শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়. সহজ দৈনন্দিন খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম আর পর্যাপ্ত ঘুমের টিপস দিয়ে জানতে পারবেনশরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়আর সুস্থ থাকুন।

সুষম আহার পরিকল্পনা
সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পূর্ণাঙ্গ পুষ্টি সরবরাহ করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় এর অন্যতম ভিত্তি হলো সুষম আহার। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন অনুযায়ী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সকালের বিভিন্ন শস্য, বাদাম, ডিমের সাদা অংশ এবং শাকসবজি সক্রিয় মেটাবলিজম বজায় রাখে। দুপুরে শস্যের সাথে ডাল, মাছ বা মুরগির মাংস, শাকসবজি ও দই দিয়ে এলাকাভিত্তিক বৈচিত্র্য আনতে হবে। রাতে সহজপাচ্য খাদ্য যেমন হালকা স্যুপ, সালাদ খেলে শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পুনর্গঠন দ্রুত হয়। প্রসেসড ফুড, অতিরিক্ত চিনি ও ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলতে হবে। নিজের খাদ্যাভ্যাস নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত পুষ্টি আনুন। সকালের ঘুমনাশা কাটিয়ে তোলার জন্য প্রচুর ফল এবং পালং শাকের মতো লিপিড-সমৃদ্ধ শাকসবজি ব্যবহার করুন। এর ফলে দেহের প্রাকৃতিক প্রতিরোধী কোষগুলি সক্রিয় থাকে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় অনুসরণ করে আরও সুস্থ জীবনযাপন করা যায়।
| খাদ্যের ধরন | পুষ্টিগুণ |
|---|---|
| গম, চাল, পাস্তা | জটিল কার্বোহাইড্রেট |
| ডাল, মাংস, ডিম | উচ্চমানের প্রোটিন |
| বাদাম, আলিভ অয়েল | স্মার্ট চর্বি |
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার
ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে লেবু, কমলা, স্ট্রবেরি ও কিউই জাতীয় ফল খাওয়া শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হিসেবে সবার কাছে কার্যকর। ভিটামিন সি স্বাস্থ্যকর কলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বক ও রক্তনালীর প্রাচীরকে শক্তিশালী করে। ঠান্ডা-জ্বরের সময় সর্দি-কাশি উপশমে সহায়তা করে। শসা, ব্রকলি ও লাল শিমের মতো সবজি স্যালিডে ব্যবহার করলে স্বাদ ও পুষ্টিমূল্য দুটোই বজায় থাকে। প্রতিদিন অন্তত ৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করলে ইমিউন প্রতিক্রিয়া আরও দ্রুত হয় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা পায়। সেই সঙ্গে প্রকৃতিগত উৎস থেকে ভিটামিন পেলে শোষণ ক্ষমতা বেড়ে যায়। সর্বোপরি, নিয়মিত শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হিসেবে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ দিকনির্দেশিত খাদ্য তালিকা মেনে চলুন।
-
লেবু
-
কমলা
-
স্ট্রবেরি
-
কিউই
-
ব্রকলি
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম
ক্রিয়াশীল জীবনযাপন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় গুলোতে অন্যতম। নিয়মিত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়, যে কারণে শরীরের কোষগুলো যথাযথ পুষ্টি ও অক্সিজেন পায়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা, সাইক্লিং বা দৌড়ের অভ্যাস করলে সংশ্লিষ্ট হরমোনগুলো সঠিক মাত্রায় নিঃসৃত হয়। এর ফলে মানসিক চাপ কমে এবং শরীরের প্রদাহজনক উপাদানগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে। সপ্তাহে তিন দিন ওজন ও রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং করলে মাংসপেশি শক্তিশালী হয়, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক। স্বাধীনভাবে বা গ্রুপে ব্যায়াম করলে সামাজিক যোগাযোগ বাড়ে, মানসিক সুস্থতা লাভ হয় এবং স্বপ্নাতীত ভাবে আপনার ইমিউন সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করে। সক্রিয়তা ধরে রাখতে পর্যাপ্ত জল পান ও পুষ্টিকর খাদ্য সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ বদ্বীপকারকর।
| ব্যায়ামের ধরন | সপ্তাহে সংখ্যা |
|---|---|
| দ্রুত হাঁটা | ৫ দিন |
| হালকা দৌড় | ৩ দিন |
| ওজন প্রশিক্ষণ | ২ দিন |
যথেষ্ট পরিমাণে ঘুম
মানুষের দেহঘড়ি ঠিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। প্রতিরোধযোগ্য অনেক রোগ থেকে সুরক্ষা পেতে রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। ঘুমের সময় দেহ তারুণ্য ফিরে পায়, কোষের মেরামত হয় এবং প্রতিরোধী কোষগুলো আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করে। অনিয়মিত ঘুমে শরীর অতিরিক্ত স্ট্রেস হরমোন তৈরি করে, যা ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। স্থির তাপমাত্রা, অন্ধকার পরিবেশ এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস মেনে চললে ঘুমের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। রাতে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে বই পড়া বা হালকা এইচএমআই প্রোগ্রাম দেখলে মন শান্ত হয়। এভাবে ঘুম মেলে, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় অনুসরণে অপরিহার্য।
