জনৈক ইসলামবিদ্বেষী পশ্চিমা মনোবিজ্ঞানী বলেন :

‘ধর্মের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা মানুষের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যকে ব্যাহত করে। এবং পাপ অনুভূতি তার জীবনকে বিস্বাদ করে রাখে। এই অনুভূতি বিশেষত ধার্মিক লোকদের বন্দী করে রাখে। তাদের কাছে মনে হয় যে, তারা যে পাপ করেছে, তা জীবনের আনন্দ থেকে বিরত থাকা ছাড়া ক্ষমা করা হবে না।’

আর কিছু লোক নিম্নলিখিত কথা বলে :

‘ইউরোপ যতদিন ধর্মকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিল, অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। অতঃপর যখন ধর্মের সেকেলে শৃঙ্খলাগুলি খুলে ফেলল, তখন ধর্মের বন্দিদশা থেকে তাদের অনুভূতিগুলো মুক্ত হলো এবং কাজ ও উৎপাদনের জগতে যাত্রা শুরু করল।’

তারা প্রশ্ন করে :

‘(ধর্মের দাওয়াত দেওয়ার মাধ্যমে) তোমরা কি আমাদের আবার সেই সেকেলে অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চাও? আমাদের অনুভূতিগুলো আবার দমন করতে চাও? উপচে পড়া যৌবনের আনন্দকে ব্যাহত করতে চাও? হালাল-হারামের বন্দিদশা থেকে স্বাধীন হওয়ার পর আবার কি সেদিকে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাও?’

অনুরূপভাবে তারা বলেঃ

‘যুবক-যুবতিদের পারস্পরিক মেলামেশা যদি অবাধ হয়, তাদের প্রত্যেকের মেজাজ ও স্বভাব মার্জিত থাকে। উভয় দলের মাঝে নিষ্পাপ বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে যদি তাদের মধ্যে পর্দার প্রাচীর আড়াল করে দেওয়া হয়, তখন যৌন আকাঙ্ক্ষা তাদের প্রত্যেকের মধ্যে জেগে ওঠে এবং তাদের প্ররোচিত করে। এই শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা তাদের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য কেড়ে নেয়।’

ধর্মের ব্যাপারে ইউরোপীয়দের যে অভিযোগ, তার জবাব দেওয়ার জন্য আমাদেরকে আমাদের ধর্ম এবং তারা যে ধর্ম থেকে মুক্তি পেয়েছিল সে ধর্মের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করে দিতে হবে। ইউরোপীয়রা ধর্ম বলতে যা বোঝে তা হচ্ছে, সকল ক্ষেত্রে ধর্মযাজকদের কর্তৃত্ব, বিজ্ঞানের বিরোধিতা, চিন্তার বিরোধিতা করার অপরাধে বিজ্ঞানীদের হত্যা। মোটকথা, ধর্মের ঠিকাদারি নেওয়া ধর্মযাজকদের মনগড়া নিয়মনীতি এবং তার জুলুম-অত্যাচারকেই ইউরোপীয়রা ধর্ম মনে করে। এ জন্যই ধর্মকে তারা উন্নতির পথে বাধা এবং সেকেলে মনে করে।
তাদের কাছে ধর্মের চিত্র এটাই। সুতরাং তারা এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। অবশ্য এই যদি হয় ধর্মের চিত্র, তাহলে ধর্মের বিরোধিতায় আমরাও তাদের সাথে আছি।
কিন্তু আমাদের ধর্ম তো এমন নয়। ইতিহাস প্রমাণ করে, মুসলিমরা খত দিন ধর্মকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিল, তত দিন তারা উন্নতি-অগ্রগতির শীর্ষে ছিল। ধর্ম থেকে সরে পড়ার কারণেই তাদের পতন শুরু হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, মুসলিমদের দ্বীন উন্নতির পথে বাধা তো নয়ই; বরং তা উন্নতির দ্বার উন্মুক্ত করে। তাদের অভিযোগের মধ্যে আরেকটি বড় অভিযোগ ছিল, ইসলাম মানুষের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যকে অবদমিত করে। এই অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য আমাদের অবদমনের অর্থ বুঝতে হবে। মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি যে কাজ থেকে বিরত থাকতে চায়, সে কাজ থেকে নিষেধ করাকে কোনোভাবেই অবদমন বলা যায় না। মন্দ থেকে বিরত থাকার সহজাত প্রবণতাকে অস্বীকার করলেই কেবল অবদমন অনুভূত হয়। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যখন এমন কোনো কাজ করতে যায়, যা তার অনুভবে মন্দ, তাহলে সে উক্ত কাজ থেকে সহজে বিরত থাকতে পারে। এই বিরত থাকা তার জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যকে দমন করে না; বরং কাজটি করে ফেললেই সে অস্বস্তি অনুভব করে।
তারা আরেকটি অসাড় দাবি করেছে যে, যুবক-যুবতিদের মাঝে মেলামেশা অবাধ হলে তাদের মেজাজ সভ্য ও মার্জিত হয় এবং তাদের মাঝে নিষ্পাপ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এই দাবি যে সম্পূর্ণ অবাস্তব ও অসাড়, তা হাতে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যুবক-যুবতিদের অবাধ মেলামেশা আছে এমন সমাজের দিকে তাকালেই তা দেখা যায়। তারা বলে, পর্দা করলে যুবক-যুবতির মনে যৌন আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়। তো এতে খারাপের কী আছে? এটাই তো স্বাভাবিক। মনের মধ্যে যৌনবাসনা জাগ্রত হওয়াকে ইসলাম খারাপ চোখে দেখে না । ইসলাম শুধু এতটুকু বলে, যৌনবাসনা নিয়ন্ত্রিত রেখে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত পাত্রে প্রয়োগ করো। এর জন্য ইসলাম বিয়ের মতো সুন্দর ও সহজ ব্যবস্থাও করে রেখেছে।
তাদের আরেকটি অভিযোগ হলো, ইসলাম তার অনুসারীদের মনে পাপের অনুভূতি দিয়ে চেতনে-অবচেতনে তাদের অস্থির করে রাখে। এই অভিযোগ সত্য নয়। কারণ মানুষ যতই পাপ করুক, পাপের শাস্তি ভোগ করার আগে আগেই ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার দরজা তাদের জন্য উন্মুক্ত করে রেখেছে ইসলাম। ইসলামে পাপ এমন জঘন্য কিছু নয় যে, পাপীকে মানুষ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। আদি পিতা আদম আলায়হিস সালাম যে ভুল করেছিলেন, তার জন্য কি গোটা মানবজাতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে? বরং আল্লাহ তাআলা তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দিলেন এবং ক্ষমা করে দিলেন। কুরআনের ভাষায় :

