সব যোগ্যতা থাকার পরও নিজেদের জমি না থাকায় পুলিশের কনস্টেবলের চাকরি থেকে বাদ পড়তে বসেছিলেন আসপিয়া ইসলাম। বিষয়টি সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেই চাকরি পাওয়ার পাশাপাশি এবার মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো তাঁর।‘ভূমিহীন’ আসপিয়ার পরিবারকে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বুঝিয়ে দেওয়া হলো সরকারপ্রধানের উপহারের জমিসহ ঘর। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে উপহার হিসেবে বরিশালের হিজলা উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামে আসপিয়ার মা ঝর্ণা বেগমের হাতে তুলে দেওয়া হয় বাড়ির দলিল ও চাবি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) গৌতম বাড়ৈ, হিজলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন ঢালী, হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজসহ উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা।পুলিশে মেয়ের চাকরি পাওয়ার পর সরকারিভাবে ঘর ও জমি পেয়ে আনন্দিত আসপিয়ার পরিবারের সবাই। প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসন ও গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাঁরা।জমিসহ ঘরের দলিল ও চাবি পেয়ে আসপিয়ার মা ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয়েও যখন জানতে পারলাম, জমি-ঘর না থাকায় চাকরিটা হবে না, তখন চারদিকে অন্ধকার দেখছিলাম। মনে হয়েছিল, পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মা আমি, সন্তানের জন্য কিছু করতে পারছি না। এখন বুঝতে পারছি, আসলে সবাই আমাদের পাশে আছেন। এখন মেয়ের চাকরিটাও হয়ে গেছে, মাথা গোঁজার ঠাঁইও হলো। আর কোনো দুঃখ নেই।’
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে গত ২৮ ডিসেম্বর পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন আসপিয়া। বর্তমানে সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তিনি।বরিশালের সরকারি হিজলা কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করা আসপিয়া উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের এক ব্যক্তির জমিতে পরিবারের সঙ্গে আশ্রিত হিসেবে বসবাস করতেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবলের শূন্য পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে তিনি অনলাইনে আবেদন করেন।এরপর শারীরিক যোগ্যতা, লিখিত-মৌখিক পরীক্ষাসহ প্রতিটি ধাপেই উত্তীর্ণ হন আসপিয়া। এরপর চূড়ান্ত নিয়োগের আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তাঁর পরিবারকে ভূমিহীন উল্লেখ করা হয়। নিয়োগবিধি অনুযায়ী ভূমিহীন হওয়ায় আসপিয়ার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
বরিশালের হিজলা উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত সফিকুল ইসলামের মেয়ে আসপিয়া ও তাঁর পরিবার ১৫ বছর ধরে ভাড়া বাড়িতে থাকত। বাবা না থাকায় বড় ভাইয়ের চাকরির সীমিত আয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে তাঁদের সংসার চলত। তাঁর বড় ভাই ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।বাড়ি ও জমি না থাকায় পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার সব ধাপে উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাচ্ছেন না, এমন খবর জানতে পেরে হতাশ আসপিয়া গত ৮ ডিসেম্বর বরিশাল নগরীর কাশিপুর এলাকায় রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে এবং পরে জেলা পুলিশ লাইনসের সামনে দিনভর মলিন মুখে বসে ধরনা দেন। পুলিশ লাইনসের সামনে বসা তাঁর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর গত ১০ ডিসেম্বর বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার আসপিয়ার পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আসপিয়ার পরিবারকে জমিসহ ঘর দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আসপিয়ার পরিবারকে জমিসহ ঘর বরাদ্দ দেওয়া হলো।