-
৭-৮ ঘন্টা ঘুম
-
অন্ধকার পরিবেশ
-
নিয়মিত সময়সূচি
-
ইলেকট্রনিক ডিসিপ্লে বন্ধ
চাপ নিয়ন্ত্রণ কৌশল
মনে অস্বস্তি বা উদ্বেগ থাকলে শরীরে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় বাধাগ্রস্ত করে। নিয়মিত মেডিটেশন, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যায়াম বা ধ্যান-যোগ চর্চা করলে মানসিক চাপ প্রাধান্য হারায়। প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট ভয়েস গাইডেড ব্রিদিং প্র্যাকটিস রাখলে কিংবা প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে হাঁটাহাঁটি করলে মন শান্ত হয় এবং দেহের ইমিউন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক হয়। চাপ মুক্ত মন দেহের মাইক্রোফাইল্টার ফাংশন ঠিক রাখে, সংক্রমণের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার হার বাড়িয়ে তোলে। এভাবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় কে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায় এবং জীবনে দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য জাগ্রত হয়।
| কৌশল | সময় |
|---|---|
| গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস | ১০ মিনিট |
| ধ্যান | ১৫ মিনিট |
| প্রকৃতি-ভ্রমণ | ২০ মিনিট |
পর্যাপ্ত জল পান
শরীরের কোষগুলো সু-স্বাস্থ্য বয়ে আনার জন্য পর্যাপ্ত জল অপরিহার্য। প্রতিদিন কমপক্ষে ২.৫-৩ লিটার জল পান করলে শরীরের টক্সিন দ্রুত বের হয়ে যায় এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হিসেবে কার্যকর হয়। ডিহাইড্রেশন হলে কোষের সংকোচন ঘটে, রক্ত চাপ বেড়ে যায় এবং শরীরে প্রদাহ বাড়ে। জল শরীরে নিউট্রিয়েন্ট পরিবহণ করে, ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া উন্নত করে। অ্যালকোহল, চা ও কফির অতিরিক্ত ব্যবহার নির্দিষ্ট করে পানির পরিমাণ বাড়ান। মাঝে মধ্যে লেবু, শসা বা পুদিনা পাতা দিয়ে ফ্লেভার গুলো মিশিয়ে নিন, যাতে পসন্দের সঙ্গে জল গ্রহণ বেড়ে যায়। এভাবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় অনুসরণে জল ভূমিকা রাখে।
-
পরিষ্কার পানি
-
ডায়রোজ ফ্লেভার
-
প্রতিমুহূর্তে পান
-
টক্সিক পানীয় এড়ানো
প্রোবায়োটিক্স ও যকৃত-সুরক্ষা
চিন্তাশূন্য অন্ত্রজীবাণু পরিবেশ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দই, ছানা, কিমচি, কেফিরের মতো প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার অন্ত্রজীবাণু ভারসাম্য বজায় রাখে। এতে অন্ত্রের ইমিউন কোষগুলো সক্রিয় থাকে এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়া আটকায়। পাশাপাশি লিভার ফাংশন ঠিক রেখে শরীরের টক্সিন দূর করে। যদিও বাজারজাত সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়, তবে প্রকৃতিক উৎস থেকেই সংস্কার প্রাধান্য দিন। সকালে দই-ফ্রুট মিক্সচার বা দুপুরে সালাদে কিমচি যুক্ত করুন। এভাবে প্রতিদিন অন্ত্রজীবাণু সঠিক পরিমানে থাকা নিশ্চিত হয়। ফলস্বরূপ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় ত্বরান্বিত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতা বজায় থাকে।
| খাদ্য | উৎপাদিত প্রোবায়োটিক |
|---|---|
| দই | ল্যাকটোব্যাসিলাস |
| কিমচি | ল্যাক্টো |
| কেফির | মিষ্টি ফারমেন্ট |
ইমিউন-বুস্টিং মশলা ও হার্বস
মশলা ও হার্বস জীবনপান্নায় স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হিসেবে কার্যকর। আদা ও রসুনে উপস্থিত অ্যালিসিন শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল গুণ ধরে। হলুদের কারকিউমিন প্রদাহ কমিয়ে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তুলসী পাতা ও নিম পাতা দিয়ে তৈরি ফ্লেভার ড্রিঙ্কে এমিউন সেল সক্রিয়তা বেড়ে যায়। কাঁচা মসলা গুলোতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষকে মুক্ত মৌল থেকে রক্ষা করে। বেলা বেলা চা বা তরকারিতে এই হার্বসগুলো ছড়িয়ে নিলে শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়।
-
আদা
-
রসুন
-
হলুদ
-
তুলসী
-
নিম
“প্রাকৃতিক উপাদান ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস একত্রে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় কে বাস্তবে পরিণত করে।” – Kameron Tillman Jr.
সূর্যালোক ও ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি শরীরের ইমিউন সিস্টেম মডুলেট করে এবং অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। সকালের সূর্যালোকে ১৫-২০ মিনিট অবস্থান করলে দেহে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়। দোআঁধারি সূর্য এড়িয়ে চলে আপনাকে পরিবেশগত বিকিরণ থেকে সুরক্ষা দেয়। তাছাড়া সেই আলো চোখের সঙ্গে মেলাযোগে মেলাটোনিন হরমোন ঠিক রাখে, ঘুমের চক্র স্বাভাবিক হয় এবং ইমিউন কোষ কার্যকর থাকে। অব্যাহতভাবে ভিটামিন ডি সামান্যভাবে হ্রাস পেলে সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন। তবে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
| সূর্যালোক সময় | শরীরের প্রাপ্তি |
|---|---|
| ১৫-২০ মিনিট (সকালে) | ভিটামিন ডি |
| ৫০% শরীর প্রকাশ | সার্বজনীন শোষণ |
টক্সিন থেকে দূরে থাকা
বায়ু, পানি ও খাদ্যে উপস্থিত বিভিন্ন অযাচিত রাসায়নিক শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় এ বাঁধা সৃষ্টি করে। ফুসফুসে বায়ুবাহিত দূষণ প্রবেশ করলে প্রদাহ বাড়ে এবং রোগ প্রতিরোধী কোষগুলো অসফল হয়। প্লাস্টিকের বোতলে দীর্ঘ সময় খাবার রাখলে ইন্ড্রোল ও বিস্ফেনল-এ বিকৃতি ঘটায়। প্রিজারভেটিভ ও প্যাকেটজাত খাবার থেকে দূরে থাকলে লিভার কম εργভার করে। বরঞ্চ বাড়িতে তৈরি ফ্রেশ খাবার, জার-লেস কন্টেইনার এবং HEPA ফিল্টার যুক্ত এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার নিশ্চিত করুন। এভাবে দেহের অবাঞ্ছিত মারাত্মক রাসায়নিক দূর হয় এবং স্বাভাবিক শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় প্রয়োগে সহায়তা পায়।
-
হার্ড ওয়াটার ফিল্টার
-
বিপিএ ফ্রি বোতল
-
প্রিজারভেটিভ মুক্ত খাদ্য
-
হোম এয়ার পিউরিফায়ার
হাত-স্যানিটেশন রুটিন
মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণ ঠেকাতে হাত পরিষ্কার রাখা খুব জরুরি। খাবার তৈরি বা খাওয়ার আগে, বাথরুম ব্যবহারের পর এবং বাইরে থেকে ফিরে এসে অন্তত ২০ সেকেন্ড সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। যেখানে হাত ধুতে সুবিধা না সেখানে আলকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। নিয়মিত নখের নিচে থাকা ময়লা মুছে ফেলুন ও সময়মতো নখ কেটে ফেলুন। এইভাবে শরীরের প্রবেশদ্বারের উপর নিয়ন্ত্রণ রেখে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় রক্ষা করা যায়। সংক্রামক ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া হাত থেকে মুখে যাতায়াত কমে। বাড়ির বাইরে গিয়ে স্পর্শ করা বস্তু যেমন রেলিং, লিফট বাটন, দোকানের ক্যাশ কাউন্টার ইত্যাদির পর পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
| পরিষ্কার প্রক্রিয়া | সময়কাল |
|---|---|
| সাবান ও পানি | ২০ সেকেন্ড |
| হ্যান্ড স্যানিটাইজার | ৩০ সেকেন্ড |
হেবাল টি ও ড্রিঙ্কস
প্রাকৃতিক টি ও হালকা ড্রিঙ্ক শরীরকে শীতল রেখে ইমিউন সিস্টেমকে সজীব করে। আদা-লেমন টি, গ্রিন টি, তুলসী-দারচিনি টি-তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহের কোষগুলোকে রক্ষা করে। আদা আন্ত্রিক শুষ্কতা কমিয়ে দেয়, লেবু স্যালাইস নাকে আটকে থাকা ময়লা দূর করে। প্রায় ৩০০ মিলি উষ্ণ পানিতে ১ চা চামচ আদা ও ২ টি তুলসী পাতা ফুটিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে খনিজ, ফ্ল্যাভোনয়েড ও ভিটামিনের সরবরাহ মেলে। এই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় দ্রুত পালিত হয় এবং শরীরের আভ্যন্তরীন শক্তি বৃদ্ধি পায়।
-
আদা-লেবু টি
-
গ্রিন টি
-
তুলসী-দারচিনি টি
-
হিবিস্কাস
ধুমপান ও মদ্যপান পরিহার
ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে ইমিউন কোষের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে। সিগারেটের বিষাক্ত কেমিক্যাল ফুসফুসের কোষ ধ্বংস করে এবং অ্যালকোহল লিভারে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এ কারণে শরীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে সঠিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হয়। তাই ধূমপান সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিন, মদ্যপানে পরিমিততা বজায় রাখুন বা পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন। এই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় সহজেই মেনে চলার ফলে দেহের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য স্বাভাবিক হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা মেলে।
