সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) গতকাল রোববার শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিন্দার ঝড় বইছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে ফেসবুকে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।সিলেটের শিল্পী ও সংগঠক অরূপ বাউল ‘রক্তাক্ত সাস্ট’ নামে একটি ই-পোস্টার তৈরি করে তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেন। পরে অসংখ্য মানুষ এটি শেয়ার দিয়েছেন। ই-পোস্টার পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘যে সমস্ত শিক্ষক ছাত্রদের শরীর থেকে রক্ত ঝরানোর নির্দেশ দেন, তাঁরা শিক্ষক নামের কলঙ্ক। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছি।’ প্রসঙ্গত, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে ইংরেজিতে সংক্ষেপে এসইউএসটি বা সাস্ট বলা হয়।
আরমান মুন্না নামের সিলেটের একজন একটি বিক্ষোভ মিছিলের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘শাবিপ্রবি রক্তাক্ত! রক্তে রক্তে আরও লাল হয়ে ওঠে বুকের কৃষ্ণচূড়া। অন্যায় রুখে দাও।’ সিলেটের সংস্কৃতিকর্মী মামুন পারভেজ ই-পোস্টার ‘রক্তাক্ত সাস্ট’ পোস্ট করে লিখেছেন, ‘শব্দবোমা দিয়ে কি কণ্ঠ রোধ করা যায়?’কবি ও প্রকাশক নাজমুল হক তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আলোচনা ছাড়া পুলিশ দিয়ে কোনো ছাত্র আন্দোলন থামানো যায়নি। এটাই ইতিহাস। সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’ সিলেটের প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও আবৃত্তিকার অম্বরীষ দত্ত তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শিক্ষার প্রাথমিক শর্ত ভব্য হয়ে ওঠা। এই সব অভব্যতা। সাস্ট ছাত্রীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। আন্দোলন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গতকাল সকালে ছাত্রীরা গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান রাস্তা ‘কিলো সড়ক’ অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাঁরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দেন।বেলা পৌনে তিনটার দিকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ তাঁর কার্যালয় থেকে বের হয়ে ডিনদের এক সভায় যাওয়ার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। তাঁর সঙ্গে থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাঁকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে আশ্রয় নেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ওই ভবনের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশ উপাচার্যকে মুক্ত করতে ভবনের ভেতরে ঢুকতে চাইলে আন্দোলনকারীরা বাধা দেন। তখন পুলিশ শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। পরে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেন। হল ছাড়তে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।