দেশের বাজারে আবার বেড়েছে আটার দাম। বিপণনকারী কোম্পানিগুলো আটার দুই কেজির প্যাকেটের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে ১০৮ থেকে ১১৫ টাকা, যা আগের চেয়ে ১২ থেকে ১৭ টাকা বেশি। এ হিসাবে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৬ থেকে সাড়ে ৮ টাকা।
দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য চাল। এরপরই রয়েছে আটা-ময়দা। এই খাদ্যপণ্যের দাম নিয়মিত বাড়ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক বছরে আটার দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে। আর খোলা ও প্যাকেটজাত ময়দার দাম বেড়েছে ৪৯ থেকে ৬৬ শতাংশ। অবশ্য টিসিবি যে দর উল্লেখ করেছে, তা বাজারের নতুন দামের চেয়ে কম।
কোম্পানিগুলো আটার দাম বাড়াল দেশে গমের দাম বেড়ে যাওয়ার পর। ভারত সরকার ১৪ মে নিজেদের বাজার সামাল দিতে গম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এরপরই বাংলাদেশে দাম আরেক দফা বেড়ে যায়। তবে ভারত বলেছে, প্রতিবেশীরা গম পাবে। বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ও বলছে, তারা ভারত থেকে গম আমদানি করতে পারবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশ দুটি থেকে গম আমদানি বন্ধ রয়েছে। বিপরীতে ভারত থেকে আমদানি বাড়ছিল। গত ১ মার্চ থেকে ১২ মে সময়ে মোট আমদানির ৬৩ শতাংশ গম এসেছিল ভারত থেকে।
দেশে বছরে প্রায় ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা আছে। এর প্রায় ৬৫ লাখ টন আমদানি হয়। কোম্পানিগুলো গম আমদানি করে আটা ও ময়দা প্যাকেটজাত করে বিক্রি করে। আবার খোলা অবস্থায়ও বিক্রি হয়। খোলা আটার দাম আগেই বেড়েছিল। এবার প্যাকেটজাত আটার দাম বাড়ল।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, কয়েকটি কোম্পানির নতুন দামের আটা বাজারে এসে গেছে। আবার কয়েকটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা নতুন দামে ফরমাশ নেওয়া শুরু করেছেন। কারওয়ান বাজারের মুদিদোকান রব স্টোরের বিক্রেতা ইকরামুল হক বলেন, ‘আটা-ময়দার দাম ওঠানামা করতে করতে একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু কোম্পানিগুলো আবার প্যাকেট আটার দাম বাড়িয়েছে।’
কারওয়ান বাজারের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, একটি ব্র্যান্ডের আটার দুই কেজির প্যাকেটের উৎপাদনের তারিখ লেখা ২০ মে, দর ১০৮ টাকা। আরেকটি ব্র্যান্ডের মোড়কে উৎপাদনের তারিখ লেখা ২১ মে, দাম ১১৫ টাকা (দুই কেজি)। অন্য একটি ব্র্যান্ডের দুই কেজির প্যাকেটে উৎপাদনের তারিখ লেখা ২২ মে, দাম ১০৮ টাকা।
ঢাকার মগবাজারের কয়েকজন দোকানি জানান, কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানিয়ে গেছেন, আটার দাম বেড়েছে। তবে বাড়তি দামের আটা তাঁরা রাখা শুরু করেননি। ইস্কাটনের দিলু রোডের নারমিন স্টোরের স্বত্বাধিকারী উজ্জ্বল কুমার দে বলেন, ‘আটার দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এত দ্রুত দাম বাড়ছে যে ক্রেতারা বিরক্ত। বারবার নতুন দাম মনে রাখতে রাখতে আমরাও বিরক্ত।’
বাজারে খোলা আটার কেজি ৫০ টাকার আশপাশে এবং বাজারভেদে খোলা ময়দা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
দেশে উচ্চ আমিষযুক্ত গম ভেঙে ময়দা তৈরি হয়। ময়দার দাম বাড়ার কারণে বাজারে রুটি, বিস্কুট ও সমজাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। নতুন করে নুডলস কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন মুদিদোকানিরা।
সুপরিচিত একটি ব্র্যান্ডের বড় এক প্যাকেট নুডলসের দাম লেখা দেখা যায় ২৪০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ২১০ টাকা ছিল। এই বড় প্যাকেটের মধ্যে ১২টি ছোট প্যাকেট থাকে। মানে হলো, প্রতি প্যাকেটে আড়াই টাকা বেড়েছে। একইভাবে দাম বাড়িয়েছে অন্য কোম্পানিগুলো।
বাজারে ফার্মের মুরগির লাল ডিমের দাম সাধারণত হালি ৩০ টাকার আশপাশে থাকে। ডজন পাওয়া যায় ৯০ টাকার আশপাশে। এখন সেই ডিমের হালি ৪২ থেকে ৪৩ টাকা ও ডজন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। টিসিবি বলছে, এক বছর আগের তুলনায় এখন ডিমের দর ৪০ শতাংশ বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহে ডিমের দাম নতুন করে ডজনে ১৫ টাকা বেড়েছে। কারওয়ান বাজারে গতকাল পাইকারিতে ফার্মের মুরগির লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা ডজন। দেশি মুরগি ও হাঁসের ডিমের দাম আরও বেশি, ডজন ১৫০ টাকা, খুচরায় গিয়ে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশে সাম্প্রতিককালে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ প্রায় সব খাদ্য এবং সাবান ও টুথপেস্টের মতো নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বেড়েছে। ঢাকার মগবাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান বলেন, সরকার টিসিবির পণ্য সুলভ মূল্যে কিনতে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ দিচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষকে। এখন মধ্যম আয়ের মানুষও চাপে পড়েছে। তাদের কিছুই করার থাকছে না।