কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট না হলেও নামাজে দাঁড়ালেই নামাজি ব্যক্তির মনোযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। এটি শয়তানের কাজ। নামাজের সময় হলে যেমন অন্য কাজের স্পৃহা বেড়ে যায়, তেমনি নামাজে বার বার মনোযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। এ থেকে বাঁচতে কিছু আমল করা যেতে পারে। তা হলো-

১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে নামায আদায় করেছেন ঠিক সেভাবেই নামায পড়তে হবে।

২. নামাঘে তিনি যে অবস্থায় যা পড়েছেন তা শুদ্ধ করে পড়া শিখতে হবে এবং তা ঠোঁট ও জিহবা নেড়ে উচ্চারণ করতে হবে। (মনে মনে পড়লে চলবে না)।

৩. কালেমার ওয়াদা অনুযায়ী চলার ট্রেনিং হিসেবে নামায আদায় করতে হবে। নামাযে দেহের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার করতে হয়। বিভিন্ন অবস্থায় হাত বিভিন্নভাবে রাখতে হয়। বিভিন্ন অবস্থায় নির্দিষ্ট স্থানে চোখে তাকাতে হয়। রুকু ও সিজদা বিশেষ নিয়মে করতে হয়। এসবই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন।

নামাযে এ শিক্ষাই দেওয়া হয় যে, দেহের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেভাবে নামাযে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো নিয়মে ব্যবহার করা হয়, নামাযের বাইরেও এসবকে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্জি মত ব্যবহার করতে হবে। নিজের মর্জি মত ব্যবহার করা চলবে না। এভাবেই নামাযের শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে কায়েম করতে হবে। কুরআনে নামায কায়েম করতেই হুকুম করা হয়েছে; শুধু পড়তে বলা হয়নি।

৪. নামাযে মনের ট্রেনিং আরও গুরুত্পূর্ণ। মনই তো আসল। নামাযকে কালেমার ট্রেনিং হিসেবে মনে করলেই তো বাস্তব জীবনে নামাযের শিক্ষাকে কাজে লাগানো সহজ হবে।

মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ তাআলা মুমিনের ২৪ ঘণ্টার রুটিন ৫ ওয়াক্ত নামাযের নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থাই করেছেন। এ রুটিন শুরু হবে ফজরের নামায দিয়ে এবং শেষ হবে ইশার নামায দিয়ে। মাঝখানে ৩ বার দুনিয়ার দায়িত্ব মুলতবী রেখে নামাযে হাযির হতে হবে। নামায নির্দিষ্ট সময়ে পুরুষদেরকে মসজিদে জামাআতে আদায় করতে হবে। অন্য কোন কাজের জন্য নামাযকে মুলতবী করা চলবে না। এভাবে ২৪ ঘণ্টার রুটিন নামায দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।

সকালে ঘুম থেকে উঠার পর নামাযই পয়লা কাজ। এর আগে পেশাব – পায়খানা ও ওজু ও গোসল তো আসলে নামাযেরই প্রস্তুতি। এগুলো দুনিয়ার কোন দায়িত্ব নয়। দুনিয়ার কাজ শুরু করার পূর্বে নামাযের মাধ্যমে এ চেতনা দান করা হলো যে, “তুমি তোমার জীবন যেমন খুশি তেমনি যাপন করতে পারবে না। তুমি স্বাধীন নও, তুমি আল্লাহর গোলাম।”

ফজরের নামাযেই এ চেতনা নিয়ে নামায আদায়ের পর নামাযের বাইরেও এ চেতনা জাগ্রত রাখতে হবে। নামাযের বাইরে দুনিয়ার দায়িত্ব পালন করতে করতে এ চেতনা ঢিলে হয়ে যায়। তাই বার বার যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার নামাযে হাযির হয়ে কালেমার ট্রেনিংকে ঝালাই করতে হয় এবং এ চেতনাকে শান দিতে হয়।

আল্লাহু আকবার বলে নামায শুরু করার পর সালাম ফিরানোর পূর্ব পর্যন্ত দেহ ও মনকে একমাত্র আল্লাহর হুকুম ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর তরীকা অনুযায়ী ব্যবহার করতে হয়। কেউ বেশি সওয়াবের নিয়্যতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার জায়গায় সূরা ইয়াসীন পড়লে নামায হবে না। নিজের মর্জি মত নামাযে কিছুই করা যাবে না। আল্লাহর হুকৃম ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর তরীকা মতই নামাযে সবকিছু করতে হবে।

