ক্ষমতার পালাবদলের পর আফগানিস্তানকে আর কখনো সন্ত্রাসীদের স্বর্গে পরিণত হতে দেওয়া উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। একই সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর এই জোট দেশটির চলমান সংকট সমাধানে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপ শুরুর আহ্বান জানিয়েছে।
এ ছাড়া জেদ্দাভিত্তিক সংস্থা ওআইসি বলেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায়এবং দেশটির জাতীয় পুনর্গঠন কাজের গুরুত্ব তুলে ধরতে সে দেশে প্রতিনিধিদল পাঠাবে তারা। এএফপি ও সৌদি গেজেটের খবর।
আফগানিস্তানের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামাল দিতে ওআইসির এমন উদ্যোগ ছাড়াও আজ মঙ্গলবার বৈঠকে বসছেন জি–৭ জোটের নেতারা। সপ্তাহখানেক আগে আফগানিস্তানে পশ্চিমা–সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকারকে হটিয়ে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটিতে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক সরকার গঠিত হয়নি। তবে একটি অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠনে আলোচনা শুরু করেছেন তালেবান নেতারা।
মুজাহিদিনদের প্রতিরোধের মুখে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনারা আফগানিস্তান থেকে পিছু হটার পর ১৯৯৬ সালে দেশটিতে সরকার গঠন করে তালেবান। পরে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ হামলা চালায় আল–কায়েদা। সংগঠনটির নেতা ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে ওই বছরই আফগানিস্তানে কথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নামে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এতে তালেবান সরকারের পতন ঘটে। কিন্তু দেশটিতে শান্তি ফেরেনি। এরপর দুই দশকের এক দীর্ঘ রক্তক্ষয়–সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়ে যায় আফগানিস্তান। এখন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে পিছু হটার পর আবার ক্ষমতায় সেই তালেবান।
আফগানিস্তানের সাম্প্রতিকতম পরিস্থিতি নিয়ে গত রোববার সৌদি আরবের জেদ্দা নগরীতে জরুরি বৈঠকে বসেন ওআইসির নির্বাহী কমিটির সদস্যরা। সৌদির অনুরোধে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দেশটি যেন আর কখনো সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসী সংগঠনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার প্ল্যাটফরম বা স্বর্গ হয়ে না ওঠে, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।
বৈঠকে ওআইসির প্রতিনিধিরা আফগানিস্তানের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। পাশাপাশি আফগানিস্তানে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং দেশটির উন্নয়নে সহায়তা করতে জোটের সদস্যদেশগুলোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
আফগান জনগণের স্বার্থকে এগিয়ে নিতে, সহিংসতার অবসান ঘটাতে, জরুরিভিত্তিতে নিরাপত্তা ফেরাতে এবং আফগান সমাজে নাগরিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে কাজ করার আহ্বান জানান ওআইসির নেতারা। স্থিতিশীলতা, সুন্দর জীবন, নিজেদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমৃদ্ধি অর্জনে আফগান জনগণের যে প্রত্যাশা, তা পূরণে দেশটিতে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা।
আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের কাছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাওয়া–পাওয়ার বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয় এ বৈঠকে। সংস্থাটির নেতারা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চায়, আফগানিস্তানের তালেবান নেতৃত্ব যেন দেশ পুনর্গঠনের কাজ ত্বরান্বিত করেন, আন্তর্জাতিক সনদ ও চুক্তিগুলো মেনে চলেন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সনদ ও প্রস্তাবে উঠে আসা আন্তর্জাতিক শাসন
রীতিনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পদক্ষেপ নেন।
ইসলাম ধর্মের সহনশীলতার নীতি এবং সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সঙ্গে সংগতি বজায় রেখে আফগান জনগণের জীবনযাপনের অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা করা এবং এসবের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তার ওপর বৈঠকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
আফগানিস্তানে করোনা মহামারির মধ্যেই দেখা দেওয়া খরা, খাদ্যসংকট, মানুষজনের গৃহহীন হওয়াসহ মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় বৈঠকে। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সদস্যদেশ, ইসলামি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ও অংশীজনদের দেশটিতে দ্রুত মানবিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয় বৈঠকে।
এদিকে আফগানিস্তানে রাজনৈতিক সংকটের একটি টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে সে দেশের নেতৃত্বে চলা শান্তিপ্রক্রিয়ায় সমর্থনদান এবং এই প্রক্রিয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের প্রতি ওআইসির পূর্ণ প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করেন এ জোটের নেতারা।