শনিবার (১৯ জুন) সকালে জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯ এ একটি ফোন পেয়ে রাজধানীর কদমতলী এলাকার একটি বাসা থেকে এক দম্পতি ও তাদের এক মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনার পর দম্পতির বড় মেয়ে মেহেজাবিন ইসলাম মুনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ওই নারী ফোন করে পুলিশকে জানিয়েছিল তিনজনকে হত্যা করেছি, আপনারা দ্রুত আসেন, তা না হলে আরও দুইজনকে হত্যা করবো। পরে পুলিশ সেখানে তাড়াতাড়ি গিয়ে তিনজনের লাশ দেখতে পায়। পরিবারের সবার প্রতি ক্ষোভ থেকে সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
মুনের চাচাতো বোন শিলা ইসলাম বলেন, জায়গা সম্পত্তি নিয়েও পরিবারের সঙ্গে বিরোধ ছিল মেহজাবিনের। সম্পত্তি লিখে দেয়ার জন্য বাবা-মাকে অনেক চাপ দিত। এ নিয়ে এর আগে বৈঠক শালিস হয়েছে। শুক্রবার রাত ৮টার দিকেও ওই বাসায় অনেক চেঁচামেচি হয়েছে। রাত ১০টার পর ওই বাসা থেকে কোন শব্দ পাওয়া যায়নি। পরে সকালে পুলিশ আসার পর আমার হত্যাকান্ডের বিষয়টি বুঝতে পারি।
নিহতরা হলেন- গৃহকর্তা মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪২) ও মেয়ে জান্নাতুল (২০)। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাসুদের মেয়ে মেহজাবিনকে। এছাড়া ওই বাড়ি থেকে মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল ইসলাম (৪০) এবং তাদের ৪ বছর বয়সী শিশু সন্তানকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
কদমতলীর মুরাদপুর হাইস্কুলের পাশে লালমিয়া সরকার রোডের ২৮ নম্বর ছয় তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন মাসুদ রানা (৫০)। তার সঙ্গে স্ত্রী জোৎস্না ইসলাম মৌসুমী (৪২) ও ছোট মেয়ে জান্নাতুলের (২০) থাকতেন। বড় মেয়ে মুনের প্রথম বিয়ে হয় ২০১৪ সালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে। বিয়ের ৬ মাসের মাথায় তার স্বামী আমিন খুন হন। আমিন খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন মুন, তার মা মৌসুমী, ছোট বোন জান্নাতুল ও মুনের খালা শিউলি আক্তার। কারাগারেই জন্ম হয় তার মেয়ে তৃপ্তিয়ার।
কিছুদিন পরই সবাই জামিনে ছাড়া পেলেও মুনের জামিন হয়নি। প্রায় ৫ বছর জেল খাটার পর দেড় বছর আগে জামিনে মুক্ত হন মুন। এর কিছুদিনের মধ্যেই শফিকুল ইসলামের (৩০) সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামীর সঙ্গে কদমতলীর বাগানবাড়িতে থাকতেন। দীর্ঘ ২৫ বছরের প্রবাস জীবন শেষে গত ৫ মাস আগে দেশে ফেরেন মাসুদ রানা।
কদমতলী থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর গণমাধ্যমকে বলেন, সে (মেহজাবিন) কৌশলে বাসার সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পর সবাই অচেতন হয়ে যায়। এরপরই সকলের হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধে। পরে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। প্রাথমিক তদন্তে এটাই পুলিশ জানতে পেরেছে।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি শাহ ইফতেখার গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশ ফোন পাওয়ার পর দ্রুত ওই বাড়িতে যায়। সেখানে তিনজনের লাশ ও দুইজনকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। শফিকুল ও তার মেয়ে তৃপ্তিয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধের বিষক্রিয়ায় শিশু তৃপ্তিয়ার মুখমন্ডল সবুজ হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, শফিকুল ও তৃপ্তিয়া আশঙ্কামুক্ত। কী কারণে মুন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনটি হত্যাকাণ্ডের কারণে মুন অনেকটা ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছে। তাকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা মরদেহগুলো হাত পা বাঁধা অবস্থায় পেয়েছি।
ডিসি শাহ ইফতেখার আরও বলেন, মুনের সাথে কথা বলে প্রাথমিকভাবে যেটা জানতে পেরেছি, বাবা দেশে না থাকায় তার মা তাকে এবং তার ছোট বোনকে (নিহত জান্নাতুল) দিয়ে দেহ ব্যবসা করাত। এসব নিয়ে প্রতিবাদও করেছিল সে, কিন্তু কোনো ফল হয়নি। তার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ছোট বোনকে দিয়ে ব্যবসা চলছিল। এর মধ্যে তার স্বামী ছোট বোনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে।