গরমে সুস্থ থাকার জন্য করণীয় ও বর্জনীয়. সহজ টিপস নিয়ে জানুন কিভাবে গরমে সুস্থ থাকার জন্য করণীয় ও বর্জনীয় মেনে রেখে শরীর ঠান্ডা ও মন ভালো রাখবেন।
উপযুক্ত পানীয় নির্বাচন
গরমে সুস্থ থাকার জন্য করণীয় ও বর্জনীয় তালিকায় প্রথমেই আসে নির্বাচিত পানীয়। গরমকালে শরীর থেকে অত্যধিক ঘাম ঝরতে থাকে, ফলে শরীরের পানিশূন্যতা তৈরি হয়। এই সময়ে শুধুমাত্র ঠান্ডা পানীয়ই নয়, এমন পানীয় বেছে নিতে হবে যা শরীরের খনিজ পদার্থের ঘাটতি পূরণ করে এবং এনার্জি সরবরাহ করে। অতিরিক্ত চিনি কিংবা কৃত্রিম রংযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন। বরং কুসুমাল বা লেবুর রস মিশ্রিত ঠান্ডা পানি, নারকেল জল বা স্পোর্টস ড্রিঙ্ক বেছে নিলে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় থাকবে।
| পানীয় | গুণ |
|---|---|
| নারকেল জল | ইলেক্ট্রোলাইট সাপোর্ট, স্বাভাবিক সোডিয়াম ও পটাসিয়াম |
| লেবুর পানি | ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট |
| কুসুমাল | ডিটক্সিফিকেশন, মৃদু ঠান্ডা প্রভাব |
| স্পোর্টস ড্রিঙ্ক | ইলেক্ট্রোলাইট রিইনট্রেশন, এনার্জি বूस্ট |
পর্যাপ্ত জল সেবন
দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সেবনের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। গরমের সময় শরীর থেকে দ্রুত পানি হারানো হয়, যা ক্লান্তি, মাথা ধরা, কার্ডিওভাসকুলার স্ট্রেস বৃদ্ধি এবং ত্বকের ডিহাইড্রেশনের কারণ হয়। পর্যায়ক্রমে পানি পান করুন, বিশেষ করে সকালের শুরুতে, খাবারের মধ্যেও এবং শরীরচর্চার পরে।
-
সকালে ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথে ১–২ গ্লাস পানি
-
প্রতিদিন ৮–১০ গ্লাস সাধারণ পানি
-
যদি শরীরচর্চা করেন, অতিরিক্ত ২–৩ গ্লাস পানির সেবন
-
চা-কফি-সodasের বদলে জল অথবা কুসুমাল
হালকা পোশাক পরিধান
গরমে শরীর স্বাভাবিক তাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হালকা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসযোগ্য পোশাক অপরিহার্য। ঘন কাপড় বা রেশম জাতীয় ফ্যাব্রিক গরমে শরীরের আর্দ্রতা আটকে রাখে, যা অতিরিক্ত ঘামের সৃষ্টি করে। তুলো, লিনেন বা কটন সুতির দেওয়ালে বায়ু সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং ত্বকের আদ্রতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর ফলে ত্বকের সংক্রমণ, ব্রণ বা ফোলাভাবের ঝুঁকি কমে যায়।
| কাপড়ের ধরণ | উপকারিতা |
|---|---|
| কটন | শুষ্কতা, শীতল অনুভূতি এবং বায়ু চলাচল |
| লিনেন | অত্যন্ত হালকা, দ্রুত শুষে নেয় ঘাম |
| বাম্বু ফাইবার | এন্টি-মাইক্রোবিয়াল, ভালো শোষণ |
| হালকা পালেস্টার মিশ্রণ | দ্রুত শুকানো, আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ |
সানস্ক্রিন ব্যবহার
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের বার্ন, বার্ধক্য এবং হারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনি এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা SPF ৩০ বা তার বেশি সানস্ক্রিন বারবার প্রয়োগের পরামর্শ দেন। সকাল সকাল এবং বাইরে গিয়েই প্রথমবার সানস্ক্রিন লাগান। অতিরিক্ত ঘাম বা জলবিন্দুয় পড়লে প্রতি দুই ঘন্টায় পুনরায় প্রয়োগ করুন।
-
প্রতিদিন SPF ৩০ এর বেশি ব্যবহার করুন
-
৫০০ গ্রাম আগে এবং বাইরে যাওয়ার ১৫ মিনিট আগে লাগান
-
নাক, কপাল, কানের পেছন এবং হাতের পালের দিকে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োগ
-
জলে ভিজে গেলে অতিরিক্ত সানস্ক্রিন প্রয়োগ
“গরমে সুস্থ থাকার জন্য করণীয় ও বর্জনীয় সঠিক অভ্যাস মেনে চলাই দীর্ঘদিন টেকসই ফল নিয়ে আসে।” Scarlett Homenick
ঘরের তাপ নিয়ন্ত্রণ
গরমকালে ঘরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা গেলে শরীরের অতিরিক্ত ক্লান্তি কমে এবং ঘুমের মান উন্নত হয়। ঘরে ভেন্টিলেশন নিশ্চিত করা, বারান্দায় ঝাপসা পর্দা বসানো, ফ্যান বা এসি ব্যবহারে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা জরুরি। অত্যাধিক ঠান্ডা এসি বা ফ্যান সরাসরি শরীরে বায়ু দিলে পেশীর ব্যথা বা সাইনাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে।
| স্যাজেশন | কার্যকারিতা |
|---|---|
| পারদর্শী পর্দা | সূর্য রশ্মি কমায় |
| ক্রস ভেন্টিলেশন | ঘরের বাতাস তরল করে |
| ফ্যান স্পিড কমানো | নরম বায়ু সংরক্ষণ |
| এসি থার্মোস্ট্যাট ২৪°-২৬°C | স্বাস্থ্যকর তাপমাত্রা |
পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস
গরমের সময় ভারী, তেলযুক্ত বা তীব্র মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করে হালকা, সহজ হজমযোগ্য ও তরলধর্মী খাবার বেছে নিন। সালাদ, ফ্রুট চাট, স্প্রাউটস বা দই জাতীয় খাবার শরীর ঠান্ডা রাখে। সাথে ভিটামিন, মিনারেলস ও ফাইবার সরবরাহ করে যা গরমে ডিহাইড্রেশন ও লু মারার ঝুঁকি কম করে।
-
তাজা শাকসবজি ও ফলমূল যুক্ত সালাদ
-
দই বা বাটারমিল্ক
-
স্প্রাউটস ও বিনসিক্স
-
জিরা বা তুলসী পাতা খাওয়ায় শরীর ঠান্ডা থাকবে
শরীরচর্চা সীমাবদ্ধ করা
গরমের সময় অত্যধিক শারীরিক পরিশ্রম শরীরের অতিরিক্ত তাপ তৈরি করে। ফলে ক্লান্তি, ঘাম, স্নায়ুবিক পীড়া ও কখনো কখনো হিট ইসট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই বিকেল বা দুপুরের সময়ের বদলে ভোরবেলা বা সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের পর শরীরচর্চা করুন। পর্যাপ্ত জল সেবন ও হালকা ওয়ার্মআপ-কলডাউন রুটিন মেনে চলুন।
| ব্যায়াম টাইম | কার্যকরী কারণ |
|---|---|
| ভোরবেলা (৬–৮টা) | প্রাকৃতিক ঠান্ডা, অল্প তাপমাত্রা |
| সন্ধ্যায় (৬–৮টা) | সূর্যাস্তের পর বাতাস শীতল |
| বেশি পরিশ্রমী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন | শরীরিক চাপ কমানো |
| ওয়ার্মআপ-স্ট্রেচিং | পেশী ঝাঁপসা প্রতিরোধ |
ঠান্ডা স্থান নির্বাচন
