটে অবস্থান নেওয়ার আগে শিক্ষকদের একাংশ উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করেন।
তবে শিক্ষকদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিছু শিক্ষক এসব কথা বলছেন। অথচ তারা ভিসির কুরুচিপূর্ণ অডিও ক্লিপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করছেন না।
তারা আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ১০/১৫ জন শিক্ষক মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন। আমাদের লজ্জা হচ্ছে- শিক্ষার্থীরা পুলিশের হাতে মার খেয়েছেন এ ব্যাপারে ওই শিক্ষকরা কোনো কথাই বলেননি।’
বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্টের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার রাতে আন্দোলন শুরু হয়। প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর শনিবার পুলিশি হামলার পর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।
রবিবার সন্ধ্যায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।