দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরিচ্যুত উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বলেছেন, তিনি অসহায়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়েই তিনি প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কমিশনের যত অভিযোগ আছে, তার সব ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারবেন এবং এ বিষয়ে সব নথিপত্র তাঁর কাছে আছে।আজ মঙ্গলবার বিকেলে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শরীফ উদ্দিন এ কথাগুলো বলেন।

একটি বিভাগীয় মামলার হাজিরা দিতে বেলা সাড়ে ১১টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আসেন শরীফ উদ্দিন। বেলা দুইটায় তিনি দুদক থেকে বের হন। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন দুদক থেকে সদস্য চাকরিচ্যুত উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। তবে এর দুই ঘণ্টা পর দুদক সচিব দাবি করেন, শরীফের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাগুলো স্থগিত করা হয়েছে।

দুদক কার্যালয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘নথি হস্তান্তরে দেরি করার অভিযোগ-সংক্রান্ত একটি বিভাগীয় মামলায় হাজিরা দিতে এসেছি। এ মামলার বিষয়বস্তু হলো আমি পটুয়াখালী বদলি হওয়ার পর নথি বুঝিয়ে দিতে দেরি করেছি কেন?’শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘আপনারা জানেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আমাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি আমি অপসারিত হওয়ার পরও বিভাগীয় মামলায় হাজিরা দিচ্ছি। এটা আইনের দৃষ্টিতে কতটুকু সাম্য আমি বলতে পারব না। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রত। আমার বিরুদ্ধে তিনটি বিভাগীয় মামলা চলমান।’

‘দুদক আমার কাছে জানতে চেয়েছে আমি নথি হস্তান্তর করতে দেরি করেছি কেন?’ জবাবে আমি বলছি, ‘এ মামলার তদন্তের দায়িত্বে আছেন উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান। আমি সশরীর হাজির হয়ে এ–সংক্রান্ত সব তথ্য-প্রমাণ তাঁর কাছে দিয়েছি।আমার কাছে অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর ১৩০টি নথিপত্র ছিল। এগুলো বুঝিয়ে দেওয়া সময়সাপেক্ষ ছিল। নির্দেশনা পাওয়ার পর আমি পাঁচ দিন ধরে নথিগুলো বুঝিয়ে দিই।’শরীফ উদ্দিন আবারও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। তাঁর দুর্নীতিবিরোধী মিশন-ভিশন বাস্তবায়ন করতে গিয়েই প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়েছি। দুদকের সহকর্মী, মিডিয়া সহকর্মী ও মানুষের দোয়ায় আমি গুম হওয়া থেকে রেহাই পেয়েছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজর। তিনি ন্যায়বিচারের প্রতীক। প্রধানমন্ত্রীর কারণে গুম হওয়া থেকে বেঁচে গেছি।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘আপনি আমার মা। মা, আমি অসহায়। আমি পরিবার-সন্তান নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। আমি দুই সপ্তাহ ধরে ঘুমাতে পারছি না। আমাকে সুযোগ দেওয়া হোক। কমিশনের যত অভিযোগ রয়েছে, আমি তার ব্যাখ্যা দিতে পারব। সব ডকুমেন্টস আমার কাছে আছে।’পরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

শরীফ উদ্দিন চাকরি ফেরত চেয়ে দুদকে আবেদন করেছেন, এ বিষয় দুদকের অবস্থান কী—এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব হোসেন বলেন, যে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, সে বিধিমালাতে বলা যে তিনি আবেদন করতে পারবেন এবং শরীফ উদ্দিন আমার কাছে একটি আবেদন দিয়েছেন। যেটি মাননীয় চেয়ারম্যান এবং কমিশন বরাবর। ওনার আবেদনটি এমন যে ওনাকে পুনর্বহাল করা হোক। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তথ্য-উপাত্তসহ কমিশন সভায় উপস্থাপন করব। চেয়ারম্যান ও কমিশনার মহোদয় আছেন, তাঁরা যেটি বিবেচনা করবেন বিধি মোতাবেক, সেটি তাঁরাই করবেন। এ বিষয় আমি অগ্রিম কিছু বলতে পারব না।’

চাকরিচ্যুত হওয়ার পরেও বিভাগীয় মামলা চলমান থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের সচিব বলেন, ‘দুদক (কর্মচারী) ২০০৮–এর চাকরি বিধিমালা রয়েছে, সে অনুযায়ী যদি কেউ চাকরি থেকে অপসারিত হন, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় কামলা চলতে পারে না এবং সে মোতাবেকই কমিশনের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে যে তিনটি বিভাগীয় মামলা ছিল, সেগুলো স্থগিত করা হয়েছে।’

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিনা নোটিশে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ করে দুদক। পরদিনই দুদকের কর্মকর্তারা এর প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। তাঁদের অভিযোগ, দুদকের (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা যে ৫৪ (২) ধারায় শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়, সেটি বৈষম্যমূলক ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে দুদক শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের জন্য ১৩টি অভিযোগ উত্থাপন করে। সেদিনই শরীফ উদ্দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব অভিযোগের জবাব দেন।

Share.

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Leave A Reply

mostplay app

4rabet app

leonbet app

pin up casino

mostbet app

Exit mobile version