দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও কক্সবাজারের বঙ্গোপসাগরের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে পর্যটকে গিজগিজ করছে। আজ শুক্রবার সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণে গেছেন অন্তত আট হাজার পর্যটক। অর্ধেকের বেশি পর্যটক বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ১০টি জাহাজে টেকনাফ ও কক্সবাজার ফিরে এলেও অন্যরা দ্বীপে থেকে গেছেন।

তাঁরা রাতযাপন করবেন সেখানকার শতাধিক হোটেল, মোটেল ও কটেজে। পর্যটকদের কেউ হাটবাজার, সমুদ্রসৈকত ও দোকানে পায়চারি করছেন। কিন্তু অধিকাংশ পর্যটকের মুখে মাস্ক নেই। দ্বীপের কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। ফলে দ্বীপে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, অন্যান্য সময়ে দৈনিক গড়ে পাঁচ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে এলেও আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এসেছেন আরও কয়েক হাজার বেশি। ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দূরের কথা, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো—ভ্রমণে আসা অধিকাংশ পর্যটকের মুখে মাস্ক নেই। এতে করোনার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। যদিও এ পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ১১ হাজার বাসিন্দার কারও করোনা শনাক্ত হয়নি এবং করোনায় কারও মৃত্যুও হয়নি।

ঘাট ইজারাদারেরা বলছেন, শুক্রবার সেন্টমার্টিন জেটিঘাট দিয়ে দ্বীপে উঠেছেন আট হাজারের বেশি পর্যটক। পর্যটকে গিজগিজ করছে দ্বীপের তিন দিকের সৈকত।

শুক্রবার সকাল ৯টায় টেকনাফের নাফ নদীর দমদমিয়া ঘাটে পর্যটকের ঢল দেখা যায়। জাহাজে ওঠার জন্য পর্যটকেরা হইচই করছেন। আটটি জাহাজে তোলা হয় পর্যটক। সাড়ে ৯টার দিকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ‘বে ক্রুজ’ জাহাজ।

২৫০ জন ধারণক্ষমতার ওই জাহাজে ওঠানো হয়েছে ৪৫০ জনের বেশি। পর্যটকেরা কেউ চেয়ারে, কেউ রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। অধিকাংশ পর্যটকের মুখে নেই মাস্ক।
২০০ জন ধারণক্ষমতার এসটি শহীদ সুকান্ত বাবু ও এম ভি সালাম জাহাজেও ওঠানো হয় অতিরিক্ত কয়েক শ যাত্রী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাহাজ দুটির দুজন কর্মকর্তা জানান, আগে থেকে অনলাইনে টিকিট করা লোকজন জাহাজে হুমড়ি খেড়ে পড়েছে। বাধা দেওয়া সত্ত্বেও বিপুলসংখ্যক পর্যটক জাহাজে উঠে পড়েন। ফলে নামানো সম্ভব হয়নি। তবে টিকিটের মূল্য আগের নিয়মে (৮০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা) আদায় হয়েছে।

ঘাটের ইজারাদারের টোল আদায়কারী মোহাম্মদ হাসান বলেন, আজ সকাল সাড়ে ৯টায় আটটি জাহাজে (কেয়ারি সিন্দবাদ, কেয়ারি ক্রুজ, বে ক্রুজ, গ্রিনলাইন, এসটি শহীদ সুকান্ত বাবু, এমভি ফারহান ও এমভি পারিজাত) চড়ে অন্তত চার হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন গেছেন। কক্সবাজার থেকে এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম থেকে এমভি বে-ওয়ানে চড়ে গেছেন আরও চার হাজার পর্যটক। এ ছাড়া টেকনাফ থেকে ৪০টির বেশি কাঠের ট্রলার ও স্পিডবোটে করে সেন্ট মার্টিনে গেছেন আরও হাজার খানিক পর্যটক।

১৩ জানুয়ারি থেকে অর্ধেক আসন খালি রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যাত্রী পারাপারের বিধিনিষেধ, নির্দেশনা থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। সকালে টেকনাফের জাহাজ ঘাটে পর্যটকদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মচারীরা। কিন্তু জাহাজে ওঠার পর যাত্রীরা সেই মাস্ক মুখ থেকে সরিয়ে রাখেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি মুখে মাস্ক পরা নিশ্চিত করার জন্য সব জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। যদি কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিআইডব্লিউটিএ–এর টেকনাফ অঞ্চলের সুপারভাইজার জহির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, প্রত্যেক পর্যটককে জাহাজে ওঠার সময় মাস্ক পরা নিশ্চিত করা হচ্ছে। যাঁদের কাছে মাস্ক নেই, তাঁদের মাস্কও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জাহাজে উঠে তাঁরা কী করছেন, তা দেখার দায়িত্ব জাহাজ কর্তৃপক্ষের।

মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রীকে জাহাজে ওঠানো হচ্ছে না বলে জানান জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অব বাংলাদেশ-(স্কুয়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জাহাজে প্রচারও চালানো হচ্ছে। কিন্তু পর্যটকদের মধ্যে অনেকে নানা অজুহাতে সেন্ট মার্টিন দেখতে জোর করে জাহাজে উঠে পড়েন। এ ক্ষেত্রে জাহাজ কর্তৃপক্ষের করার কিছু থাকে না।

Share.

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Leave A Reply

mostplay app

4rabet app

leonbet app

pin up casino

mostbet app

Exit mobile version