দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এবং তার ভাই থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে। এর ভিত্তিতে দুদক চারজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলায় অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে।
বৃহস্পতিবার দুদকের বৈঠকে এ দুটি মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদন করা হয়। আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
দুদক সচিব বলেছেন, আসামি এনামুল হকের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তে ক্যাসিনো ব্যবসায়সহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ৪৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৭৮ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এনামুলের দুই সহযোগী হারুনুর রশিদ ও আবুল কালাম আজাদ প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহযোগিতা করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, রূপন ভূঁইয়ার নামে ৪২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮৭০ টাকার সম্পদ অধিগ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩৭ কোটি ৫৭ লাখ ১৬ হাজার ৯৮৭ টাকার সম্পদের কোনও বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। তদন্তে জানা গেছে যে রূপন ভূঁইয়া ক্যাসিনো ব্যবসা ও বিভিন্ন অবৈধ কার্যকলাপের মাধ্যমে সম্পত্তিটি অবৈধভাবে অধিগ্রহণ করেছিলেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ চৌধুরী এনামুল হক ও তার দুই সহযোগী হারুনুর রশীদ ও আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ২৩ শে অক্টোবর,২০১৯ এ সম্পত্তি অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি মামলা করেছেন। আবুল কালামের বন্ধু হিসাবে পরিচিত হারুন অর রশিদ এবং রাজধানীর ওয়ান্ডার্স ক্লাবের কর্মচারী এনামুল তাকে অবৈধ অর্থ উপার্জনে সহায়তা করেছিলেন। তাই তিনজনকে একটি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার সম্পত্তি অবৈধভাবে অধিগ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নিয়ামুল আহসান গাজী এনামুলের ভাই রূপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। রূপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর ১৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে। আয়ের কোন বৈধ উৎস তাঁর নেই। মামলার বাদী দুদকের দু’জন কর্মকর্তা তদন্ত করেছিলেন।
ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের অংশ হিসাবে, ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯, র্যাব তৎকালীন গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এবং তার ভাই রূপন ভূঁইয়ার বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখান থেকে অর্থ ও গহনা জব্দ করার পরে আবুল কালামের বন্ধু হিসাবে পরিচিত হারুন অর রশিদের ও ওয়ান্ডার্স ক্লাবের কর্মচারী এনামুলের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলাকালীন র্যাব মোট ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, ৪ কোটি টাকা মূল্যের ৭২০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করেছে।
অভিযান শেষে র্যাব জানিয়েছে, এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ারহোল্ডার। এনামুল ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকে ক্যাসিনো অর্থ এনে বাড়িতে রাখতেন। তবে বিপুল পরিমাণ অর্থ রাখার জায়গা ছিল না। তাই তিনি টাকা দিয়ে সোনার অলংকার কিনতেন।
এসময় দুদক ক্যাসিনো ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে অ-আয়ের সম্পদ অধিগ্রহণের অভিযোগে ২০ টিরও বেশি মামলা দায়ের করেছিল।