গরমের দিনে বাইরে বেরোলেই গায়ে লেগে যায় অত্যধিক তাপ। তাই ছায়াযুক্ত স্থান, পার্ক কিংবা এয়ারকন্ডিশন্ড রুম বেছে নিন। বাসে, ট্রেনে কিংবা বাইকে যাত্রার সময় ইয়েলো বা কালো রংয়ের পোশাক পরিহার করে হালকা রংয়ের পোশাক পরুন। ছাতা কিংবা হেডগিয়ার ব্যবহার করুন।
-
গাছতলা বা ছায়াযুক্ত রাস্তা বেছে নিন
-
এয়ারকন্ডিশন বা ফ্যান ব্লোকার নিচে বসুন
-
সবুজ বাগান, পার্কের ভিজিবিলিটি বাড়ায় শীতলতা
-
ছাতা, ক্যাপ বা স্কার্ফ ব্যবহার
ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে সতর্কতা
গরমে যখন এসি, ফ্যান বা পোর্টেবল কুলার ব্যবহার করেন, তখন ডিভাইসের নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন। ফোরসিংলি বায়ু সরাসরি শরীরে লাগালে শিরদাঁড়া ব্যথা, সাইনাস, ফ্লু-এর ঝুঁকি বাড়ে। মেঝে বা কার্পেটে দীর্ঘ সময়ে বসা অবস্থায় ল্যাপটপ রাখা তাপমাত্রা বাড়ায় এবং ডিভাইসের পারফরম্যান্স ক্ষতিগ্রস্থ করে।
| উপকরণ | সতর্কতা |
|---|---|
| ল্যাপটপ | সারফেসে রাখুন, ল্যাপটপ স্ট্যান্ড ব্যবহার |
| মোবাইল ফোন | চার্জিং রুমে রাখবেন না, হাওয়া সমৃদ্ধ স্থান |
| এসি ফ্যান | ২০-৩০ সেকেন্ড চালু করে বিরতি |
| পোর্টেবল কুলার | পর্যাপ্ত পানি মজুদ এবং ক্লিন করুন |
ঘুমের প্যাটার্ন বজায় রাখা
গরমে ঘুমের ব্যাঘাত পায়, শরীরের স্বাভাবিক রিভাইভ্যাল প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। তাই ঘুমের আগে এসির তাপমাত্রা ২৪°-২৫°C এ রাখুন, পাতলা কোটনসেট শীট ব্যবহার করুন এবং ঘরে অন্তত একবার ক্রস ভেন্টিলেশন দিন। ঘুমের রুটিন মেনে চললে শরীর ঠিকমতো রিকভার হবে।
-
ঘুমানোর ১ ঘন্টা আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস বন্ধ
-
ঠান্ডা শাওয়ার নিয়ে শোওয়া
-
কাটন শীট আর মুখ ঢাকুনো তাও এড়িয়ে চলুন
-
ঘুমের সময় এসির আউটলেট শরীরের দিকে সরাসরি না রাখা
স্ট্রেস পরিচালনা
গরমে অতিরিক্ত স্ট্রেস হিট ইসট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ধ্যান, প্রণায়াম বা হালকা যোগাভ্যাস গ্রহণ করলে মেন্টাল চাপ কমে। আবার ঘরের বাতাসে নিমবুটের কয়েক ফোঁটা ইন্সেন্স করে রাখা যায়। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, হালকা মিউজিক শুনতে উপকরণ ব্যবস্থা করুন। অতিরিক্ত কাজের চাপ কিংবা ডেডলাইন এড়িয়ে প্রয়োজনীয় বিরতি নিন।
| পদ্ধতি | ফলে |
|---|---|
| মেডিটেশন | মানসিক শান্তি, ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণ |
| প্রণায়াম | শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ, অক্সিজেন সাপোর্ট |
| হালকা যোগ | মাসল রিল্যাক্সেশন |
| মিউজিক থেরাপি | মাইন্ড রিফ্রেশ |
আর্দ্রতা বজায় রাখা
শুষ্ক গরমে আর্দ্রতা বৃদ্ধি করা ভালো, কারণ খুবই শুষ্ক পরিবেশে শুষ্ক ত্বক, গলা ব্যথা এবং চোখের পর্দা খসার সমস্যা দেখা দেয়। রুমে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন, অথবা বালতি বা প্লাস্টিকের পাত্রে পানি রেখে ঘরের ভেজা হাওয়া তৈরি করুন। এই আর্দ্রতা তাপমাত্রা সামান্যই বাড়ায় কিন্তু শরীরের জন্য হাইড্রেশন উৎস হিসেবে কাজ করে।
