গত ০৪ মার্চ ২০২১ তারিখ দিনাজপুর জেলাধীন খানসামা থানার জনৈক মোঃ জাহিদ, পিতা-জালাল উদ্দীন নীলফামারী থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের ন্যায় তিনি তাহার অটোরিক্সাটি নিয়ে বাহির হন। পথিমধ্যে অজ্ঞাত একজন মহিলা এবং দুই জন পুরুষ দিনাজপুর জেলার খানসামা থানাধীন চেহেলগাজী বাজার থেকে নীলফামারী উত্তরা ইপিজেড আসার কথা বলে বিকেল ৩.০০ ঘটিকায় ৪০০ টাকায় অটোরিক্সাটি ভাড়া করে।
পুলিশ সুপার নীলফামারী জনাব মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, বিপিএম.পিপিএম মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক অটোরিক্সা উদ্ধার এবং অজ্ঞান পার্টির সকল সদস্য এবং চোরাই অটোরিক্সা ক্রয়-বিক্রয় চক্রের দলনেতাসহ চোরাই অটোরিক্সা ক্রয়-বিক্রয় কাজের সহায়তাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার নিমিত্তে একটি চৌকশ টিম গঠন করা হয়।
নীলফামারী থানাধীন ইপিজেড মোড় পৌছানোর পরে বাবুর হাট যাওয়ার পথে সন্ধ্যা আনুমান ৭.০০ টায় অজ্ঞাত আরো দুইজন তাহার অটোরিক্সায় উঠে বাবুর হাটে একটি ফুসকার দোকানে পৌছাঁলে যাত্রীদের সাথে অটোরিক্সা চালকও ফুসকা খায়। খাওয়া শেষে কিছুদূর যাওয়ার পরে অটো চালক অজ্ঞান হয়ে যায়। পরবর্তীতে রাত ১০ টায় জ্ঞান ফিরলে অটো চালক বুঝতে পারে তিনি নীলফামারীর সোনারায় সুইসগেটের পশ্চিম দিকে পাঁকা রাস্তার পাশে পরে আছেন এবং অজ্ঞাতনামা যাত্রীরা তাহাকে কৌশলে ফুসকার সাথে চেতনানাশক ঔষধ খাওয়ানোর ফলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান এবং অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা অটোরিক্সাটি চুরি করে নিয়ে যায়।বাদীর উক্তরুপ অভিযোগের প্রেক্ষিতে নীলফামারী থানার মামলা নং- ০১ তারিখ-০৪/০৩/২০২১ ধারা ৩২৮/৩৭৯ পেনাল কোড রুজু করা হয়।
নীলফামারীতে অজ্ঞান করে অটোরিক্সা ছিনতাইকারীর মূল হোথা,ক্রয়/বিক্রয়ের সহযোগী, অটোরিক্সার মেরামতকারী, অজ্ঞানপার্টির সর্বমোট ০৮ জন সদস্যকে গ্রেফতারসহ করে ০৩ টি চোরাই অটোরিক্সা এবং তিনটি চোরাই অটোরিক্সার খোলা যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়েছে।
বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে মামলার তদন্তকার্য শুরু করা হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে জানা যায় আসামী মীরআলম, রেজিনুর, রিনা বেগম(ছদ্মনাম) ৪০০/- টাকায় অটোরিক্সা ভাড়া করে অটো ড্রাইভারদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে এবং বর্নিত রিনা খাবারের সাথে চেতনানাশক ঔষধ খাওয়ায়। পরবর্তীতে অটোচালক অজ্ঞান হয়ে পরলে তাহাকে রাস্তার পার্শ্বে ফেলে রেখে অটোরিক্সা নিয়ে চলে যায় এবং ক্রয়বিক্রয় কারী চক্রের সদস্য হামিদুল কালু ও আসামী জাফরের মাধ্যমে অটো গ্যারেজ মালিকের নিকট ৫০,০০০/- টাকায় বিক্রয় করে। গ্যারেজের মালিক তাহার কর্মচারী সাইফুল ও আমিরের মাধ্যমে গোপনে অটোরিক্সার রংসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করে একই চক্রের সদস্য নুর ইসলাম ও মোশাররফের মাধ্যমে বিক্রয় করে।
