আপনি নারী। আপনার আত্ম-সম্মান কেমন হবে?
নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মাবাদ
লজ্জা মু’মিন নারীর অলংকার। তাঁর ইজ্জত ও মর্যাদার জামিন। একজন লজ্জাবতী নারী তাঁর পরিবারের জন্য মর্যাদার প্রতীক। নেককার নারী মাত্রই লজ্জাবতী হয়ে থাকে। একজন পবিত্র মু’মিন নারী তার পরিবার ও সমাজের জন্য বরকত ও কল্যাণ এর কারণ। ইসলামী সংস্কৃতি ও সভ্যতায় নারী হলো পরিবার রাজ্যের রানী।একেকজন মুসলিম নারী একেকটি পরিবারের আলোর প্রতীক। তার প্রিয়তম স্বামীর স্বপ্নের রাজকুমারী। পরিবারের রাজ্যপাঠ গোছানোর দায়িত্ব তাঁর।
ইসলাম কখনও নারীকে মঞ্চের বেহায়া নর্তকী কিংবা জনসমাবেশে পুরুষের মনোরঞ্জনকারী অথবা পণ্যের মোড়কে সস্তা বিজ্ঞাপন রূপে দেখে না। নারীকে লাঞ্চিত ও অপদস্থ জীবনের পথ দেখিয়েছে পাশ্চাত্য জাহান্নামি সংস্কৃতি। তারা নারীদেহকে মার্কেটিং এর উপকরণ বানিয়েছে নারীকে পুরুষের ভোগ পণ্যে পরিণত করেছে।
নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক!
আল্লাহ তা’আলা মুমিন নারীদেরকে এমন লাঞ্চনাকর জীবন থেকে হিফাজত করুন।
হে আমার বোন! আজ পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অশ্লীল জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে মুসলিম সমাজ। মুসলিম নারীরাও আজ নিজেদের আত্মপরিচয় ভুলে হারিয়ে যাচ্ছে এই নোংরা সংস্কৃতির মিছিলে।
বোন! আপনাকে সাবধান হতে হবে, পাশ্চাত্য শয়তানি সংস্কৃতির জোয়ার যেন আপনার লজ্জা কেড়ে নিতে না পারে, আপনার পবিত্র জীবনকে কুলষিত করতে না পারে। ইসলামের সোনালী যুগের নারীরা ছিলেন হায়া ও লজ্জার মূর্ত প্রতীক।
চলুন, আপনাকে সেই কল্যাণময় যুগের দু-একটি দৃশ্য দেখাই। যাতে আপনি বুঝতে পারেন, কেমন ছিলেন আপনার পূর্বসূরী পুণ্যবতী নারীরা।
জান্নাতি নারীদের সরদার সাইয়্যেদাহ ফাতেমা বিনতে মুহম্মদ রাদিয়াল্লাহু আনহা একবার আসমা বিনতে উমাইস রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেন,” মৃত্যুর পর মহিলাদের সঙ্গে যা করা হয় তা আমি অপছন্দ করি। তার শরীর কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়, ফলে যারা তাকে দেখে, তারা মহিলার দৈহিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে। “তিনি খাটের রাখা মহিলাদের লাশের কথা বলছিলেন।
আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,” আমি হাবসায় দেখা একটি নিয়ম আপনাকে দেখাবো” – এই বলে তিনি কিছু কাঁচা খেজুরের ডাল নিলেন তারপর সেগুলোকে বাঁকা করলেন এবং তার উপর একটি চাদর ছড়িয়ে দিলেন।
সাইয়্যেদা ফাতেমাতুয যাহরা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন,” বাহ কি সুন্দর! কি চমৎকার! আমি মারা গেলে তুমি আর আলী আমাকে গোসল দেবে, আর কেউ যেনো ভেতরে না আসে।”
প্রিয় বোন! একটু ভেবে দেখুন কেমন হায়া ছিল জান্নাতে নারীদের সরদার ফাতেমাতুয যাহরার! মৃত্যুর পর তাঁর চেহারা তো দূরের কথা শরীরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের ইঙ্গিতও কেউ পাক – তাও তিনি সহ্য পারেননি!
আপনাকে আরো একটি গল্প শোনাই। মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত একটি সহীহ হাদীসে এসেছে, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যেদাহ আয়েশা সিদ্দিকা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমার ঘরে যখন কেবল রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমার পিতা আবু বকরের লাশ দাফন করা হয়েছিল তখন আমি অনেকটা অবিন্যস্ত বসনে ঘরে প্রবেশ করতাম। আমি ভাবতাম, একজন আমার স্বামী আরেকজন আমার পিতা। তাই পর্দা করার কিছু নেই। কিন্তু যখন হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দাফন করা হলো, তারপর থেকে আমি কখনও শরীরে ভালো করে কাপড় না জড়িয়ে ঘরে প্রবেশ করতাম না। কারন ওমরের কারনে আমি অন্তরে হায়া ও লজ্জা অনুভব করতাম।
সুবহানাল্লাহ! কত হায়া ছিলো তাঁদের!
প্রিয় বোন! আপনার চিন্তাও এমন পবিত্র হোক। জীবনে মরণে লজ্জা হোক আপনার অলংকার। পবিত্রতার সংযম হোক আপনার পরিচয়। জান্নাতের নারীদের সরদার সাইয়্যেদা ফাতিমাতুয যাহরা রাদিয়াল্লাহু আনহা আর উম্মুল মু’মীনিন সাইয়্যেদা আইশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা হোক আপনার জীবনাদর্শ।
– শাইখ তামিম আল আদনানীর লেকচারের ট্রান্সক্রিপ্ট
লেখা সংগ্রহেঃ মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া।