| অবস্থা | ইমিউন সিস্টেমে প্রভাব |
|---|---|
| ধূমপান | প্রদাহ বৃদ্ধি |
| অতিরিক্ত মদ্যপান | ইমিউন কোষ হ্রাস |
মন-দেহ চর্চা
যোগাসন, প্রানায়াম এবং হালকা স্ট্রেচিং শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় কে আরও কার্যকর করে তোলে। নিয়মিত যোগাভ্যাসে শরীর নমনীয় হয়, স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণ হয় এবং মস্তিষ্ক শান্ত থাকে। শনিবারে বা রবিবারে পার্কে যোগচর্চা ও মেডিটেশন সেশন করলে মানসিক ভারসাম্য বজায় থাকে। দফায় দফায় শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে শরীর মিলিয়ে প্রানায়াম করলে দেহে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। সকালের প্রথম আলোয় হালকা স্ট্রেচিং দেহকে সতেজ করে এবং রোগ প্রতিরোধী কোষগুলোকে উৎসাহিত করে দ্রুত কাজ করতে।
-
ভ্রামর প্রানায়াম
-
সূর্য নমস্কার
-
শত্বাঙ্গাসন
-
নিয়মিত ধ্যান
পুষ্টি সাপ্লিমেন্ট
যখন খাদ্যমাধ্যমেই সব পুষ্টি পর্যাপ্ত না পায়, তখন সাপ্লিমেন্ট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, জিংক, সেলেনিয়াম ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমূহ শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। সঠিক ডোজ সম্পর্কে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে স্ক্রিনিং টেস্টের ভিত্তিতে বাছাই করুন। সাপ্লিমেন্ট নিলে দেহের অভ্যন্তরীণ কোষগুলো দ্রুত কোন্দল মুক্ত জীবনযাপন করতে পারে। তবে সাপ্লিমেন্ট কোনোভাবেই প্রকৃতিক খাদ্য পরিবর্তে ব্যবহার করবেন না। বরং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হিসেবে খাদ্য ও জীবনশৈলীর সমন্বয়ে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ রাখুন।
| সাপ্লিমেন্ট | লাভ |
|---|---|
| ভিটামিন সি | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট |
| জিংক | সেল ডিভিশন |
| ওমেগা-৩ | প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ |

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
প্রতিদিনের খাবারে যখন যোগ করা হয় সঠিক পরিমানে শাকসবজি, ফলমূল, সম্পূর্ণ শস্য এবং প্রোটিন, তখন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় বাস্তবায়ন সহজ হয়। শাকসবজি এবং ফলমূলে থাকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা খাবার গ্রহনে মুক্ত কণার আক্রমণ ঠেকায়। তৃপ্তির সঙ্গে ভিটামিন সি খাওয়া হয়েছে বলে মনে করলেও, দৈনন্দিন যোগ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। সম্পূর্ণ শস্য আমাদের কোষকে শক্তি দেয় এবং ফাইবার মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাস্থ্যকর প্রোটিন যেমন ডাল, মাছ, মাংস, ডিম শরীরে অ্যান্টিবডি উৎপাদনে সহায়তা করে। এছাড়া, সঠিক পরিমানে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত করা সেল মেমব্রেনকে সুগঠিত করে। ফলস্বরূপ আপনার অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত কাজ করতে পারে। খাবার থেকে জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম যেমন থাকে বাদাম, সমুদ্রজ খাবারে, সেগুলো সাইটোকাইন এবং লিউকোসাইট কার্যক্রমকে উদ্দীপ্ত করে। প্রতিদিন উচিৎ বিভিন্ন রঙের খাবার গ্রহণ করে সকল পুষ্টি উপাদান নিশ্চিত করা। এই নিয়ম মেনে চললে অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রলোভন কমবে এবং স্বাভাবিক ওজন ধরে রাখা সহজ হবে, ফলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় পরিচালনা আরও কার্যকর হবে।
| উপাদান | মূল কর্ম |
|---|---|
| শাকসবজি | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ |
| ফলমূল | প্রচুর ভিটামিন সি |
| সম্পূর্ণ শস্য | নিয়ন্ত্রণিত ফাইবার |
| প্রোটিন | অ্যান্টিবডি উৎপাদন |
পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব
শরীর যখন রাতে বিশ্রাম পায়, তখনই তা নিজেকে পুনর্নবীকরণ করে এবং ইমিউন সেলগুলো সক্রিয় হয়। নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের প্রথম দিকে মেলাটনিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা প্রকৃত প্রতিরক্ষা শক্তি গঠন করে। ঘুমে কমতি হলে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়ে, শরীর অস্থির থাকে এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই দুর্বল হয়। নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুলতে ঘুমের আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে বিরতি নিতে হবে। একই সময়ে শোরুমের পরিবেশ শান্ত ও অন্ধকার রাখতে হবে, যাতে ঘুমের চক্র বিঘ্নিত না হয়। সকালের আলোতে শরীর যখন ঠিক সময়ে ঘুমোতে প্রস্তুত হয়, তখনই দেহপূর্ণ সক্রিয়তা বজায় থাকে। পর্যাপ্ত ঘুম মেমরির শক্তি বাড়ায় এবং স্ট্রেস কমায়, ফলে দেহ অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে তাড়াতাড়ি সাড়া দেয়। গড়ে তুলুন এই সহজ অভ্যাস, দেখবেন জ্বর-সর্দি কম হবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হবে।
-
নিয়মিত ঘুমের সময়:
প্রতিদিন একই সময়ে শোতে গেলে শরীরের ঘুমের ঘড়ি ঠিক থাকে।
-
ইলেকট্রনিক ব্রেক:
ঘুমের এক ঘণ্টা আগে ফোন বা ট্যাবলেট ব্যবহার কমান।
-
আরামদায়ক পরিবেশ:
ঘুমের ঘর অন্ধকার এবং শান্ত রাখুন।
-
বিপজ্জনক ড্রিঙ্কস:
শরীর ঘুমের আগে ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
নিয়মিত ব্যায়াম
দৈনিক হাঁটা, দৌড়, সাইক্লিং অথবা যোগব্যায়াম করলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় সহজে ফল দেয়। ব্যায়াম কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, রক্তপরিবহন ত্বরান্বিত করে এবং প্রতিরোধী কোষ দ্রুত সাইটে পৌঁছায়। সকালের ব্যায়াম মস্তিষ্কে এন্ডোর্ফিন সৃষ্টি করে, যা শরীরের ভ্রুকুটি কমিয়ে দিয়ে স্ট্রেস কমায়। সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি-তীব্রতার ব্যায়াম করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞরা দেন। ওজন কমানো, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, লকশার বৃদ্ধি সবই হয়। তবে অল্পবয়সে অতিরিক্ত ওজনের কারণে যোগব্যায়াম শুরু করলে প্রথমে হালকা আসন গ্রহণ করুন। দোদুল্যমান প্ল্যাঙ্ক বা ওয়াক-আন-দ্য-স্পট ব্যায়ামে ধীরে শুরু করা যায়। নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গে পর্যাপ্ত হাইড্রেশন মেনে চলুন। এতে দেহের টক্সিন বেরিয়ে যায়, কোষগুলো স্বটনির্মিত শক্তি সহজে পায় এবং প্রতিরোধ শক্তি দৃঢ় হয়।
| ব্যায়ামের ধরন | সাপ্তাহিক সময় |
|---|---|
| হাঁটা | ১৫০ মিনিট |
| দৌড় | ৭৫ মিনিট |
| যোগব্যায়াম | ১২০ মিনিট |
| সাইক্লিং | ১০০ মিনিট |
পর্যাপ্ত হাইড্রেশন
প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে পানি পান করলে শরীরের প্রতিরোধ শক্তি স্বাভাবিক থাকে। পানি কোষে পুষ্টি বহন করে, টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। ডিহাইড্রেশন হলে রক্তের ঘনত্ব বাড়ে এবং কোষের পুষ্টি গ্রহণের গতি ধীর হয়। সাধারণ ভাবে দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি রাখা উচিত, আর শারীরিক পরিশ্রম বা গরমে এই পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। ফলে দেহের শুষ্কতা কমে, কবজি এবং ত্বকের নিম্নাংশ সঠিক কার্যকারিতা রাখে। শরীর যখন হাইড্রেটেড থাকে, তখন লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম বেশি কার্যকর হয়, ফলে ভাইরাস-ব্যাকটিরিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত সাড়া দেয়। লেবু যুক্ত পানি বা নিমন্ত্রণ তাজা ফলের রস মিশিয়ে পান করা যায়, যা অতিরিক্ত ভিটামিন সি যোগ করে। পানি ছাড়াও স্যুপ, সবজি শুক্ত চা বা দই-ভিত্তিক সামান্য পানীয় শরীর সুস্থ্য রাখতে ভূমিকা রাখে।
-
নিয়মিত পানি পান:
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পানি নির্ধারণ করুন।
-
স্বাদ যুক্ত করা:
লেবু, পুদিনা বা ফলের আভা যোগ করুন।
-
উষ্ণ পানীয়:
উষ্ণ কারি স্যুপ বা হালকা চা অন্তর্ভুক্ত করুন।
-
হাইড্রেটিং খাবার:
শসা, টমেটো, তরমুজ রান্নার তালিকায় রাখুন।
স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ
মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন, প্রানায়াম, চিত্রাঙ্কন বা আপনার পছন্দের হবি সম্পাদন করা যায়। স্ট্রেস বাড়লে কর্টিসল পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পায়, যা রোগ প্রতিরোধী সেলগুলোকে বিষাক্ত করে। নিয়মিত রিলাক্সেশন টেকনিক সিলেক্ট করে দৈনন্দিনে ১০-১৫ মিনিট সময় দিন। এতে মন প্রশান্ত হয়, শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে আসে, রক্তচাপ স্বাভাবিক হয় এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় এর অংশ হিসেবে কার্যকর প্রতিরক্ষা গড়ে ওঠে। এছাড়া হাসি ও সামাজিক মেলামেশাও স্ট্রেস কমায়; বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, হাসি বিনিময় শরীর ঘুরিয়ে তোলে। সংগীতচর্চা বা বই পড়ার মতো ক্রিয়াকলাপও মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে। ফলে রোগ চাপ সিগন্যাল নিরুৎসাহিত হয়। পর্যাপ্ত রেস্ট এবং কার্যকর স্ট্রেস রিলিফের সমন্বয়ে আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা দৃঢ় হয়।
