আজ অনেক বেশি কথা হলো নিঝুমের সাথে। কিন্তু খাবার টেবিলে আবারও নিরবতা! ভালই হয়েছে। বেশি কথা বললে সে আরও খাবার তুলে দিত। আল্লাহ্ বাঁচাইছে!
ডিনার শেষ করে ফ্রেস হয়ে এসে বেডে যখন বসলাম, ঘড়িতে তখন দুইটা বেজে সাত মিনিট। ভাগ্যিস কালকের দিনটা শুক্রবার! না হলে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে অফিস টাইমের অর্ধেক চলে যেত।
ঘুম আসছে না আজ। তাই বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। আজ রাতের আবহাওয়াটা দারুণ তো! সতেজতা বিরাজ করছে। রাতের আকাশে আজ চাঁদ নেই। মিটিমিটি জ্বলছে কয়েকটা তারা। অখিলের বিশালতায় যে তারাগুলো মিটমিটিয়ে হাসছে, সেই তারাগুলো মাঝে কী নুসাইবাও আছে?
পাগলি একটা মেয়ে। ওর নাকি চাঁদ ভাল লাগতো না, তারা ভাল লাগতো। এই কথা শুনে আমি হেসে ফেলেছিলাম। তারাতে ভাললাগার মতো কী আছে? তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। সে অদ্ভুত একটি উত্তর দিয়েছিল। বলেছিল, “কেউ মারা গেলে তো আর কখনো তাকে দেখা যায় না। কিন্তু আকাশের তারাগুলো প্রায়ই দেখা যায়। আমার প্রিয়জনদের মাঝে বেশ কয়েকজন মারা গিয়েছে। তাদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হলে আমি আকাশের তারাগুলোর সাথে কথা বলি। ওরা মিটমিট করে যখন জ্বলে, আমি আমার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাই।”
আমি কখনও আয়েশ করে আকাশের তারা দেখি নি। আজ তারাগুলো দেখে নুসাইবার মতো কথা বলতে ইচ্ছে করছে। একটি উজ্জ্বল তারাকে নুসাইবা ধরে নিলাম। তাকে বললাম,
” নুসাইবা, আপনি কেমন আছেন? আপনার জন্য রাখা আংটিটি আজ আমি নিঝুমকে দিয়ে ফেলেছি। আপনি কী মন খারাপ করেছেন? এছাড়া উপায় ছিল না যে! নিজেকে আমার অপরাধী লেগেছিল। তাই ভাবলাম, আপনার জন্য কেনা রিংটা তো আর কখনই আপনাকে দেয়া হবে না। তার চেয়ে নিঝুমকে দিলে যদি সে কিছুটা খুশি হয়! আর আমারও কিছুটা অপরাধবোধ কমে!”
তারা কখনও মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। এটা জেনেও আমি কথা চালিয়ে গেলাম। ভাল লাগছে কেন জানি।
“নুসাইবা, আমি নিঝুমের সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি এবং এখনও করছি। স্ত্রীরূপে তাকে আমি মেনে নিতে পারছি না। হৃদয়ের যে স্থানটা শুধুমাত্র আপনার জন্যই সাজিয়েছিলাম, সেই স্থানটা আর কাউকে কী করে দেই, বলুন তো?
আপনি কেন চলে গেলেন? আপনাকে সারপ্রাইজড করার জন্য আমি আপনার পছন্দের সব কিছু আগেই কিনে রেখেছিলাম। আপনার শাড়ি পড়তে ভাললাগে বলেছিলেন। আর রং এর মধ্যে সাদা, কালো, পিংক, সবুজ, গাঢ় খয়েরী, কফি কালার আপনার পছন্দের ছিল। তাই আমি আপনার পছন্দের কালারের বিভিন্ন শেডের ৩০টি শাড়ি কিনে রেখেছিলাম। প্রতিটি শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে চুড়ি, দুল কিনে রেখেছিলাম। ২জোড়া নূপুর, ডায়মন্ডের একটি নোজ পিন আর একটি আংটি বানিয়ে রেখেছিলাম। এগুলো এখনও আলমিরাতে রাখা আছে।
[চলবে]
Writer: Mahazabin Sharmin Priya