যখন শহর জুড়ে সূর্য উজ্জ্বলভাবে আলোকিত হয় তখন আমাদের মন আনন্দিত হয়, আবার যখন একটানা ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে দিনগুলো কাটে তখন কারো কারো মনও ভারী হয়ে যায়, বিষন্নতা অনুভূত হয়।
অথবা খুব গরমে, উত্তাপ দেয়া সূর্যটাকে আর ভালো লাগে না, মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায় তখন একটু মেঘলা আকাশের জন্য মনটা অস্থির লাগে। তাহলে আবহাওয়া কি আসলেই আমাদের জীবন এবং মনকে প্রভাবিত করে? কীভাবে গরম এবং ঠান্ডা তাপমাত্রা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে?
আবহাওয়া আমাদের জীবনে ও মনে যে প্রভাব ফেলছে তা নিশ্চিত, তবে কীভাবে এটি আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে তা এখনও প্রমাণিত হয়নি। তবে যেটুকু জানা যায় তা হল , আবহাওয়া খুব সহজেই যে কারও মনকে ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচকই বেশি করে দিতে পারে ।
মানুষ সহজেই আবহাওয়ার পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত হয়। মানুষ সবসময় অত্যানুকূল তাপমাত্রায় স্বস্তি বোধ করে, খুব উচ্চ বা নিম্ন তাপমাত্রা দ্রুত মানুষের মেজাজকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। কেবল তাপ বা শীতই আমাদের মেজাজ ও মনকে প্রভাবিত করে না, ভারী বৃষ্টি, মেঘের আচ্ছাদন এবং আর্দ্রতাও প্রভাবিত করে।
আবহাওয়া আমাদের মেজাজকে বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করে । এখানে একটি উদাহরণ দিয়ে এটি বুঝানো যায়। যেমন- কোন ফটোগ্রাফিতে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা যখন কোনও পেইন্টিং বা কোনও ছবিতে একটু মন খারাপ বা নেতিবাচক ভিউ আনতে চাই আমরা কি করি? আমরা এটিকে দেখতে অন্ধকার, বৃষ্টিহীন, কুয়াশা বা ঝাপসা ইফেক্ট দিয়ে দেই।
আবার যখন কোনও ইতিবাচক ভাইব নিয়ে আসতে চাই তখন রোদ, আলোকসজ্জা, কালার, উজ্জ্বলতা এসব বাড়িয়ে দেই। এটি প্রমাণ করে যে মানুষের মন আবহাওয়া দ্বারা সত্যিই হয় প্রভাবিত হয়।
মানুষের কিছু অসুস্থতাও এই আবহাওয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়, উদাহরণস্বরূপ: সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার , যাকে শীতকালীন হতাশা বলে। দিবালোকের অভাবের কারণে শীতের হতাশা এবং অন্ধকার নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে মনে। খুব শীতে ঘর থেকে বের হতে না পারলে মানুষ বিষন্ন হয়ে পড়ে এবং এই রোগে আক্রান্ত হয়।
তাই Seasonal Affective Disorder (SAD) আসলেই একটি ব্যাধি এবং মানুষ এটির দ্বারা সত্যিই আক্রান্ত হয়। এই রোগের অন্যতম একটি চিকিৎসা হলো ব্রাইট লাইট ট্রিটমেন্ট। যা খুবই কার্যকর। এর কারণ হলো শরীরের সেরাটোনিন হরমোন। যা মন মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে। সুন্দর, উজ্জ্বল দিনে মন ভালো থাকে আর শরীরে এই হরমোন উৎপন্ন হয় বেশি। সূর্যের আলোতেই এই ব্যাধি নির্মূল হয়।
আবার যখন দিন অনেক দীর্ঘ হয় এবং মানুষ বেশি বাহিরে থাকে,তখন মানুষের মধ্যে হিংসাত্মক বোধ বেশি দেখা যায়, অপরাধ করার প্রবণতা বেড়ে যায় । গবেষণা থেকে জানা যায় যে, গরমের দিনে মানুষের বিরক্তি এবং আগ্রাসন বাড়ে । এক্ষেত্রে আবহাওয়ার তাপ দায়ী।
যেসব মানুষ আবহাওয়ার প্রতি বেশিই সংবেদনশীল তারা যদি হতাশা বা উদ্বেগের শিকার হয় তবে তাদের মেজাজে আবহাওয়ার প্রভাব বেশি পড়ে । তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মানুষকে এই প্রভাবগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং মোকাবেলার জন্য কার্যকর উপায় সন্ধান করতে হবে । পুরনো একটি প্রবাদ আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা বাতাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও নিজের নৌকার পালকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করবো ।