সরকার নির্ধারিত ভাড়া তো ৬৫০ টাকা। ৩৫০ টাকা বাড়তি কেন? এ প্রশ্নে কাউন্টারে থাকা শাহাজাহন নামের ব্যক্তি বললেন, বাড়তি কেন এর কোনো জবাব আছে নাকি? সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে শাহজাহানের পরিচয় জানতে চাইলে জানান, তিনি রূপা পরিবহনের কেউ নন। এমনিই কাউন্টারে বসে আছেন। এমনি এমনি কেন কাউন্টারে বসে আছেন? প্রশ্নে তার উত্তর, আড্ডা দিচ্ছেন। ভাড়া কত? আবারও প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ওইটাই, এক হাজার। আর টু সিটে এক হাজার ৩০০।
আতিকুল আলম নামে এক যাত্রী জানালেন, তারা মিরপুরে ওয়ার্কশপে কাজ করেন। ছয়জন মিলে একসঙ্গে বাড়ি যাচ্ছেন খরচ কম হবে বলে। কিন্তু কাউন্টারে গাইবান্ধার ভাড়া এক হাজার টাকাই চাইল। আয়ের সঙ্গে পোষায় না বলে বড় কোম্পানির বাসের টিকিট আগে কেনেননি। এখন আর সিট পাচ্ছেন না। আগে যেসব ডেকে ডেকে তুলত, তারা এখন হাজার টাকা চাইছে। ৪০০-৫০০ টাকার বেশি দেওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। কাউন্টারের বাস না পেলে কষ্ট হলেও কম ভাড়ায় লোকালে যাবেন।
ঢাকা-গাইবান্ধা রুটে ৪০ আসনের বাসে ভাড়া ৬৫০ টাকা। নামিদামি কোম্পানির বাসের টিকিট আগেই ফুরিয়েছে। এতদিন অখ্যাত যেসব পরিবহনের বাস কম ভাড়া নিত, তারা এই সুযোগে বাড়তি আদায় করছে। শুক্রবার দুপুরে গাবতলী টার্মিনালে রূপা পরিবহনের কাউন্টারে থাকা ব্যক্তি জানালেন, ঢাকা-গাইবান্ধার ভাড়া এক হাজার টাকা।
ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ ভাড়া ৭৫৫ টাকা। গাবতলীর ম্যাপ ট্রাভেলসের কাউন্টটারের কর্মী দাবি করলেন, ৯৫০ টাকা ভাড়া পড়বে জনপ্রতি। ২০০ টাকা বাড়তি কেন? এ প্রশ্নে তিনি বললেন, কোথাও কোনো টিকিট নেই, গেলে এই ভাড়াতেই যেতে হবে। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনিও ভোল পাল্টালেন। নিজের নাম বলতেও রাজি হলেন না।
ঢাকা-সাতক্ষীরার সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৮৬৪ টাকা। গাবতলীতে টার্মিনালের কাউন্টারের সামনে ১৪-১৫ কিশোর-তরুণকে বসে থাকতে দেখা যায়। তারা সবাই সাতক্ষীরার শ্যামনগর যাবেন। তাদের একজন মো. রাসেল জানালেন, কেটিএস হানিফ এন্টাপ্রাইজে ভাড়া ৮০০ টাকা। কিন্তু শুক্র ও শনিবারের কোনো টিকিট নেই। কিন্তু যেসব বাসে সিট আছে তারা ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা ভাড়া দাবি করছে।
এসডি পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার জানালেন, সাতক্ষীরা পর্যন্ত ভাড়া ৮৫৪ টাকা। সেখান থেকে শ্যামনগর আরও ৫৪ কিলোমিটার। তার ভাড়া নির্ধারণ করা নেই। এ কারণে ৯০০ টাকা নিচ্ছেন।
গাবতলীর রূপা পরিবহনেরই এক কর্মী পরে জানালেন, সাধারণ সময়ে তারা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা ভাড়া নেন ঢাকা-গাইবান্ধা রুটে। গত বছর ডিজেলের দাম বাড়ার আগে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা নিতেন। যাত্রী পেতেই সাধারণ সময়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নেন। নইলে যাত্রী পাওয়া যায় না। বড় কোম্পানির বাসের টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে যায়। যাত্রীর তুলনায় বাস কম। এই সুযোগে ঈদযাত্রার কয়দিন কিছু বাড়তি ভাড়া নেওয়া হবে।
সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে। গত বছরের নভেম্বরে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর দূরপাল্লার বাসে ভাড়া ২৭ শতাংশ বেড়ে কিলোমিটার এক টাকা ৮০ পয়সা হয়েছে। ৫২ আসন ধরে এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪০ আসনের বাসে কিলেমিটারে ভাড়া দুই টাকা ৩৪ পয়সা। আসন যত কমে ভাড়া তত বাড়ে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে না। তা মালিকরা ঠিক করেন।
কেটিএস হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ম্যানেজার জানান, ঢাকা-খুলনা রুটে এসি বাসে ভাড়া এক হাজার ৮০০ টাকা। আবার এসডি পরিবহনে একই রুটে ভাড়া এক হাজার ৬০০ টাকা। হানিফের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বাস কতটা আরামদায়ক তার ওপর নির্ভর করে ভাড়া।
বাসের ভাড়া সময়ের সঙ্গে আবার উঠানামা করছে। দুপুরে গাবতলী টার্মিনালের সামনে থেকে হাঁকডাক করে পাটুরিয়া ঘাটের যাত্রী তোলা হচ্ছে সেলফি পরিবহনের বাসে। জনপ্রতি দেড়শ! দেড়শ! ডেকে যাত্রী তুলছিলেন চালকের সহকারীরা। যদিও এই রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১৩৭ টাকা। টিকিটের গায়েও তাই লেখা। চালকের সহকারী বিরস বদনে বললেন, যাত্রী কম। কিন্তু বিকেলে টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে দেখা গেল, ভাড়া বেড়ে গেছে। সেলফি পরিবহনে জনপ্রতি ২০০ টাকায় পাটুরিয়া ঘাটের যাত্রী তোলা যাচ্ছে। দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ভাড়া কীভাবে বাড়ল! পরিবহনটির হেলপার বললেন, সন্ধ্যার পর ভিড় হবে। যাত্রী বাড়লে ভাড়াও বাড়ছে।
শুক্রবার সকালে গাবতলী টার্মিনালে ঈদযাত্রা পরিদর্শনে গিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেবে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বেশি কেউ আদায় করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক বিআরটিএ। মালিকরা সহযোগিতা করবে।