শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ‘কৌরবদের আমি মারিয়াই রাখিয়াছি, অর্জুন নিমিত্তমাত্র।’ দেখা যাচ্ছে, সিটি করপোরেশনগুলো শ্রীকৃষ্ণের এই বাণীকে আক্ষরিক অর্থে আত্মস্থ করে বসে আছে। তারা নাগরিক সুরক্ষার মৌলিক বিষয়গুলোকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে ঢাকনাহীন ম্যানহোল এবং স্ল্যাব কিংবা নিরাপত্তাবেষ্টনীবিহীন খালের মতো এমন কিছু মৃত্যুফাঁদ রচনা করে রেখেছেন, যে ফাঁদে পড়ে কিছুদিন পরপরই মানুষ মারা যাচ্ছে। লোকে জানছে দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে। কিন্তু ‘দুর্ঘটনাজনিত’ এসব প্রাণহানি কার্যত পূর্বনির্ধারিত হত্যাকাণ্ড।

চট্টগ্রাম নগরে মনুষ্যকৃত মৃত্যুফাঁদে পড়ার সর্বশেষ ঘটনা ঘটল বুধবার। সেখানকার মুরাদপুর মোড় এলাকায় ছালেহ আহমেদ (৫০) নামের এক ব্যক্তি নিরাপত্তাবেষ্টনীবিহীন চশমা খালে পড়ে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছেন।

সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা তাঁর পড়ে যাওয়ার সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ছালেহ আহমেদকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা খুঁজে বের করতে পারেননি। অলৌকিক কিছু না ঘটলে তাঁরা এখন তাঁর মৃতদেহ ভেসে ওঠার অপেক্ষায় আছেন।

চশমা খালটি এমনভাবে নগরের মধ্য দিয়ে গেছে যে বর্ষণজনিত জলাবদ্ধতা হলেই নালা-রাস্তা-খাল সব একাকার হয়ে যায়। তখন ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর আগে গত জুনে মেয়রের গলি এলাকায় ওই চশমা খালেই একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা পড়ে গিয়েছিল এবং তাতে অটোরিকশার চালক ও একযাত্রী মারা যান। এ নিয়ে গত ছয় বছরে চট্টগ্রাম নগরে জলাবদ্ধতার সময় নালা-নর্দমা ও খালে পড়ে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

একইভাবে কয়েক বছর আগে ঢাকনাহীন পাইপে পড়ে ঢাকার শাহজাহানপুরে শিশু জিহাদ এবং শ্যামপুরে খোলা নর্দমায় পড়ে শিশু নীরব মারা যায়। অথচ এসব খাল ও নর্দমার ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় নিরাপত্তাবেষ্টনী এবং ম্যানহোলে ঢাকনা থাকা নিশ্চিত করলে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যেত। আতঙ্কের খবর হলো, রাজধানীতে ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি করপোরেশনের ম্যানহোলের প্রায় ১০ শতাংশই ঢাকনাবিহীন। ঢাকনাহীন ম্যানহোলে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয় অনেক পথচারী।

এসব ‘দুর্ঘটনার’ পর দায়বদ্ধতার প্রশ্নের ‘যেনতেন প্রকারেণ’ জবাব দিতে এ দেশে ‘তদন্ত’ নামক একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়। আলোচনাটি বিস্মৃতিতে তলিয়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত ‘তদন্ত’ চলতে থাকে। চট্টগ্রামের সর্বশেষ ঘটনায়ও সেই প্রক্রিয়া হয়তো শুরু হবে। কিন্তু সর্বজনজ্ঞাত কারণটি বিদগ্ধ তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে অজ্ঞাতই রয়ে যাবে। আবার হয়তো কেউ ‘অসতর্ক হয়ে’ খালে-নর্দমায়-ম্যানহোলে পড়ে প্রাণ হারাবেন। আবার তদন্ত হবে।

নাগরিক সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অবিলম্বে এ ‘বহুল মঞ্চস্থ নাটক’ থামানো দরকার। কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করা দরকার। তাতে অন্তত কিছু অমূল্য প্রাণ বাঁচবে।

Share.

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Leave A Reply

mostplay app

4rabet app

leonbet app

pin up casino

mostbet app

Exit mobile version