বাবা-মার পরিচয় ছেলে মেয়েদের জীবনে কি আসলেই প্রভাব করে? আজকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জনাব কামরুল হাসান মামুন হাসানের লেখা থেকে স্পষ্ট হওয়া যাক।

কে কোথায় জন্ম নিল, কে কার সন্তান, কত বড় লোকের সন্তান এইটা সবাইকে বহন করতে হয়। আমি কেন বিরাট সাহিত্যিক বা বিরাট বিজ্ঞানী কিংবা মহা ধনীর বাপের ঘরে জন্মালাম না এইটা নিয়ে মাতম করলে চলবে? এইগুলাকে বলে ইনিশিয়াল কন্ডিশন। পদার্থবিজ্ঞানের সেই সমস্ত ফেনোমেনাকেই বলি ইউনিভার্সাল যেগুলোর ফাইনাল ফলাফল বা আউটকাম ইনিশিয়াল কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে না। থাঙ্কস গড যে গ্যাভিটেশনাল ল, নিউটনের গতি সূত্র, থের্মোডিনামিক্সের সূত্রাবলি ইত্যাদি। এই কারণে কারো ফাইনাল আউটকামের সাথে তাদের ইনিশিয়াল কন্ডিশনকে ট্যাগ লাগাতে হয় না।


মানুষের জন্মের স্থান, কাল, ঘর ইত্যাদির ওপর মানুষের হাত নাই। আবার কে কত সুন্দর কিংবা অসুন্দর ইত্যাদির উপরও হাত নাই। এতদসত্বেও কেউ কেউ এই ইনিশিয়াল কন্ডিশনের সুবিধা পায় আর কেউ পায় না। এটা মেনে নিয়েই আমাদের জীবন। আমার জন্ম যেই দেশে, যেই ঘরে, যেই পরিবেশে হবে সাথে সাথে আমার দেশ, আমার ভাষা, আমার সংস্কৃতি ঠিক হয়ে যায়। আর একই সাথে ঠিক যায় আমার পরিচয়। এই পরিচয় হলো মা-বাবার নাম, যশ, খ্যাতি, অখ্যাতি ইত্যাদি সব। এইসবকে ছাড়িয়ে, এই সবকে যে উৎরে উঠে নিজের একটা পরিচয় তৈরী করতে পারাটাই আসল।


অনেকে আছে আজীবন পিতৃ পরিচয়, মাতৃ পরিচয়, নানা দাদা পরিচয় দিয়েই একটি জীবন পার করে দেয়। তাদের দেখলে আফসুস লাগে। তারা কখনো বড় হতে পারেনা। তারা যাদের পরিচয়কে ক্যাশ করে জীবন চালায় তারা বট গাছের নিচে আগাছা হয়েই জীবন পার করে। তাদের প্রতি আমার করুনা হয়। এইরকম উদাহরণ অনেক পাওয়া যাবে যারা পৈতৃক সুনাম বা অর্থকে আঁকড়ে ধরে পরগাছার মত বড় হতে চায়। ঐসব পরিচয় কেউ মুছে ফেলতে পারে না। কিন্তু ওটাকে ক্যাশ করা থেকে বিরত নিশ্চই থাকতে পারে। যারা সেই পরিচয়কে ইচ্ছে ক্যাশ না করে নিজে কষ্ট করে বড় হতে চায় তাদের শ্রদ্ধা করতে শিখুন। তাদের বড় হতে দিন।


পশ্চিমা দেশের সন্তানেরা বাবা মায়ের অর্থ সম্পদের দিকে তাকিয়ে থাকে না। আর বাবা মায়েরাও নিজেদের সাধ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে এমনকি সন্তানের লেখাপড়ার জন্য খরচে কিপ্টামি করে সন্তানের জন্য বাড়ি সম্পত্তি ফ্ল্যাট রেখে যেতে ব্যস্ত। এর চেয়ে আহমকী আর হয় না। বাবার সম্পত্তি আছে শুধু এই ভাবনার কারণে বাংলাদেশের বহু সন্তান বখে গিয়েছে। পশ্চিমারা এইটা অনেক আগেই বুঝে গেছে। এইজন্য তারা খরচের অতিরিক্ত টাকা ভালো ভালো কাজে, চ্যারিটি কাজে দান করে। এইজন্যই পশ্চিমা বিশ্বে অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি বিশাল অংকের অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দান করে যান। পরিশেষে এই দান সন্তানের সুখেই কাজে দেয়। কারণ সন্তান যেখানে থাকবে সেখানে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলে মানুষ সুশিক্ষিত হবে। ফলে তার সন্তান সুখে থাকার ভালো পরিবেশ পাবে। যেই পরিবেশের খোঁজেইতো আমাদের দেশের অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি নিজের দেশকে বিদেশের মত বানানোর চেষ্টা না করে সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

লিখেছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন

Share.

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Leave A Reply

mostplay app

4rabet app

leonbet app

pin up casino

mostbet app

Exit mobile version