| ক্রিয়াকলাপ | প্রতিদিনের সময় |
|---|---|
| মেডিটেশন | ১০-১৫ মিনিট |
| প্রানায়াম | ৫-১০ মিনিট |
| সঙ্গীত শুনা | ২০-৩০ মিনিট |
| পড়া | ১৫-২০ মিনিট |
ভিটামিন ও খনিজ গ্রহণ
দেহের কোষের কাজ ঠিক রাখতে ভিটামিন এ, সি, ডি, ই এবং জিঙ্ক, সেলেনিয়াম প্রয়োজন। ভিটামিন ডি প্রাপ্তির জন্য সূর্যালোক পান করুন, যেখানে ব্যান্ধ্য সময় দুপুরে ১০–১৫ মিনিট হাঁটা জুড়ুন। ফলমূল ও শাকসবজিতে ভিটামিন সি পাওয়া যায় প্রচুর, যেমন কমলা, আমলকি, কিবি। ভিটামিন এ’তে সমৃদ্ধ গাজর, পালং, মিষ্টি আলু তুলনামূলকভাবে চোখে फायदा দেয় এবং প্রস্তর কোষ শক্ত করে। ভিটামিন ই বাদাম, চিরুনজীবী তেল এবং সবুজ শাকের মধ্যে উচ্চমাত্রায় পাওয়া যায়, যা কোষ ঝিল্লিকে রক্ষা করে। জিঙ্কের ক্ষেত্রে মাংস, দানা শস্য এবং বাদাম যুক্ত করা বিশেষ উপকার করে। সেলেনিয়াম পেতে পরমান্তু তেলে ভাজা বাদাম বা সমুদ্রজ খাবার বিকল্প। সুষম খাদ্য গঠনমূলক ভিটামিন ও খনিজ পান নিশ্চিত করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় কোষগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
-
ভিটামিন ডি:
সূর্যালোকে হাঁটা বা সম্পূরক গ্রহণ।
-
ভিটামিন সি:
কমলা, আমলকি, কিউইতে প্রচুর।
-
ভিটামিন এ:
গাজর, পালং, মিষ্টি আলু যুক্ত করুন।
-
জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম:
মাংস, বাদাম, সমুদ্রজ খাবার।
“শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হ’ল সেই নিয়মিত অভ্যাস, যা দৈনন্দিন অঙ্গিকে পরিণত করলে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সুস্থ রাখে।” Emiliano Stehr
প্রোবায়োটিক এবং ফার্মেন্টেড খাবার
দেহের অন্ত্রে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া বাস করে, যা ইমিউন সেলের ৭০%–৮০% তৈরিতে ভূমিকা রাখে। প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার যেমন দই, কেফির, সাওয়ারক্রাউট, কিম্চি অন্ত্রে ভাল ব্যাকটেরিয়া বেড়ে দেয়। নিয়মিত যোগ করলে লিপোপলিস্যাকারাইডের আক্রমণ কমে, অন্ত্রের লাইন এবং সেল ইন্টারঅ্যাকশন যথাযথ হয়। ইনফেকশন মোকাবেলা করে সেই সংক্রমণ শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে না পড়ে। ছানা কিংবা অ্যাসিডিফাইড দুধ প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখুন। ফার্মেন্টেড সবজি কিংবা বাদামের দই শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্যই উপকারী। বিবিধ ব্যাকটেরিয়া লাইন বজায় থাকলে প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়, পুষ্টিশোষণ হয় দ্রুত এবং প্রতিরোধ গঠন মজবুত হয়।
| খাবার | প্রোবায়োটিক উৎস |
|---|---|
| দই | ল্যাকটোব্যাসিলাস |
| কেফির | কাফিরার ছত্রাক |
| সাওয়ারক্রাউট | ল্যাক্টোব্যাসিলাস প্লান্টারাম |
| কিম্চি | ল্যাক্টোব্যাসিলাস ব্রেভিস |
প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বিভিন্ন আমিষ
মাছ, মুরগি, ডাল, বাদাম, বীজ সব ধরনের প্রোটিন দেহের কোষের গঠন ও মেরামত করে। গ্রিল্ড বা বেকড চিংড়ি, স্যালমন আমাদের শরীরে ওমেগা-৩ দেয়, যা প্রদাহ কমায়। ডাল-চিকেন স্যুপ ঠান্ডা বা ফ্লুতে দ্রুত আরাম দেয় কারণ এতে থাকে হালকা প্রোটিন এবং স্যালাইন যা দেহের তরল ভারসাম্য ঠিক রাখে। বাদাম ও বীজ শরীরে ভিটামিন ই যোগায়, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুরক্ষা বাড়ায়। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে সেদ্ধ বা গ্রিল্ড প্রোটিন খাবেন। প্রতিদিন পালটে খান প্রোটিনের উৎস; যেমন এক দিন মাছ, পরের দিন দাল এবং তারপর মুরগি। এতে শরীর সব ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড পায়, কোষের মধ্যে অ্যান্টিবডি উৎপাদন দ্রুত হয় এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় এর অংশ হিসেবে সব সেলেই সজীবতা বজায় থাকে।
-
মাছ:
ওমেগা-৩ এবং প্রোটিনের ভালো উৎস।
-
মুরগি:
কম চর্বিযুক্ত উচ্চ প্রোটিন।
-
ডাল:
ভাজা বাদামাময় চাটুকার হালকা বিকল্প।
-
বাদাম ও বীজ:
ভিটামিন ই ও ফাইবার ফলপ্রসূ।
সঠিকভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা
নিয়মিত রক্তপরীক্ষা, ভিটামিন ডি ও বিটা-কারোটিনের যাচাই, জরায়ুর স্বাস্থ্য পোর্টলেটরাসহ বিভিন্ন চেক-আপ করিয়ে নিন। শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য অনুযায়ী যদি কোন খালি পুষ্টি উপাদান থাকে, তা দ্রুত পূরণ করতে পারবেন। প্রাক-ইনফেকশন সনাক্তকরণ ডায়াগনিস্টিক টেস্ট রোগের আশঙ্কা কমায়। ডাক্তারের পরামর্শ মতো সম্পূরক গ্রহণ বা খাদ্য পরিবর্তন করলে প্রতিরোধ শক্তি দ্রুত সুগঠিত হয়। সময়ে সময়ে শরীরের প্যারামিটার পরীক্ষা করালে আপনি নিজেই লক্ষ্য করতে পারবেন স্বাস্থ্য বিষয়ক অস্বস্তি বা পরিবর্তন। এতে পুষ্টি অপচয় রোধ পায়, দেহের কোষ সঠিক ইমিউন সাড়া দিতে পারে, আর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হিসেবে আপনার প্রতিদিনের প্রচেষ্টা সঠিক পথে চলে।
| পরীক্ষার নাম | ঘটনাবলি |
|---|---|
| রক্তবিষ্লেষণ | হিমোগ্লোবিন, সিইএফ নিয়ন্ত্রণ |
| ভিটামিন ডি টেস্ট | পেশী ও হাড়ের স্বাস্থ্যে জরুরি |
| থাইরয়েড | মেটাবলিজমে প্রভাব |
| সিটোকাইন প্যানেল | প্রদাহের স্তর নির্ণয় |
মনের সুস্থতা
মনে খুশি থাকলে শরীরও খুশি থাকে। অফিসীয় চাপ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা সামাজিক সমস্যা যাতে দেহে স্থায়ী চাপ সৃষ্টি না করে, তার জন্য মানসিক সমর্থন নেয়া জরুরি। কাউন্সেলিং, থেরাপি, কিংবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বললে মন প্রফুল্ল হয়। প্রিয় বই পড়া, গান শোনা, হালকা হবি এগুলো স্ট্রেস দূর করে এবং দেহ অ্যান্টিবডি তৈরি প্রক্রিয়া উন্নত করে। ধ্যানের মতো মনোযোগ চর্চা স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করে, মন অবসাদমুক্ত রাখে এবং শরীরে উদ্দীপনা যোগায়। যদি মানসিক স্বাস্থ্যে অস্বাভাবিকতা মনে করেন, মানসিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জেনে ব্যবস্থা নিন। নিয়মিত হবি আপনার ইমিউনকোশগুলোকে সক্রিয় রাখে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হিসেবে নিজেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
-
নিয়মিত থেরাপি:
পেশাজীবী সাথে আলোচনা করুন।
-
হবি চর্চা:
গান, চিত্রাংকন, বাগান করা।
-
সঙ্গীত
মন শান্ত করার জন্য শ্রোতা হন।
-
বন্ধুদের সাথে মিটিং:
আনন্দ ভাগ করে নিন।
সঠিকভাবে হাত ধোয়া ও পরিচ্ছন্নতা
সংক্রমণ আটকাতে হাত ধোয়া সবচেয়ে সহজ কিন্তু শক্তিশালী উপায়। বাসস্থান, অফিস বা বাজার যেখানে থাকুন অল্প অন্তরালে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান ব্যবহার করুন। বায়ুমন্ডলে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়লে প্রথম লাইন প্রতিরোধ হল হাত। কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে ফেনা লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নখের নিচে জমবে জীবাণু, সেগুলো ছেড়ে দিবেন না। বাইরে থেকে আসা জুতাপােয়া, মোবাইল, দূরশাের বুট, ব্রিফকেস স্যানিটাইজ করুন। এছাড়া রান্নাঘরে শাকসবজি ধোয়া ও রান্নার উপকরণ আগেই জীবাণুমুক্ত রাখুন। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ প্রতিনিয়ত রক্ষা করতে নিয়মিত প্ল্যান্ট ক্লিনিং, টয়লেট স্যানিটাইজ করুন। এতে দেহের প্রথম সুরক্ষা স্তর দৃঢ় হয় এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
| কাজ | ফ্রিকোয়েন্সি |
|---|---|
| হাত ধোয়া | প্রতি এক ঘণ্টায় |
| টয়লেট স্যানিটাইজ | প্রতিদিন |
| কিচেন ক্লিনিং | প্রতিদিন |
| ডিভাইস স্যানিটাইজ | দিনে ২ বার |
সানস্ক্রিন এবং সূর্যের আলো
প্রত্যুষে সূর্যালোকে হাঁটা করলে ভিটামিন ডি উৎপাদন হয়, যা অ্যান্টিবডি গঠন বাড়ায়। তবে অতিরিক্ত সূর্যদাহ থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। কারণ সূর্যালোকে দীর্ঘ সময় থাকলে ত্বকের ক্যান্সারসহ মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। সানস্ক্রিনে থাকা মিনারেল ব্লক এমনকি অতিবেগুনি রশ্মি থেকে প্রোটেকশন দেয়। SPF ৩০ বা তার বেশি যথেষ্ট। নিয়মিত ব্যবহারে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব কমে, সঠিক ভিটামিন ডি লেভেল বজায় থাকে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় এর অন্যতম অঙ্গ হিসেবে ত্বক শক্তিশালী হয়। সকালের তিন ঘণ্টার মধ্যেই হালকা সানস্ক্রিন দিয়ে হাঁটার পরিকল্পনা করুন।
-
ভিটামিন ডি সূত্র:
প্রতিদিন ১০–১৫ মিনিট সূর্যালোক।