-
হিউমিডিফায়ার নিয়মিত জল পূরণ
-
পাত্রে পানি রেখে ফ্যান সামনে রাখুন
-
ঘরের ভিড় কমিয়ে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের গুণগত মান উন্নত
-
ইনডোর প্ল্যান্টস চালু রাখুন
পর্যাপ্ত জলপান নিশ্চিত করা
গ্রীষ্মকালে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বেরিয়ে যায় এবং বিভিন্ন সময় পানি শূন্যতার শিকার হতে হয়। গরমে সুস্থ থাকার জন্য করণীয় ও বর্জনীয় মূল বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নিয়মিত জলপান করা। প্রতিদিন বিভিন্ন সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়া উচিত। পানি ছাড়াও নারকেল জল, লেবুর ফ্রেশ জুস ও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে তৈরি পানীয় শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে শীতল রাখতে সাহায্য করে। এমন পানীয় গুলিতে থাকা ইলেকট্রোলাইট শরীরের পানি-সাল্ট ব্যালান্স ঠিক রাখতে সহায়তা করে। দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস পানি খাওয়া স্বাস্থ্যকর। যদি প্রচুর পরিশ্রম করে ঘাম বেশি হয়, তাহলে প্রয়োজন অনুযায়ী অতিরিক্ত জলপান করতে ভুলবেন না।
জলপানের সুবিধা
- শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
- ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে
- ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
- পাচনক্রিয়া সুগম করে
হালকা এবং শ্বাসপ্রশ্বাসকারী পোশাক পরা
খুব ভারি ও আঁটসাঁট পোশাক গরমকালে শরীরের অতিরিক্ত তাপ আটকে রাখে। হালকা এবং শ্বাসপ্রশ্বাসকারী কটন বা লিনেন পোশাক ব্যবহার করলে শরীরের ঘাম বাষ্পীভূত হতে পারে। এতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আরামদায়ক অনুভূতি তৈরি হয়। আরও ভালো হল উজ্জ্বল রং–সাদা, হালকা নীল, পেস্টেল টোন–যা সূর্যের আলো কম শোষণ করে। শিশুরা ও বৃদ্ধরা বিশেষভাবে অতিরিক্ত তাপ থেকে দুর্বল, তাই তাদের জন্য নরম, হালকা কাপড় বেছে নিন। ঘামের জায়গায় চামড়া ঝরঝরে রাখতে নিয়মিত বস্ত্র পরিবর্তন করুন এবং পরিষ্কার রাখুন।
| পোশাকের ধরন | উপযুক্ত কাপড় |
|---|---|
| টপস | কটন, লিনেন |
| প্যান্ট | লেনিন, হালকা সোয়েটারবিহীন |
| জুতো | স্যান্ডাল, খোলা টাইপ |
ছায়ায় সময় কাটানো
সূর্য তাপের মাত্রা বেশি থাকা অবস্থায় সরাসরি আলোতে কিছুক্ষণ থাকলে শরীরে অতিরিক্ত তাপ জমে গরমে অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। তাই খোলা জায়গায় প্রয়োজনের বেশি সময় কাটানোর চেয়ে গাছ, ছাতা, বারান্দা বা ছাদে ছায়াযুক্ত জায়গায় অবস্থান করুন। নিয়মিত বিরতি নিয়ে ছায়ায় বসুন। এভাবে শরীর ঠান্ডা থাকবে এবং গরমের কারণে মাথা ঘোরানো, অবসাদ, আচমকা অজ্ঞান হওয়া এড়ানো যাবে। ছায়ার নিচে হালকা স্ট্রেচিং করতে পারেন, যা রক্ত চলাচল ভালো রাখবে। বাইরে কাজ করলে প্রতি ঘন্টা অন্তত পাঁচ মিনিট ছায়ায় বিশ্রাম নিন।
