ইসরায়েলি একটি স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে আড়িপাতার বড় একটি ঘটনা ফাঁস হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানসহ ১৭টি সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণে ভয়াবহ এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপের তৈরি করা সফটওয়্যার ‘পেগাসাস’ ব্যবহার করে এই আড়িপাতার এ ঘটনা ঘটেছে। কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো এই নজরদারি চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী, এমনকি কোনো দেশে ক্ষমতাসীন পরিবারের সদস্যদের ওপরও আড়িপাতা হয়েছে।
৫০ হাজারের বেশি ফোন নম্বরের একটি তালিকা ফাঁস হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে এনএসওর গ্রাহকেরা এসব নম্বরে আড়ি পেতেছে।
ফাঁস হওয়া একটি ডেটাবেইসে এই ফোন নম্বরগুলো প্রথমে পায় প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। পরে তারা গার্ডিয়ান, দ্য অয়্যারসহ ১৬টি সংবাদমাধ্যমকে তা জানায়। তারা সবাই মিলে এই অনুসন্ধানের নাম দিয়েছে ‘পেগাসাস প্রজেক্ট’।
এই হ্যাকিংয়ের তালিকায় ভারতের অন্তত ৩০০ রাজনীতিক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, বিজ্ঞানীর নাম থাকার কথা জানিয়েছে দেশটির নিউজ পোর্টাল দ্য অয়্যার।
পেগাসাস হলো একটি ম্যালওয়্যার (বিশেষ ধরনের ভাইরাস)। এর মাধ্যমে আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সব মেসেজ, ছবি, ই-মেইল, কল রেকর্ড বের করা যায়। এই ম্যালওয়্যার ফোন ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতেই মাইক্রোফোন চালু করে দেয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাইবার সিকিউরিটি ল্যাব পরিচালনাকারী ক্লডিও গার্নিয়েরি গার্ডিয়ানকে বলেন, একবার কোনো ফোনে (স্মার্টফোন) পেগাসাস সফটওয়্যার ঢুকে গেলে এনএসওর গ্রাহক পুরো ফোনটির দখল পেয়ে যায়।
‘ফোনের মালিকের মেসেজ, কল, ছবি, ই-মেইল সবই দেখতে পাবে, গোপনে ক্যামেরা কিংবা মাইক্রোফোন চালু করতে পারবে। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, সিগন্যালের মতো এনক্রিপটেড মেসেজিং অ্যাপের বার্তাগুলোও পড়তে পারবে’ বলেন তিনি।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাঁস হওয়া তালিকায় কাদের নম্বর রয়েছে, তা ভবিষ্যতে প্রকাশ করা হবে। এই ব্যক্তিদের মধ্যে শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাহী, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, একাডেমিক, এনজিও কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা রয়েছেন। একটি দেশের শাসকের পরিবারের সদস্যদের নম্বরও রয়েছে।
রবিবার এই তালিকা ফাঁস হতে শুরু করে। প্রথমে তালিকায় ১৮০ জনের বেশি সাংবাদিকের নম্বর থাকার কথা জানা যায়। যাদের মধ্যে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, ফ্রান্স ২৪, ইকোনমিস্ট, এপি ও রয়টার্সের প্রতিবেদক, সম্পাদক ও নির্বাহীরাও রয়েছেন।
ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, ৪৫টি দেশের ফোন নম্বর পাওয়া গেছে ওই তালিকায়, তার মধ্যে ১ হাজারের বেশি নম্বর ইউরোপের দেশগুলোর। এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও।
তবে ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও এক বিবৃতিতে বলেছে, তালিকায় যে ৫০ হাজার ফোন নম্বরের কথা বলা হচ্ছে, সেটা ‘অতিরঞ্জিত’। তারা ৪০টি দেশের শুধু সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এই স্পাইওয়্যার বিক্রি করেছে।