পরিবেশবাদীদের আপত্তি উপেক্ষা করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের নির্বাচনী এলাকা মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক করার মহাপরিকল্পনা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন আজ রোববার রাজধানীর বন ভবনে এক অনুষ্ঠানে তা অনুমোদন দেন। ৮৪৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরে ওই পার্কের মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে বন অধিদপ্তর। অনুষ্ঠানে মহাপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী প্রকল্পের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, মৌলভীবাজার দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকা। সেখানে এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর, চা–বাগান, বন, পাহাড় ও জলপ্রপাত আছে। এ সৌন্দর্য ধরে রাখতে হলে সেখানে সাফারি পার্ক নির্মাণ করতে হবে। সেই লক্ষ্যে সরকার লাঠিটিলা বনে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি সাফারি পার্ক নির্মাণ করবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়।গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বিদেশি প্রাণী আনা হয়েছে, আর সেগুলো সম্প্রতি মারা যাচ্ছে। তাহলে আবারও কেন মৌলভীবাজারে সংরক্ষিত বনের মধ্যে আরেকটি সাফারি পার্ক নির্মিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমকর্মীরা এ প্রশ্ন তোলেন। মন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গাজীপুর সাফারি পার্কে বন্য প্রাণী মারা যাওয়ার ঘটনায় আমরা মর্মাহত ও দুঃখিত। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করি শিগগিরই প্রাণীগুলো কেন মারা গেল, তার কারণ জানা যাবে।’
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, ‘আমরা প্রথম সাফারি পার্ক নির্মাণের সময় অনেক ভুল করেছি। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে সেগুলো সংশোধন করলেও বেশ কিছু ভুল রয়ে গেছে। যার ফলাফল এখন দেখা যাচ্ছে, অনেক প্রাণী মারা যাচ্ছে। তাই এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমাদের তৃতীয়টি এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে, যাতে কোনো ভুল না হয়। সে জন্য আমাদের দেশীয় বন্য প্রাণীগুলো দিয়ে সাফারি পার্ক করা যায় কিনা, তা দেখতে হবে।’পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, শীতকাল এলে কিছু প্রাণী মারা যেতে পারে। কিন্তু মারা যাওয়া প্রাণীর সংখ্যা বেশি হলে তা অস্বাভাবিক ব্যাপার। ফলে সবার সহযোগিতা ও মতামত নিয়ে এ সাফারি পার্কটি নির্মাণ করা হবে। যাতে সেখানে প্রাণীদের সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং বন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন। মূল মহাপরিকল্পনা তুলে ধরেন স্থাপত্যবিষয়ক সংস্থা ‘ভিত্তি’র পরিচালক ইশতিয়াক জহির।ইশতিয়াক জহির বলেন, ‘সাফারি পার্কটি নির্মাণের পরিকল্পনা করার সময় এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নানা ধরনের মতামত এসেছে। পরিবেশবাদীরা ছাড়াও অনেকে এর সমালোচনা করেছে। আমরা এ সবগুলো সমালোচনা ও আশঙ্কা বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনাটি তৈরি করেছি।’এর আগে ১৯৯৯ সালে কক্সবাজারের ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এবং ২০১৩ সালে গাজীপুরে আরেকটি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক নির্মিত হয়। এর মধ্যে গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে সম্প্রতি ১১টি জেব্রা, ১টি বাঘ ও ১টি সিংহী মারা গেছে। এ নিয়ে সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কী কারণে প্রাণীগুলো মারা গেল, এখনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি।