অবশেষে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হয়েছেন পশ্চিমাসমর্থিত আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি। তালেবানের অস্থায়ী সরকারের কাছে ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল সাত্তার মির্জাক্বল।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবর অনুসারে, রেকর্ড করা এক বার্তায় আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আফগান জনগণের চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই… শহরে কোনো হামলা হবে না। অস্থায়ী সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে, রোববার সকাল থেকেই কাবুলের পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে রাজধানীতে ঢুকতে শুরু করে তালেবান যোদ্ধারা। সশস্ত্র গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তারা তাদের যোদ্ধাদের কাবুলের প্রবেশপথে বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছে।
তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জোর করে কাবুল দখলের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। গোষ্ঠীর এক নেতার বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, যারা আফগানিস্তান ছাড়তে চান তাদের নিরাপদে যেতে দিতে যোদ্ধাদের নির্দেশ দিয়েছে তালেবান।
তালেবান মুখপাত্র সুহেইল শাহীন আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, তারা কাবুলে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে আফগান সরকারের সঙ্গে কোনও ধরনের সমঝোতা হয়ে কি না তা বলতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে, ক্ষমতা ‘হস্তান্তর’ প্রস্তুতির জন্য তালেবানের পক্ষ থেকে একটি সমঝোতাকারী দল আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের দিকে রওয়ানা হয়েছে। এক আফগান কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) এ তথ্য জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আফগান সরকারের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য তালেবানের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান তালেবানের শাসনে ছিল। এর মধ্যে আল-কায়েদা নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট দেশটিতে যৌথ অভিযান চালায়, যার মাধ্যমে তালেবান শাসনের অবসান ঘটে।
অভিযানে আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের দমনের পরও কথিত ‘শান্তিরক্ষার স্বার্থে’ আফগানিস্তানে প্রায় দুই দশক অবস্থান করেছে পশ্চিমা সেনারা। সম্প্রতি সেখান থেকে ধাপে ধাপে এসব সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়েছে।
তবে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শুরুর পরপরই কাবুলের মসনদে উঠতে জোর লড়াইয়ে নামে তালেবান। যদিও এর মধ্যে তালেবানের সঙ্গে আফগান শাসকগোষ্ঠীর সংঘাত অবসানে কাতারসহ বিভিন্ন পক্ষের মধ্যস্থতায় নানা সময়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সেসব আলোচনায় দৃশ্যমান কোনও ফল হয়নি। এবার সশস্ত্র অভিযানের মাধ্যমেই আফগানিস্তানে ফের ক্ষমতায় বসতে চলেছে তালেবান।