তবে পোশাক আপসাইক্লিং কিন্তু শুধু জীবনের প্রয়োজন নয়। একজন দায়িত্ববান মানুষ ও সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার মধ্যে নিহিত বিশ্বব্যাপী এর আবেদনটি এখন সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও অপচয় রোধ নিশ্চিত করে ।একটু অলংকরণ বা রূপবদল করে পরতে পারলে তার মধ্যে থাকবে এক অন্য রকম গৌরব তাই এই ঈদে পুরোনো কাপড়ই একটু সাজিয়ে নিয়ে।
তবে ঈদ একেবারে এসেই গেল। তবে কিন্তু অতিমারির বারবার আঘাতে নদীর পাড়ভাঙা মানুষের মতো দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠীর একেবারেই সুযোগ আর সাধ্য নেই এবারের ঈদে বিলাসবহুল আয়োজনের। স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগিদে আর বিলাসিতা ত্যাগ করে সেই অর্থ নিয়ে আর্তমানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে সামর্থ্যবান অনেকেরও এবার মন উঠছে না ঈদে নতুন কাপড় কিনতে আবার অবিবেচক আর অসচেতন মানুষদের কথা বাদ দিলে।
পরিবারের সবার জন্য নতুন কাপড় আর একটু ভালো খাবার, এইটুকু বাদ দেওয়া সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ে তবু শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও ঈদ আসে। সৃজনশীল মন ও হাতকে কাজে লাগিয়ে । এতে একদিকে যেমন সাশ্রয়ী হবে এবারের ঈদ, তেমনি এই বিশেষ দিনের আনন্দটুকু থাকবে অম্লান পুরোনো কাপড়টিকেই ঈদের জন্য অভিনব রূপে সাজিয়ে তোলার তাই তো সময় এসেছে বুদ্ধি দিয়ে,। আর পোশাক আপসাইক্লিং বা নতুনভাবে পুনর্ব্যবহারের কিন্তু অসংখ্য উপায় আছে। তবে শুধু জহুরির চোখ আর শিল্পীর মনটা থাকা চাই।
আর সাদামাটা একরঙা শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ বা শুধু ওড়নাতেই যদি চেইন স্টিচ, কাঁথা স্টিচ, ক্রস স্টিচের কিছু সাধারণ ডিজাইনও এমব্রয়ডারি করে নেওয়া যায়, তবে তা একেবারেই নতুন চেহারা পাবে। তবে বাচ্চাদের জামা বা পাঞ্জাবিতে ছোট ছোট ভরাটকাজ করা যায় রং-বেরঙের লাচ্ছি সুতা দিয়ে।আর সাধারণ চেক বা ব্লকের পাঞ্জাবির নেকলাইনে অল্প এমব্রয়ডারি করলেই ঈদে নতুন পাঞ্জাবি হয়ে গেল।
আর আজকাল অনলাইনেই কিনতে পাওয়া যায় চুমকি, গোটা পাত্তি, জরি, পুঁতি ইত্যাদি। আর অন্য রকম জমকালো লুক আনতে যেকোনো প্রিন্ট, চেক বা ব্লকের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, গাউন বা পাঞ্জাবিতে ব্যবহার করা যায় এগুলো। তবে কিছু স্টোন পাওয়া যায়, যা খুব সহজে ইস্তিরির তাপে কাপড়ে বসিয়ে নেওয়া যায়। আর ইস্তিরির গরম তাপে সেট হয়ে যায় এ রকম কার্টুন বা ফলের স্টিকারও পাওয়া যায় বাচ্চাদের জামায় লাগানোর জন্য।
তবে এখন বৈশ্বিক ফ্যাশন ট্রেন্ড অনুযায়ী, চওড়া লেস, নেটের কাপড়ের আবরণ, কুরুশ কাটার কাজে স্লিভের এক্সটেনশন খুবই জনপ্রিয়। একটি নতুন পোশাক পাওয়া যায় আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাচ্চাদের ছোট হয়ে যাওয়া টপ, স্কার্ট, ফ্রক, কামিজ ইত্যাদির নিচের অংশে ও হাতায় বাড়তি চওড়া লেইস বা কুরুশের বুনন জুড়ে দিয়ে অনায়াসে সুন্দর। আবার সুতি, শিফন বা সিল্কের একরঙা বা প্রিন্ট শাড়ি অথবা যেকোনো ফেব্রিকের দোপাট্টায় উজ্জ্বল জমকালো পাড় বা লেস বসিয়ে নিলে আর তা চেনাই যাবে না।
তবে আজকাল বেশ সহজেই অনেক ধরনের নন-টক্সিক এমনকি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি পেইন্ট পাওয়া যায়। আর পরিবারের শিশুদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন মজার এলোমেলো আঁকিবুঁকি করে নিলে ওয়ার্ডরোবের এক কোণে পড়ে থাকা একরঙা টি–শার্ট অথবা থান শাড়িটি এক স্মৃতির আধার হয়ে থেকে যাবে। তবে আর শখের বশে হ্যান্ডপেইন্ট, ব্লক, টাই ডাই বা বাটিকের কাজ জানা থাকলে তো কথাই নেই। যেকোনো পোশাকই বিভিন্ন রঙের ছোঁয়ায় একেবারে নতুন হয়ে উঠতে পারে। আর একরঙা হালকা রঙের থান শাড়িটি ডাই করিয়ে বা রাঙিয়ে নেওয়া যায় বিশেষায়িত দোকান থেকে।