আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল, আমাদের অধিকাংশ গুনাহকেই তিনি ক্ষমা করে দেন। আবার মাত্র সামান্য কিছুর জন্য পাকড়াও-ও করেন। কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি ভঙ্গুর মই বেয়ে উঠে না, তা তো নির্বোধেরাই করে। আপনি যদি আল্লাহর আইন না মেনে চলেন আপনার জীবন হয়ে উঠবে দুর্বিষহ। পৃথিবীতে আমাদের কর্তব্যই হচ্ছে আল্লাহর বিধানানুসারে নিজেদের জীবন পরিচালনা করা।
اَفَمَنۡ اَسَّسَ بُنۡیَانَہٗ عَلٰی تَقۡوٰی مِنَ اللّٰہِ وَ رِضۡوَانٍ خَیۡرٌ اَمۡ مَّنۡ اَسَّسَ بُنۡیَانَہٗ عَلٰی شَفَا جُرُفٍ ہَارٍ فَانۡہَارَ بِہٖ فِیۡ نَارِ جَہَنَّمَ ؕ وَ اللّٰہُ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۱۰۹﴾
যে তার গৃহের ভিত্তি আল্লাহর তাকওয়া ও সন্তুষ্টির উপর প্রতিষ্ঠা করল, সে কি উত্তম না ঐ ব্যক্তি যে তার গৃহের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছে এক গর্তের পতনোন্মুখ কিনারায়? অতঃপর তাকে নিয়ে তা ধসে পড়ল জাহান্নামের আগুনে। আর আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়াত দেন না। [সূরা আত-তাওবাহ ৯:১০৯]
বর্তমান উম্মাহর সমস্যা হচ্ছে, তারা আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত শরিয়াহকে বাস্তবায়ন করাকে খুব কঠিন ভাবে। কেউ কেউ তো অন্তর থেকে ঘৃণাও করে। দেখুন আল্লাহ কি বলছেনঃ
ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ کَرِہُوۡا مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ فَاَحۡبَطَ اَعۡمَالَہُمۡ ﴿۹﴾
তা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। অতএব তিনি তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করে দিয়েছেন। [সূরা মুহাম্মদ ৪৭:৯]
আমরা আল্লাহর আইন মেনে চলতে প্রস্তুত নই, এরপরেও আমরা কিভাবে আশা করি তাঁর বিজয় আমাদের উপরে আসবে? আমেরিকাতে তারা বলে তাদেরকে ফাউন্ডিং ফাদার জন অ্যাডামস, ফ্র্যাংকলিন, হ্যামিল্টন, জন জে, জেফারসন, ম্যাডিসন আর জর্জ ওয়াশিংটনের প্রণীত আইন ও বিধি বিধান মেনে চলতে হবে। এমনকি তারা এটাও বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বের করে যে সেই পরিস্থিতি তাদের ফাউন্ডিং ফাদাররা বেঁচে থাকলে কিভাবে ম্যানেজ করতেন। কিন্তু আমরা যখন বলি আমরা মিশর এবং সিরিয়ায় তাদের ফাউন্ডিং ফাদার ‘আমর ইবন আল-‘আস রাদিআল্লাহু ‘আনহু’ যে আইন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই আইন চাই তখন কিছু মানুষের ভেতরে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। সম্ভবত মিশরের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম ‘আমর। যখন কাফিররা তাদের ফাউন্ডিং ফাদারদের আইন প্রণয়ন করে গর্ববোধ করতে পারে, তাহলে কেন আমরা আমাদের ফাউন্ডিং ফাদারদের আইন আমাদের দেশে আরোপ করতে লজ্জা পাবে? টিউনিসিয়া কেন আব্দুল্লাহ ইবনে আবি শারহ রাদিআল্লাহু ‘আনহুর প্রতিষ্ঠিত আইন দিয়ে চলতে সমস্যা? কারণ তিনি আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করেছিলেন বলে? পড়ে দেখুন আব্দুল্লাহ ইবনে আবি শারহ কে এবং টিউনিস এর সাথে তাঁর সম্পর্কই বা কি।