ছায়ার সুবিধা
- দেহ ঠাণ্ডা রাখে
- হেডেস ও ডিহাইড্রেশন রোধে সহায়তা করে
- মানসিক চাপ কমায়
- শরীরে নতুন শক্তি জাগ্রত করে
ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও ভেন্টিলেশন
রুম টেম্পারেচার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ঘরে পর্যাপ্ত হাওয়ার প্রবাহ থাকতে হবে। ঘরের মধ্যে ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহারের আগে জানালা এবং দরজা খোলা রেখে একটু বাতাস প্রবেশ করুন। পর্যায়ক্রমে ফ্যানের গতি বাড়িয়ে বা কমিয়ে তাপমাত্রা সামঞ্জস্য করুন। ঘুমানোর সময় একটি হালকা স্মার্ট ফ্যান ব্যবহার করে অতিরিক্ত গরম কমানো যেতে পারে। বিদ্যুৎবিল বেশি হলেও জেনারেটর বা ব্যাকআপ ইনভার্টারের মাধ্যমে নিয়মিত কুলিং চালিয়ে রাখতে সম্প্রতি আমি অভিজ্ঞ হয়েছি যে সময় মতো ভেন্টিলেশন করলে ঘরে পরিবেশ অনেক ভালো থাকে।
| কুলিং ডিভাইস | পদ্ধতি |
|---|---|
| স্ট্যান্ড ফ্যান | উচ্চ-লো গতি পরিবর্তন |
| অয়েল ফ্রী কুলার | নিয়মিত পানি ভরাই |
| এসি | ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সেট করা |
হালকা ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
গরমকালে ভারি, তেলমশলায় ভরা খাবার পেটে ভরাট অবস্থায় রাখে এবং হজম শক্তি বাড়িয়ে শরীরকে ক্লান্ত করে। তাই স্যালাড, ড্রায় ফ্রুটস, দই, স্প্রাউটস, ওটস বা ডিমের হালকা ফ্রিটাটা ইত্যাদি খাবার বেছে নিন। হালকা খাবার খেলে শরীরে অতিরিক্ত তাপ তৈরি হয় না এবং পেটও আরাম পায়। প্রোটিন ও ফাইবার খাওয়ার জন্য গ্রিলড চিকেন পিস, বয়েলড মটরশুটি বা হালকা ফুটানো লিনটিল স্যুপ উপকারী। একদম খালি পেটেও লেবু, আমলকি বা ইলিশের শরবত দেহে ভিটামিন সি সরবরাহ করে।
খাদ্য তালিকা
- গ্রিন স্যালাড
- দই-মধু মিশ্রণ
- ডিম স্যান্ডউইচ
- স্প্রাউট চাট
ঠান্ডা পানীয়ের সঠিক ব্যবহার
খুব ঠান্ডা আইসড পানীয় বা সোডা শরীরকে সাময়িকভাবে শীতল করে, কিন্তু পরবর্তীতে গরম অনুভূতি বৃদ্ধি করতে পারে। বরং ঘরের তাপমাত্রার কাছাকাছি ঠান্ডা পানি, লেবু-গুড় বা আমলকীর শরবত বেশি কার্যকর। পানীয় তৈরিতে বিট, শসা, আদা ও পুদিনা পাতার সংমিশ্রণ শরীরকে কুলডাউন করতে সহায়তা করে। নির্যাসযুক্ত পানীয়গুলিতে চিনি কম রাখুন এবং ধরনের ভিন্নতা আনুন যাতে আগ্রাসী ঠান্ডা পানীয়ের ফলে পেট খারাপ না করে।
| পানীয় | উপাদান |
|---|---|
| লেবুর শরবত | লেবু, গুড়, নুন |
| পুদিনা লাসি | দই, পুদিনা, লবণ |
| শসার জুস | শসা, আদা, লবণ |
অতিরিক্ত চিনি ও মশলার ক্ষতিকর প্রভাব
চারপাশে মিষ্টি আইসক্রিম, ঠান্ডা কফি ও বেভারেজের চাহিদা বেশি। অতিরিক্ত চিনি শরীরে অম্লতা বাড়ায়, হজমে বাধা সৃষ্টি করে এবং উত্তাপে অস্বস্তি বৃদ্ধি করে। প্রচণ্ড গরমে মসলাযুক্ত খাবার খেলে বদহজম ও গ্যাসজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সহজে হজমযোগ্য, মৃদু মশলার খাবার যেমন সবজির স্যুপ, বয়েলড মুরগির শাপল ইত্যাদি খান। চিনি বা মসলা কমাইলে শরীরে কুল সিস্টেমের ভারসাম্য ঠিক থাকে।