فتلقی ادم من ربهٖ کلمت فتاب علیه انهٗ هو التواب الرحیم ﴿۳۷﴾

অতঃপর আদম তার রবের পক্ষ থেকে কিছু বাণী পেল, ফলে আল্লাহ তার তাওবা কবূল করলেন। নিশ্চয় তিনি তাওবা কবূলকারী, অতি দয়ালু। [সুরা বাকারাঃ ৩৭]

আদম-সন্তান যখন পাপ করে, তখন আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যায় না। কেননা, তাদের পাপ করার প্রবণতা সম্পর্কে তিনি অবগত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

كل بني آدَمَ خَطَاءُ، وَخَيْرُ الْخَطَائِينَ الكَوَّابُونَ
‘সকল আদম-সন্তান পাপী। আর পাপীদের মধ্যে তাওবাকারীরাই উত্তম। [সুনানুত তিরমিজিঃ ২৪৯৯]

আল্লাহ তাআলা বলেন:

مَا یَفۡعَلُ اللّٰهُ بِعَذَابِکُمۡ اِنۡ شَکَرۡتُمۡ وَ اٰمَنۡتُمۡ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ شَاکِرًا عَلِیۡمًا ﴿۱۴۷﴾
যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমান আন তাহলে তোমাদেরকে আযাব দিয়ে আল্লাহ কী করবেন? আল্লাহ পুরস্কার দানকারী, সর্বজ্ঞ। [সুরা নিসাঃ ১৪৭]

আসলেই তো। মানুষকে আজাব দিয়ে আল্লাহ কী করবেন? তিনি তো ক্ষমা ও অনুগ্রহ করতেই ভালোবাসেন।

তা ছাড়া, আল্লাহ তাআলা পাপ সংঘটিত না হওয়ার জন্য পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাও করে রেখেছেন। এ জন্যই তিনি বলেন :

وَ لَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ کَانَ فَاحِشَۃً ؕ وَ سَآءَ سَبِیۡلًا ﴿۳۲﴾

আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ। [সুরা ইসরাঃ ৩২]

অর্থাৎ, জিনার অনেক অনুঘটক আছে, সেগুলোর কাছাকাছি যেয়ো না। আল্লাহ তাআলা বলেননি যে, তোমরা জিনা করো না। কেননা ইসলামের একটা মূলনীতি হল, সতর্কতা চিকিৎসার চেয়ে উত্তম।

এত সব সত্ত্বেও মানুষ যদি গুনাহ করে ফেলে, তখনও আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিতে প্রস্তুত। তিনি দিনের বেলা হাত প্রসারিত করে রাখেন রাতের পাপীদের ক্ষমাকরার জন্য, আর রাতের বেলা হাত প্রসারিত করে রাখেন দিনের পাপীদের ক্ষমা করার জন্য।

মানুষকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর জন্যই তিনি নিষিদ্ধ ক্ষেত্রে দৃষ্টিপাতের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। কারণ, দৃষ্টি যৌন আকাঙ্খাকে উসকে দেয়। দৃষ্টি সংযত করলে লজ্জাস্থানও সংযত থাকে। যে দৃষ্টিকে লাগামহীন ছেড়ে দেয়, সে নিজেকে ধ্বংসে নিপতিত করে।

Share.

My name is Mahazabin Sharmin Priya, and I am an author who studied Mathematics at the National University. I have a deep passion for writing in various genres, including Islam, technology, and mathematics. With my knowledge and expertise, I strive to provide insightful and engaging content to readers in these areas.

Leave A Reply

mostplay app

4rabet app

leonbet app

pin up casino

mostbet app

Exit mobile version