সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার কারাদণ্ডের পর দক্ষিণ আফ্রিকার একাংশে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে এখনো পর্যন্ত ৭২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, নিহতদের মধ্যে ১০ জন পদদলিত হয়ে প্রাণ হারায়। সোমবার রাতে সোয়েতোর একটি শপিং সেন্টারে লুটপাটের সময় এ ঘটনা ঘটে।
বিবিসির ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, ডারবানে একটি ভবনের নিচতলার দোকানে লুটপাটের পর তাতে আগুন লেগে গেলে এক নারী নিজের সন্তানকে বাঁচাতে তাকে নিচে ছুড়ে দেন।
গত সপ্তাহে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর পুলিশকে সহায়তা করতে বর্তমানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ জানিয়েছে যে, তারা ১২ সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করেছেন যারা দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছে। এ ছাড়া সব মিলিয়ে ১২শ ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ শেষ হওয়ার আগে ১৯৯০ এর দশকের পর তিনি এ ধরনের জঘন্য সহিংসতা দেখেননি। এতে আগুন দেওয়া হয়েছে, মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বড় বড় শহরের পাশাপাশি ক্বয়াজুলু-নাটাল এবং গাওটেং মতো ছোট ছোট প্রদেশের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং গুদামে লুটপাট চালানো হয়েছে।
মন্ত্রীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, এভাবে লুটপাট চলতে থাকলে ওই সব এলাকায় শিগগিরই প্রধান খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে। কিন্তু তারা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে অসম্মতি জানিয়েছেন।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত দুই শতাধিক শপিং মলে লুটপাট চালানো হয়েছে। দেশটির ব্যবসায়ী নেতা বুসিসিয়ে মাভুসোর বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ।
দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় শহরাঞ্চল সোয়েতোতে বেশ কিছু শপিং সেন্টার পুরোপুরি লুটে নেওয়া হয়েছে। এই শহরটিতেই নেলসন ম্যান্ডেলার বাড়ি ছিল। শহরটির এটিএমগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে, রেস্তোরাঁ, অ্যালকোহল ও কাপড়ের দোকান সবকিছু ভেঙে-চুরে ফেলা হয়েছে।
পুলিশের সঙ্গে মিলে সেনারা কিছু দাঙ্গাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। সব মিলিয়ে ৮০০ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা দাঙ্গাকারীদের তুলনায় এখনো নগণ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার টাইমস লাইভ নিউজ সাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্বয়াজুলু-নাটাল শহরে গবাদিপশুও চুরি করা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সগুলোর ওপরও হামলা চালিয়েছে দাঙ্গাকারীরা।
গত মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের শাসনামলে দুর্নীতির তদন্তে অংশ নিতে না পারায় আদালত অবমাননার দায়ে তাকে দণ্ডিত করা হয়।
৭৯ বছর বয়সী এই নেতা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তাকে ১৫ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে তিনি আত্মসমর্পণ করেন।