“গরমে সুস্থ থাকার জন্য করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো মেনে চললে দেহ ও মন দুটোই সতেজ থাকে।” – Kathryne Nikolaus
বর্জনীয় খাবার
- সোডা ও প্যাকেটযুক্ত জুস
- ভারি কার্স ও ঝাল দ্রব্য
- মিষ্টি পেস্ট্রি
- গরম ক্যাফেইন ড্রিংক
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম রাখা
গরমে শরীর ক্লান্ত থাকে, তাই কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। দুপুরের সময়ে হালকা শিবির বা ঝুলি মতো নিরিবিলি পরিবেশে ১৫-২০ মিনিটের পাওয়ার নাপ নিন। ম্যালেবি লাইট ব্ল্যাঙ্কেট ব্যবহার করে হালকা আবরণে শুয়ে থাকুন। ঘুমের অনিয়ম দেখলে সকালে বোধহয় ক্লান্তি অনুভব করবেন এবং গরমের বিরতির বার বার দরকার হবে। সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি বজায় রাখতে হবে।
| পার্টিকুলার | সিদ্ধান্তমূলক ব্যবস্থা |
|---|---|
| ঘুমের সময় | সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা এড়িয়ে চলুন |
| পাওয়ার ন্যাপ | ১৫-২০ মিনিট |
| ঘুমের আগে পানীয় | গরম ভেষজ চা |
নিয়মিত ঠান্ডা স্নান করা
দৈনন্দিন ঠান্ডা স্নান গরমের বিরোধী প্রতিরক্ষা। সকালে উঠে বা দুপুরের বিরতিতে জল ঠাণ্ডা করে গোসল করুন। এতে পেশীগুলো আরাম পায় এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা হঠাৎ কমে। ঠান্ডা স্নানে ব্লাড সার্কুলেশন উন্নত হয়, ক্লান্তি কাটে এবং মন প্রাণবন্ত হয়। বঙ্গোৎসবে স্নান করলে শরীরিকা সৌন্দর্য ও সতেজতা বজায় থাকে। তালু ও মণ্ডলের দিকে বেশি করে পানি দিন, কারণ মূল শরীরে একটি দ্রুত স্নিগ্ধতা অনুভূতি তৈরি হয়।
গোসলের উপায়
- লেগার সঙ্গে চুলার পানি মিশিয়ে নিন
- উচ্চতা থেকে পানি ঢালুন
- প্রয়োজনমতো সব অংশে পানিস্পর্শ নিশ্চিত করুন
- গোসল শেষে হালকা ফ্যানের নিচে যান
সতেজ ফলমূলের গুরুত্ব
ফলমূলে প্রাকৃতিক পানি, ভিটামিনস ও মিনারেলস থাকে যা গরমে শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে এবং চেহারাকে উজ্জ্বল রাখে। তরমুজ, কমলা, পেঁপে, আম, স্ট্রবেরি হিউড্রেশন সাপোর্ট করে। এক কাপ তরমুজে প্রায় ৯০% পানি থাকে। সকালে ناشতায় অথবা বিকালের স্ন্যাক হিসেবে ফল খেলে দেহ সতেজ থাকবে। ক্রিম-চাইটে ভর্তি খাবার এর বদলে বরং ফলের সালাদে চটকদার লেবু ও পুদিনা মিশিয়ে খান।
| ফল | ফায়দা |
|---|---|
| তরমুজ | উচ্চ পানি-সমৃদ্ধ |
| কমলা | ভিটামিন সি সাপোর্ট |
| পেঁপে | এন্টিঅক্সিডেন্ট |
ক্যাফেইন ও এলকোহল ব্যবহার সীমিত করা
গরমকালে ক্যাফেইন ও এলকোহল শরীরে ডিহাইড্রেশন ঘটায়। ব্ল্যাক কফি, চা বা বিয়ার শরীর থেকে পানি দ্রুত বেরিয়ে নিয়ে যায়। তাই বিকেলের চাহিদায় হালকা হারবাল টি বা লেবুর শরবত খান। প্রয়োজনে ডিকার্গিনেটেড কফি বেছে নিতে পারেন এবং এলকোহলসম্পন্ন পানীয় অরিজিনাল এর পরিবর্তে খুব কম অ্যালকোহল মাত্রায়। গরমের বিপদ এড়াতে প্রথমেই পানির উৎসাহ দিন শরীরকে।
