আফগান সংবাদমাধ্যম টেলোনিউজ আফগান প্রেসিডেন্টকে লেখা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সতর্কবার্তা সংবলিত চিঠি প্রকাশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, ‘১ মের পর আফগানিস্তানে আমাদের কোনো সেনা থাকবে কিনা এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আলোচনার জন্য সব বিকল্প খোলা থাকবে।’ তবে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্সের নেওয়া এই সাক্ষাৎকারে চিঠির বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হন নি তিনি।
উল্লেখ্য ৯/১১ হামলার জবাবে ২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তানে শুরু হয় মার্কিন-তালেবান যুদ্ধ। দীর্ঘ ২০ বছরের অমিমাংসিত যুদ্ধের পর গত বছর মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘দোহা চুক্তি’তে সাক্ষরের মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর সব সেনা প্রত্যাহারের জন্য রাজি হোন। চুক্তি অনুসারে ২০২১ সালের ১লা মে তে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার করে নিবে যুক্তরাষ্ট্র, বিনিময়ে তালেবানরা আফগানিস্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তবে নবনির্বাচিত বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত জানুয়ারি মাসে জানানো হয়, চুক্তিটি পুনর্বিবেচনা করে দেখবে তারা। আরো বলা হয়, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পূর্বে তারা দেখতে চায় তালেবানরা তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করছে।
এর ফলশ্রুতিতে নবনির্বাচিত বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশ্রাফ গনিকে চিঠি লেখেন। চিঠিতে শান্তি আলোচনার মোট চারটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। রয়টার্সের দেওয়া তথ্যমতে, চিঠিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের শান্তি আলোচনা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের কাছে রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান, ইরান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হবে। এ সম্মেলন আয়োজনের জন্য তুরষ্ককে অনুরোধ জানাবে যুক্তরাষ্ট্র। চিঠিতে অন্তর্বতী সরকার বা তালেবানদের সাথে একত্রে সরকার গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশংকা প্রকাশ করে লিখেছেন যে, মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের প্রত্যাহার করা হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। তালেবানরা আরো এলাকা নিজেদের দখলে নিবে। তিনি আফগান প্রেসিডেন্ট কে সতর্ক করে লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে নেওয়া শান্তি চুক্তি তরান্বিত করার প্রস্তাবগুলো জরুরিভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হলে গনি সরকারের নিজেকেই তালেবান হামলার মোকাবেলা করতে হতে পারে।
এদিকে আফগানিস্তান বিষয়ক মার্কিন দূত নতুন পরিকল্পনা নিয়ে সোমবার কাবুলে পৌছান। তিন দিনের এ সফরে তিনি প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি, জাতীয় পুনর্গঠন বিষয়ক উচ্চ পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই, সাবেক আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল রশিদ দোস্তাম, জেনারেল কারিমি সহ আরো অনেক রাজনীতিবিদের সাথে অন্তর্বতী বা জোট সরকার সম্বন্ধে আলোচনার্থে সাক্ষাৎ করেন এবং দ্রুত তাদের মতামত জানাতে বলেন।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বক্তব্য পর্যালোচনা করলে বোঝা যাচ্ছে, বাইডেন প্রশাসন শান্তি আলোচনায় আগ্রহী হলেও, অদূর ভবিষ্যতে আফগানিস্তান হতে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এতে আফগানিস্তানের জনগনের ভোটাধিকার পাওয়ার অপেক্ষা আরো বাড়লো।
Reporter: Nanjiba Naowar