এভাবে ৫ ওয়াক্ত নামাযে কালেমার যে ট্রেনিং হয়, তা নামাযের বাইরে কায়েম করতে পারলেই নামাযের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়। নামায বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন কোন অনুষ্ঠান নয়। জীবনের সব ক্ষেত্রে নামাযের ট্রেনিংকে কাজে লাগাতে হবে। এটাই নামাযে মনের ট্রেনিং। মনকে নামায থেকে বিচ্ছিন্ন করা চলবে না। ফজরের পর মসজিদে মনকে ঝুলিয়ে রেখেই বাইরে যেতে হবে। মন সারাদিন নামাযের সময় সম্পর্কে সচেতন থাকবে।

৫. নামাযের বিভিন্ন অবস্থায় মনটাকে কাজ দিতে হবে, যাতে মন নামাযের বাইরে চলে না যায়। নামাযে মন অনুপস্থিত হলেই মনে শয়তান এমন সব ভাবনা হাযির করে, যা নামাযের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ করে দেয়। নামায শেখার সময় এটা সাধারণত শেখানো হয় না। এটা অবশ্যই শিখতে হবে। আমরা দেহ দ্বারা নামাযে যা করি, তাতে নামাযের দেহ তৈরি হয়। আর মনে যদি সঠিক ভাবনা থাকে তবেই নামাযে প্রাণ সঞ্চার হয় বা নামায জীবন্ত হয়। তাই নামাযে কোন্‌ অবস্থায় মনে কোন্‌ ভাবনা থাকতে হবে তা জানতে হবে ও তা অভ্যাস করতে হবে। নামাযে যখন যা পড়া হয় এর মর্মকথাই ভাবনায় থাকতে হবে।

নামাযে সবকিছুই আরবীতে পড়তে হয়। যারা আরবীর অর্থ বুঝে না তারাও মর্মকথাটা জেনে নিতে পারে। টাকার নোটের লেখা যারা পড়তে জানে না তারাও কোনটা কত টাকার নোট তা চিনে নেয়। তেমনি নামাযে আরবীতে যখন যা পড়া হয় এর মর্মকথা জেনে নিতে হবে। আরবীটুকু মুখস্থ করতে যে সময় লাগে এরও কম সময়ে তা শেখা সন্তব। মুখে উচ্চারণ করবে, আর মনে মর্মকথাটুকু জাগ্রত খবে।

৬. কালেমায়ে তাইয়েবার মধ্যে যেমন ওয়াদা রয়েছে, তেমনি নামাযেও প্রচ্ছন্নভাবে ওয়াদা করা হয়।

গোটা নামাযে এ ওয়াদা উহ্য রয়েছে যে, “হে আমার মাবুদ, নামাযে যেমন তোমার হুকুম ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর তরীকা মত সবকিছু করেছি, নামাযের বাইরেও আমি সেভাবেই করব। আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নামাযে যেমন আমার মর্জি মত ব্যবহার করিনি; নামাজের বাইরেও তা আমার মর্জি মত ব্যবহার করব না। নামাযে যে মুখে তোমার পবিত্র কালাম উচ্চারণ করেছি, নামাযের বাইরেও তোমার অপছন্দনীয় কথা মুখে আনব না।

নামাযের রুকুতে আমার যে মাথা তোমার দরবারে নত করে গৌরবের ভাগী হয়েছি, সে মাথাকে আর কোন শক্তির সামনে নত করে অপমানিত করব না। আমাকে এ শক্তি দাও, যাতে এ গৌরব বহাল রাখতে পারি।

সিজদায় আমার দেহ-মনসহ আমার পূর্ণ সত্তাকে তোমার নিকট সমর্পণ করে ধন্য হয়েছি। আমি একমাত্র তোমার নিকট আশ্রয় নিয়েছি। আমার আর কোন আশ্রয়ের প্রয়োজন নেই। আমি আর কোন শক্তির অনুগ্রহের ভিখারি হব না। আমি আর কোন শক্তির পরওয়া করব না। সিজদায় তোমার যে মহান নৈকট্য লাভ করেছি, এটাই আমার মহা-সম্পদ। আমাকে তোমার গোলাম হিসেবে কবুল করে নাও। আমাকে তোমার সালেহ বান্দাহ গণ, মুখলিস দাস গণ ও অগ্রবর্তী মুকাররাবীনের মধ্যে শামিল কর।

Share.

My name is Mahazabin Sharmin Priya, and I am an author who studied Mathematics at the National University. I have a deep passion for writing in various genres, including Islam, technology, and mathematics. With my knowledge and expertise, I strive to provide insightful and engaging content to readers in these areas.

Leave A Reply

mostplay app

4rabet app

leonbet app

pin up casino

mostbet app

Exit mobile version