মামলা তদন্তকালে প্রাপ্ত গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নীলফামারী সার্কেল জনাব এ এস এম মুক্তারুজ্জামান মহোদয়ের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে ইজিবাইক চুরির সাথে সরাসরি জড়িত আসামী ০১। মীর আলম আলম(৪২), পিতা-মৃত শামসুল হুদা কে তার নিজ বাড়ী হইতে গ্রেফতার করিয়া জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সহযোগী ০২। মো: রেজিনুর রেজু(৪৫), পিতা-মো:মোসলেম উদ্দিন, সাং-বড়সংগলশী খামাতপাড়া, থানা ও জেলা-নীলফামারীকে কাজীরহাট হইতে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তাহারা জানায় উক্ত চোরাই ইজিবাইক আসামী হামিদুল ইসলাম ওরফে কালটিয়া এর নিকট বিক্রয় করে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে কচুকাটা নিজ বাড়ী হইতে আসামী হামিদুল ইসলাম ওরফে কালটিয়া কে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেবীগঞ্জ এর কালীগঞ্জ বাজারে আসামী ছুকুমুদ্দিন এর গ্যারেজ হইতে চোরাই ইজিবাইকটি উদ্ধার করা হয়।
উক্ত ছুকুমুদ্দিন এর গ্যারেজ হইতে ০৩টি চোরাই ইজিবাইকের খোলা যন্ত্রাংশ ও বডির অংশ উদ্ধার করা হয়। সে সময় হামিদুল ইসলাম ওরফে কালটিয়া এর সহযোগী আসামী জাফর, সাইফুল ইসলাম, মোশারফ হোসেন, আমির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। চোরাই ইজিবাইক ক্রেতা ছুকুমুদ্দিন আত্মগোপন করে। ছুকুমুদ্দিন এর সহযোগী সাইফুল ইসলাম ও আমির হোসেন এর তথ্যমতে আরও একটি চোরাই ইজিবাইক দেবীগঞ্জ থানা এলাকা হইতে উদ্ধার করা হয় এবং তাদের তথ্যের ভিত্তিতে নীলফামারী থানার টেক্সটাইল এলাকা হইতে আরও একটি চোরাই ইজিবাইক সহ মোঃ নুর ইসলাম নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার সহিত জড়িত আসামীদের নাম ও বর্নিত মামলার অটোরিক্সাসহ সর্বমোট ০৩(তিন)টি অটোরিক্সা এবং ০৩ টি চোরাই অটোরিক্সার বডিসহ খোলা যন্ত্রাংশ উদ্ধার সহ একই চক্রের সর্বমোট ০৮ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামী ০১। মীর আলম(৪২), পিতা-মৃত শামসুল হুদা সাং-বড়সংগলশী এর নেতৃত্বে গ্রেফতারকৃত আসামী ০২। মো:রেজিনুর রেজু(৪৫), পিতা-মো:মোসলেম উদ্দিন, সাং-বড়সংগলশী খামাতপাড়া ০৩। হামিদুল ইসলাম কালু(৩২), পিতা-জালাল উদ্দিন, সাং- দোনদুরি সর্দারপাড়া,ইউপি-কচুকাটা ০৪।মোঃ জাফর(৩৫), পিতা-মৃত আমিনুল হক, সাং-ডাকবালো সার্কিট হাউজপাড়া, পৌরসভা ৮ নং ওয়ার্ড, ০৫। মোঃ নুর ইসলাম (২২), পিতা-মোঃ আমির আলী, সাং-দারোয়ানী মোল্লাপাড়া, সকলের থানা ও জেলা-নীলফামারী ০৬। মোঃ মোশারফ হোসেন(৩৫), পিতা-মৃত হবিবর রহমান, সাং-রাজারহাট দন্ডপাল ইউপি, ০৭। মোঃ আমির হোসেন(২৪), পিতা-মোঃ রুস্তম আলী, স্থায়ী সাং-বিনয়পুর সেনপাড়া ৫নং ওয়ার্ড দন্ডপাল ইউপি, বর্তমান-সাং-কালীগঞ্জ ঢাকাইয়াপাড়া,০৮। মোঃ সাইফুল ইসলাম(২২), পিতা-মোঃ কমল মিয়া, সাং-মারায়া কমলাপুর কালীগঞ্জ বাজার, দন্ডপাল ইউপি, সকলের থানা-দেবীগঞ্জ, জেলা-পঞ্চগড়গনকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার ঘটনা সংক্রান্তে বিস্তারিত উল্লেখ করে আসামী হামিদুল ইসলাম কালু বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। মামলার তদন্তকার্যক্রম সহ মামলার ঘটনার সহিত জড়িত অন্যান্য আসামী গ্রেফতারের লক্ষে অভিযান অব্যাহত আছে।