আমরা আর কত নিজেদের বোকা বানাব? আর কত নিজেদের কাছে মিথ্যা বলব। আপনি যদি আসমান থেকে বিজয় কামনা করেন, তাহলে আল্লাহকে দেখান আপনি পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চান, এরপরে দেখুন কিভাবে আপনার পদতলে বিজয় লুটিয়ে পড়ে। এগুলো কোন রূপকথার গল্প নয়। এগুলো আল্লাহ সুবহানআল্লাহতায়ালার সুন্নাহ এবং তাঁর আইন। যদি তাওহীদের মূল আইন আল্লাহর ভূখন্ডে স্থাপন না করা যায় তাহলে আমরা কিভাবে আল্লাহর কাছ থেকে বিজয় আশা করতে পারি? আমরা আসলে কাকে ধোঁকা দিতে চাচ্ছি? আমাদের মধ্যে তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নেই, আমাদের মধ্যে তো সাহাবারা নেই। সাহাবারা তো ভুল বোঝাবোঝির কারণে পাহাড় থেকে নেমে এসেছিলেন, কিন্তু আমরা যে তারচেয়েও শতগুণে বেশি ভুল বোঝাবুঝিতে লিপ্ত। আমরা কি অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক আচরণ, বল, সৈন্য, দেশ, জাতিকে ভয় পাচ্ছি?
দেখুন সুনানে আত তিরমিজিতে কি বলা হয়েছে। যারা মানুষকে খুশি করতে চায় আল্লাহকে অখুশি করে, আল্লাহ তাকে পরিত্যাগ করবেন এবং তাঁর প্রতি নাখোশ হবেন এবং মানুষও তাকে পরিত্যাগ করবে ও তাঁর প্রতি নাখোশ হবে। কিন্তু যে মানুষকে অখুশী করে হলেও আল্লাহকে খুশি করবে, আল্লাহ তাঁর প্রতি খুশি হবেন এবং মানুষও তাঁর উপর সন্তুষ্ট হবে।
এই প্রতিজ্ঞা আল্লাহ নিজে করছেন। আল্লাহ কি তাঁর ওয়াদা রক্ষা করেন না? আল্লাহ কি জানেন না কোনটা আমাদের জন্য অধিক উত্তম?
اَلَا یَعۡلَمُ مَنۡ خَلَقَ ؕ وَ ہُوَ اللَّطِیۡفُ الۡخَبِیۡرُ ﴿۱۴﴾
যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি অতি সূক্ষ্মদর্শী, পূর্ণ অবহিত। [সূরা আল মুলক ৬৭:১৪]
মানুষের দ্বারা প্রণীত আইনের কারণে আমরা অনেক ফিতনার সম্মুখীন হচ্ছি। কিছু ধূর্ত ব্যক্তি যারা নিজেদের শায়েখ বলে পরিচয় দেয় তারা মুসলিমদের উৎসাহিত করে সেক্যুলার দেশের আইন মনেপ্রাণে মেনে নেবার জন্য। কবে থেকে মুসলিমরা তাদের শায়েখ দের এতবড় কুফরি করার কথা বলার সাহস প্রদান করল? কবে থেকে মুসলিমরাই বা এভাবে কথা বলে? আমাদের উম্মাহর তো বাহ্যিক শত্রুর প্রয়োজন নেই যখন আমাদের ভেতরেই এরকম শত্রু রয়েছে যারা আল্লাহর আইনকে ফ্যান্টাসি বলে চালিয়ে দেয়! আল্লাহর আইন আর কুরআন ফ্যান্টাসি? মুসলিমদেশে দ্বীন কায়েম করা ফ্যান্টাসি? যারা পশ্চিমাদের কাছ থেকে ইসলাম শিখেছে তাদের কাছে ফ্যান্টাসি মনে হবে। যে কুরআন আমি মুখস্থ করেছি এবং যে তাফসীর গ্রন্থ আমি অধ্যায়ন করেছি তাদের সাথে এধরণের মেরুদন্ডহীন শায়েখদের আমি কোন মিল পাই না।