বিকল্প পানীয়
- হারবাল চা
- ডিকার্গিনেটেড কফি
- জিংজার লেমন
- খরবুজের শরবত
ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখা
শরীর থেকে ঘামের সাথে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনিশিয়াম চলে যায়। নিয়মিত ফলমূল, সিদ্ধ আলু, নারকেল জল, স্পোর্টস ড্রিংক ইত্যাদি পান করে ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রাখা যায়। প্রতি দুই ঘণ্টায় সামান্য লবণ মেশানো পানি পান করুন। যদি ঘাম অনেক হয় তাহলে অতিরিক্ত ইলেকট্রোলাইট সার্প্লাস এড়ানোর জন্য লেবু ও চিনি সামঞ্জস্য করুন। এতে শক্তি থাকে এবং পেশি খিঁচুনি বন্ধ হয়।
| উপাদান | ইলেকট্রোলাইট উৎস |
|---|---|
| নারকেল জল | পটাসিয়াম |
| ব্যানানা | পটাসিয়াম, ম্যাগনিশিয়াম |
| মিষ্টি আলু | কালসিয়াম, পটাসিয়াম |
মানসিক চাপ কমানো
উচ্চ তাপমাত্রা মানসিক চাপে ফেলে। নিয়মিত ধ্যান, গুনগুন গান শোনা বা হালকা গাছে-বনে হাঁটা স্ট্রেস হ্রাসে উপকারী। রাতে ফোন, টিভি কম ব্যবহার করে শরীর ও মনের সঠিক বিশ্রাম দিন। পুদিনা, ল্যাভেন্ডার এর হালকা আর্দ্র সুবাস ঘুম ও মানসিক শান্তি এনে দেয়। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে মিশে হাসিমুখে সময় কাটালে মানসিক শক্তি বাড়বে।
স্ট্রেস রিলিফ পদ্ধতি
- দৈনিক ১০ মিনিট মেডিটেশন
- মাইন্ডফুল সাঁতার
- পড়া-লেখার হালকা কার্যক্রম
- সঙ্গীতের সাথে হাঁটা
সূর্যপ্রদাহের লক্ষণ জানতে
হিটস্ট্রোক, হিটএক্সহসশন বা সানস্ট্রোক দ্রুত চেনা জরুরি। উচ্চ জ্বর, মাথা ঘোরা, বমি, অবচেতনতা, অতিরিক্ত ঘাম এসব লক্ষণ দেখা দিলে বিশেষ যত্ন নিন। তাত্ক্ষণিক ঠান্ডা গোসল করান, লেবু জাতীয় পানীয় সরবরাহ করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গরমজ্বর প্রতিরোধে কেউকে একা রাখবেন না।
| লক্ষণ | প্রতিকার |
|---|---|
| উচ্চ জ্বর | ঠান্ডা কাপড়ের স্পঞ্জিং |
| অজ্ঞানতা | বাইরে হালকা হাওয়া |
| দুর্বলতা | ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক |
হালকা ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং
গরমকালে ভারি ব্যায়াম পেশিকে ক্লান্ত ও বিষন্ন করে, তাই হালকা স্ট্রেচিং ও ইয়োগা করুন। অর্ধেক ঘণ্টা হালকা হাঁটা বা স্লো সাইক্লিং করলে রক্ত চলাচল সচল থাকে। সকালে বা সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আগে হাঁটুন। এতে শরীর ঠিক তাপমাত্রায় থাকে এবং অতিরিক্ত ঘাম হয় না। ব্যায়ামের পূর্বে ও পরে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
ব্যায়াম তালিকা
- নেক স্ট্রেচ
- শোল্ডার রোল
- হাত-পা স্ট্রেচ
- সহজ আসন যোগ
সানস্ক্রিন ও সুরক্ষা
