একটা কাক পাগলিটির পায়ের উপর বসতেই সে মৃদু পা নাড়ালো। তাতেই আয়াতের ভুল ভেঙ্গে গেল। সে তার খুশির ভাব ঠোঁটের কোণে তুলে ধরলো। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, পথচারীরা এই ফুটপাত দিয়ে হাটলেও পাগলির থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। কেউ তাকে মাড়িয়ে বা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে না। তার সামনে আসতেই ফুটপাত থেকে নেমে ঐটুকুন জায়গা রাস্তা দিয়ে হেঁটে আবার ফুটপাতে উঠে। আয়াতের মনে হলো এরাও বুঝি তার মতো এই পাগলিকে ভয় পায়।
বেশ কিছুক্ষণ এভাবে পাগলিটাকে নিয়ে অভিনিবেশ সহকারে দর্শন করে সে বাসায় ফিরলো।
.
এরপর থেকে আয়াত প্রতিদিন কলেজ যাওয়া আসার পথে পাগলিটিকে দেখতো। তাকে সে ভয় পাওয়ার দরুন বিপরীত দিকের ফুটপাত দিয়ে হাঁটতো। আবার কখনও কখনও তার থেকে কয়েক পা দূরে থাকতেই রাস্তা পার হয়ে চলে যেত।
প্রতিদিন কলেজ যাওয়ায় একসময় তার কিছু বান্ধুবিও জুটলো। সে আরও বেশি খুশি হলো। কারণ এখন আর তার একা একা হাঁটতে হবে না, বান্ধুবিদের সাথে গল্প করতে করতে বাসায় ফিরে যেতে পারবে।
গল্প মেতে থাকলেও সে পাগলিটাকে এক নজর দেখার কথা কখনই ভুলতো না। তার জায়গা পরিবর্তন, শুয়ে বা বসে থাকার ভঙ্গি, খাবারসহ তার কার্যকলাপ সবকিছুই আয়াতের তীক্ষ্ণ নজরে বন্দি হতো। কোনো একদিন তাকে না দেখতে পেলে মনটাও খারাপ হয়ে যেত।
সেই মহিলাকে নিয়ে তার যে এত কৌতূহল, সেটা তার বান্ধুবিরা ঘূর্ণাক্ষরেও টের পায়নি কোনোদিন। সে নিজে থেকেও বলেনি।
দিনকে দিন এই মহিলার প্রতি আয়াতের কৌতূহল বেড়েই চললো। তার একমাত্র কারণ হলো, ওনার খাবার। আর দ্বিতীয় কারণটি হলো শীতের সময় তার থাকার জায়গায় মোটা লেপ এবং তার শরীরে উষ্ণ কাপড় দেখে।
[৩]
সেবার শীতে, আয়াত কেঁপে কেঁপে কলেজে যাচ্ছিলো। কুয়াশা ঘেরা নিখিলে সূর্যের টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না। রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানগুলোর উনুনের উপর ধোঁয়া উঠা চায়ের লিকার হালকা আঁচে থকবক করে উঠছে। আর তার পাশেই লোকজনের ভিড়। তারা চা এর কাপ হাতে নিয়ে খোশগল্পে মেতে আছে এবং থেমে থেমে একটু করে চায়ে চুমুক দিচ্ছে।
writer: মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া