মা এসে তাকে জোর করে একটি ডিম সিদ্ধ খাইয়ে দিল। টেবিলে রাখা গ্লাস থেকে সামান্য পানিতে গলা ভিজিয়ে দিল দৌঁড়।
আজ রিক্সায়ই যেতে হবে। তাই একটি রিক্সা ডেকে আয়াত উঠে পড়লো। রিক্সাওয়ালা মামাকে জোর টান দিতে বললো। আয়াত কোনো ভাবেই আর পরের ক্লাসগুলো মিস করতে চায় না।
রিক্সা দ্রুতবেগে চলছে। আয়াত দূর থেকে পাগলীটার অবস্থান টের পেয়ে মামাকে বললো ঐ জায়গাটায় গিয়ে যেন গতি কমিয়ে দেয়। আয়াতের কথা মতো রিক্সা মহিলাটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তিনি মাথা নিচু করে ডাল-পরোটা খাচ্ছে। আর পাশেই একটা স্যান্ডউইচ ব্রেড এবং প্রতিদিনের মতো নতুন একটি মিনারেল ওয়াটারের বোতল।
তার খাবার ভঙ্গিমা আজ প্রথম আয়াত খুব কাছে থেকে দেখলো। তিনি পরোটা ডান হাত দিয়ে ছিঁড়ছে আর হালকা করে ডালে চুবিয়ে পরম তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে। বাম হাত লাগাচ্ছে না বা গপগপ করেও খাচ্ছে না। পরোটা ছিঁড়ছেও খুব সামান্য করে। আর তার খাওয়ার ভঙ্গিটাও অন্যরকম। খুব ভালো করে লক্ষ করলে, যে কেউ ই বুঝতে পারবে এই মহিলা খুব ভালো পরিবেশ থেকেই উঠে এসেছে।
ভালো লাগা আর বিস্ময় মেশানো নয়ন এবং মুগ্ধতার মিশেলে সে তাকিয়ে আছে। এতটাই মোহগ্রস্ত হয়ে সে তাকিয়ে আছে, তার পরের ক্লাসের সময়টাও যে অতি সন্তর্পণে চলে যাচ্ছে। সে খেয়ালটা পর্যন্ত তার নেই।
অনেক্ষণ থেকেই রিক্সাওয়ালা বেশ বিরক্তবোধ করছে। এরপর আর সহ্য করতে না পেরে তাকে তাগাদা দিল। তাতে হঠাৎ-ই যেন আয়াতের গভীর অভিনিবেশে ছেদ পড়ল। আর সাথে সাথেই পাগলিটি খাওয়া থামিয়ে দিয়ে আয়াতের দিকে অগ্নিঝড়া দৃষ্টিতে তাকালো। অজানা আশঙ্কায় আয়াতের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
তিনি খাবার ছেড়ে আক্রমণাত্মকভাবে আয়াতের দিকে তেড়ে আসতেই, সে ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। আর মামাকে খুব জোরে টানতে বলেই সে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। রিক্সাওয়ালা মনে মনে খুব খুশি হলেও সেটা তার ভাবে প্রকাশ করলো না।
আয়াতের হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে। সে প্রচুর ঘামছে। নিকাব নাকের সাথে লেপ্টে গিয়েছে। নিঃশ্বাস নিতে অস্বস্তি হচ্ছে। তাই সে ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে নিকাবের ভিতরেই নাক মুখ মুছে নিল। এরপর বোতল থেকে ঢকঢক করে পানি পান করলো।
writer: মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া