-
SPF নির্বাচন:
৩০ বা তার চেয়ে বেশি লেবেল।
-
সানস্ক্রিন রিফিল:
৩-৪ ঘণ্টায় পুনরায় লাগান।
-
প্রোটেক্টিভ গ্লাস:
UV ব্লকিং সানগ্লাস ব্যবহার।
ঋতু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো
জলবায়ু বদলে শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যও বদলায়। শীতকালে ভিটামিন ডি কমবে, গরমে দেহের পানিশূন্যতা বাড়বে। বর্ষায় স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে মোশ্চরাল সংক্রমনের সম্ভাবনা থাকে। এই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। ঋতু পরিবর্তনের প্রথম দিনগুলোতে খাবারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ওমেগা-৩ বাড়ান, হালকা গরম স্যুপ খান, পর্যাপ্ত আরাম নিন। শরীরের তাপমাত্রা সামঞ্জস্য রাখতে হালকা ব্যায়াম করুন এবং স্যুন্দর ড্রেসিং মেনে চলুন। পরিবর্তনের সাথে হঠাৎ চ্যাপ বাড়াতে বাজারের ফাস্ট ফুড এড়িয়ে পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন।
| ঋতু | কী করবেন |
|---|---|
| শীত | গরম স্যুপ, উষ্ণ ব্যায়াম |
| বসন্ত | হালকা ফলমূল, চাহিদানুযায়ী সানস্ক্রিন |
| গরম | উচ্চ হাইড্রেশন, হালকা পোশাক |
| বর্ষা | জলবদ্ধতা এড়িয়ে খাদ্যনিয়ন্ত্রণ |
জীবনধারায় নিয়মিত বিরতি
অফিস, বাড়ি, পড়াশোনা জীবনে বিরতি নিলে মন আর শরীর দুইই টসট্যাণ্ড হয়। প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন, পেশী রিল্যাক্সোনে ধ্যান করুন। শরীর থ্রোটেলারের মতো কাজ করবে, সঠিক ম্যাকানিজমে প্রতিক্রিয়া দেবে। কাজের মাঝটায় হালকা হাঁটাচলা রাখলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম সম্মিলিত ভাবে সজীব থাকে। এতে রোগ প্রতিরোধী কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় এবং দ্রুত সাইটে পৌঁছায়। অবিরাম কাজ করলে শরীর অটো-শাটডাউন করায় প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে। তাই নিয়মিত বিরতি দিন, শরীরকে রিচার্জ করুন এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় এর প্রতিটি ধাপ ভেবেচিন্তে পালন করুন।
-
মাইক্রো-ব্রেক:
প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিট চোখ বন্ধ রাখুন।
-
স্ট্রেচিং:
হাত-পা সহজ স্ট্রেচ করুন।
-
হালকা হাঁটা:
অফিসের অদূরে ১০ মিনিট হাঁটুন।
-
কফি ব্রেক:
চা-কফি নিলেই মানুষের সামাজিকতা বেড়ে যায়।
নিজস্ব অভিজ্ঞতা
আমি যখন প্রথম বলুনগাছির ব্যস্ত জীবনে কাজের চাপের মুখে পড়েছিলাম, তখনই বুঝতে পারি আমার প্রতিরোধ ক্ষমতা কত দুর্বল। প্রতিদিন সকালে হাঁটা, সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম এই তিনটি অভ্যাসই আমার জীবন বদলে দিয়েছে। আমি দেখলাম সর্দি-কাশি কমল, কাজে মনোযোগ বাড়ল এবং মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল হল। আমি একসঙ্গে সব নিয়ম মেনে চলার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম এবং লক্ষ্য করেছিলাম এনার্জি বাড়ছে। তখন থেকেই আমি অভ্যাস করেছি দিনের শুরুতে হালকা যোগব্যায়ামে ১৫ মিনিট, মধ্যাহ্ন ভোজে শাকসবজি ও দই, রাতে ঘুমের আগে শরীর ঘড়ি ঠিক রেখে মোবাইল ফোনের পর্দা নিভিয়ে রাখা। Personal routine বজায় রাখার ফলে আমার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। এতে আমি নিজেকে আরও সক্রিয়, সজীব ও সুস্থ রাখি।

উপসংহার
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সঠিক খাদ্য আর জীবমণ্ডলের গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়মিত ফল, শাকসবজি আর সম্পূর্ণ শস্য গ্রহণ করলে ভিটামিন ও খনিজ শক্ত হয়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম আর নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দৃঢ় রাখে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে দেহে জলীয় ভারসাম্য বজায় থাকে। মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান বা হাঁটা উপকারী। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের পুনর্জীবন প্রক্রিয়া সহায়তা করে। ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করলে ক্ষতিকর প্রভাব কমে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে শরীরের অবস্থা জানা যায়। সামগ্রিকভাবে এ পন্থাগুলো মেনে চললে সুস্থ জীবন যাপন সহজ হয়। দই বা টকদইয়ে ভালো ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ভিটামিন ডি দেয়। হাত ধোয়া সংক্রমণ কমায়। সুষম খাদ্য সেবন।