আপনি যেকোন নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ খুলুন এবং দেখুন মুফাসসিরগণ নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাপারে কি বলেছেনঃ
ثُمَّ جَعَلۡنٰکَ عَلٰی شَرِیۡعَۃٍ مِّنَ الۡاَمۡرِ فَاتَّبِعۡہَا وَ لَا تَتَّبِعۡ اَہۡوَآءَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۸﴾
অতঃপর (হে নবী সা.!) আমি তোমাকে দ্বীনের (সঠিক) পথের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছি, কাজেই তুমি তারই অনুসরণ কর, আর যারা (দ্বীনের বিধি-বিধান) জানেনা তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করো না। [সূরা আল-জাসিয়াহ ৪৫:১৮]
وَ مَا کَانَ لِمُؤۡمِنٍ وَّ لَا مُؤۡمِنَۃٍ اِذَا قَضَی اللّٰہُ وَ رَسُوۡلُہٗۤ اَمۡرًا اَنۡ یَّکُوۡنَ لَہُمُ الۡخِیَرَۃُ مِنۡ اَمۡرِہِمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّعۡصِ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلٰلًا مُّبِیۡنًا ﴿ؕ۳۶﴾
আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে। [সূরা আল-আহযাব ৩৩:৩৬]
اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکَ الۡکِتٰبَ بِالۡحَقِّ لِتَحۡکُمَ بَیۡنَ النَّاسِ بِمَاۤ اَرٰىکَ اللّٰہُ ؕ وَ لَا تَکُنۡ لِّلۡخَآئِنِیۡنَ خَصِیۡمًا ﴿۱۰۵﴾ۙ
নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে ফয়সালা কর সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন। আর তুমি খিয়ানতকারীদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না। [সূরা আন-নিসা ৪:১০৫]
…اِنِ الۡحُکۡمُ اِلَّا لِلّٰہِ ؕ یَقُصُّ الۡحَقَّ وَ ہُوَ خَیۡرُ الۡفٰصِلِیۡنَ ﴿۵۷﴾.
হুকুম কেবল আল্লাহর কাছে। তিনি সত্য বর্ণনা করেন এবং তিনি সর্বোত্তম ফয়সালাকারী’। [সূরা আল-আন’আম ৬:৫৭]
قُلِ اللّٰہُ اَعۡلَمُ بِمَا لَبِثُوۡا ۚ لَہٗ غَیۡبُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ اَبۡصِرۡ بِہٖ وَ اَسۡمِعۡ ؕ مَا لَہُمۡ مِّنۡ دُوۡنِہٖ مِنۡ وَّلِیٍّ ۫ وَّ لَا یُشۡرِکُ فِیۡ حُکۡمِہٖۤ اَحَدًا ﴿۲۶﴾
বল, ‘তারা যে সময়টুকু অবস্থান করেছিল, সে ব্যাপারে আল্লাহই অধিক জানেন’। আসমানসমূহ ও যমীনের গায়েবী বিষয় তাঁরই। এ ব্যাপারে তিনিই উত্তম দ্রষ্টা ও উত্তম শ্রোতা। তিনি ছাড়া তাদের কোন অভিভাবক নেই। তাঁর সিদ্ধান্তে তিনি কাউকে শরীক করেন না। [সূরা আল-কাহফ ১৮:২৬]
এসব বাদে আরো শত আয়াত ও হাদিস রয়েছে। এগুলো সবই কি ফ্যান্টাসি? ভন্ড শায়েখেরা হুদুদ, হাত কাটা অথবা জিনার শাস্তিকেই খালি ইসলামের আইন মনে করে। এগুলো শরি’আহ এরই অংশ কিন্তু তারা এটাকেই একমাত্র বানিয়ে নিয়েছে। ইসলামের একটা পূর্ণাঙ্গ অর্থব্যবস্থা রয়েছে যেটা আমাদের ভূমিতে অবশ্যই প্রতিষ্ঠা করতে হবে যদি আমরা আর্থিকভাবেও উন্নতি লাভ করতে চাই। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিভিন্ন আইন এবং নিয়ম রয়েছে।