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন। SPF৩০ বা তার উপরে সানস্ক্রিন আদর্শ। দুই ঘণ্টায় একবার রি-অ্যাপ্লাই করতে ভুলবেন না। ছাতা বা ক্যাপ পরলে অতিরিক্ত সুরক্ষা তৈরি হবে। শোরুম বা গাড়িতে থাকার সময় জানালায় UV-প্রতিরোধী ফিল্ম লাগাওতে পারেন।
| প্রডাক্ট | SPF মান |
|---|---|
| লোটন | ৩০+ |
| ক্রীম | ৫০+ |
| স্প্রে | ৪৫+ |
জরুরি প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন
ঝকঝকে রোদে বাইরে গেলে মেডিক্যাল কিট রাখুন যাতে ব্যান্ডএইড, জীবাণুনাশক, ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট ও ছোট মোটেওষম ধানার ব্যবস্থা থাকে। প্রয়োজনে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নম্বর সংরক্ষণ করুন। পরিবারের সবার সাথে গরমে সতর্কতা বিষয়ক নির্দেশাবলী শেয়ার করুন। গরমের জন্য জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স কল করুন এবং আক্রান্তকে ছায়ায় রাখুন।
জরুরি কিট উপাদান
- ব্যান্ডএইড ও গজ
- জীবাণুনাশক ও অ্যালকোহল স্বাঁপ
- ভিটামিন-সি ট্যাবলেট
- ইলেকট্রোলাইট পাউডার
তাপমাত্রার নিরাপদ কর্মপরিবেশ
বহির্গামী কাজের ক্ষেত্রে পক্ষ থেকে হেলমেটের নেট ব্যবহার, উজ্জ্বল রঙের হাই-ভিজিবিলিটি জ্যাকেট, জলে ডুবে নেয়ার যায় এমন বুট ও গ্লাভস পরিধান করুন। মাটিতে কাজ করলে ছাতা বা শেডস্ট্রাকচার ঠিক করুন। প্রতি দুই ঘণ্টায় একবার ঠান্ডা রিফ্রেশমেন্ট ব্রেক নিন। কর্মস্থলে হাইড্রেশন স্টেশন তৈরি করুন যাতে সবাই সহজে পানি পান করতে পারে।
| প্রটেকশন গিয়ার | ব্যবহারের সময় |
|---|---|
| হাই-ভিস জ্যাকেট | বহির্গামী কাজ |
| ভেন্টিলেটেড হেলমেট | কন্সট্রাকশন সাইট |
| ইলেকট্রোলাইট স্টেশন | প্রতি ২ ঘণ্টায় |
আমি ব্যক্তিগতভাবে গত গ্রীষ্মে মাঠে কাজ করার সময় গরমে সুস্থ থাকার জন্য করণীয় ও বর্জনীয় সব টিপস অনুসরণ করেছি। প্রতিদিন সকালে হালকা স্ট্রেচিং করেছি, পর্যাপ্ত পানি ও নারকেল জল পানে শরীর হাইড্রেটেড রেখেছি। কর্মদিবস শেষে ঠান্ডা গোসল করলে ত্বক আরাম পেয়েছে। এ অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিত হয়েছি যে এই নিয়মগুলো মানলে গরমের তাপে স্বাস্থ্য ঠিক রাখা সহজ হয়।
উপসংহার
গরমের মৌসুমে স্বাভাবিক তাল মিলিয়ে চলতে, পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই জরুরি। হালকা ও আরামদায়ক কাপড় পরা, দুপুরের তীব্র রোদ এড়িয়ে ছায়ায় বিশ্রাম নেওয়া সুস্থ থাকার মূল কথা। বাহিরে বেরোয়ার আগে সরঞ্জাম এবং হেডগিয়ার ব্যবহার করলে সুবিধা হবে। জাঙ্ক ফুড এবং অতিরিক্ত মশলাদার খাবার পারিহারে কলা, তাজা শাক-সবজি, ঠান্ডা ফলমূল সহ সুষম খাবার নিয়মিত রাখুন। রাতের ঘুম ঠিক রাখা, সময়মতো বিশ্রাম নেয়া, মাঝখানে ছোট বিরতি গ্রহন করা শরীরকে সতেজ রাখে। গরমে শরীরের সংকেত বুঝে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে বাস্তবিক সুবিধা পাওয়া যায়। স্ট্রेस কমাতে শ্বাস-প্রশ্বাস ও হালকা ব্যায়াম করুন, বিকেলে ঠান্ডা জুস খান। ভাজা খাবার ও চা-কফি এড়িয়ে স্বাস্থ্যের যত্ন নিন।
