ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়নি, এমন মানুষ হয়তো কমই আছে। কিন্তু তাই বলে লাইসেন্সের জন্য হাজারবার চেষ্টা করেছেন, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার এক নারী ৯৬০ বারের চেষ্টায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছেন। খবরটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডিটে হইচই ফেলে দিয়েছে। এটিকে ওই নারীর দৃঢ়তার অনন্য উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনাটি ১৮ বছর আগের। তবে সম্প্রতি রেডিটে এই ঘটনা শেয়ার হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা হচ্ছে। চা সা-সুন নামের ওই নারী অধ্যবসায়ের জন্য ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে দুই ধাপে পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথম ধাপে লিখিত পরীক্ষা হয়। এতে উত্তীর্ণ হলে ব্যবহারিক পরীক্ষায় বসতে হয় প্রার্থীদের। নিয়ম অনুযায়ী, চা সা-সুন ২০০৫ সালে লিখিত পরীক্ষা দিতে বসেন। কিন্তু প্রথম দফায় ব্যর্থ হন। উত্তীর্ণ হতে এরপর সপ্তাহে ৫ দিন পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। কিন্তু এই দফায়ও অকৃতকার্য হন তিনি। বছর তিনেক এমন চলতে থাকে। একপর্যায়ে তাঁর উৎসাহে কিছুটা ভাটা দেখা দেয়। কিন্তু পুরোপুরি দমে যাননি। এরপর সপ্তাহে দুইবার পরীক্ষা দিতে থাকেন। ৮৬০ বার চেষ্টায় লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন সুন।
প্রথম ধাপ শেষে চূড়ান্ত পরীক্ষার পালা। এই ধাপে ব্যবহারিক পরীক্ষায় পাস করতে হবে সুনকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে দাঁড়ায় তাঁর জন্য। ব্যবহারিক পরীক্ষায় বসে সেঞ্চুরি করেন তিনি। অবশেষে ৯৬০ বারে ২০১০ সালে এসে ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তখন সুনের বয়স ৬৯। ৫ বছর ধরে লাইসেন্স পাওয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ১৪ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়ে যায় তাঁর।
ড্রাইভিং স্কুলটির তৎকালীন প্রশিক্ষক পার্ক সুইউন বলেন, ‘চা সুন যখন শেষ পর্যন্ত লাইসেন্স হাতে পান, তখন আমরা সবাই অত্যন্ত খুশি হয়েছিলাম। আনন্দে তাঁকে জড়িয়ে ধরে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। মনে হয়েছিল, মাথা থেকে ভারী কোনো বোঝা সরে গেছে। অব্যাহত প্রচেষ্টার কারণে তাঁকে পরীক্ষা দিতে নিষেধ করার মতো সাহস পাইনি আমরা।’
সুনের এই খবর ছড়িয়ে পড়লে জাতীয় তারকা বনে যান তিনি। বিখ্যাত গাড়ির ব্র্যান্ড হুন্দাই নতুন একটি গাড়ি উপহার দেয় তাকে।
তবে রেডিটে নতুন করে তাঁর এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার খবরে মিশ্র অনুভূতি প্রকাশ করেছেন অনেকেই। প্রশংসার পাশাপাশি কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন যে এত কিছুর পরও সুনকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া ঠিক হলো কি না।
একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ঘটনা যা-ই হোক না কেন, তাঁর এই নিষ্ঠাকে আমি সম্মান করি।’
আরেকজন লিখেছেন, ৯৫৯ বার ব্যর্থ হয়ে ৯৬০ গিয়ে সফল হয়েছেন। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, এই ঘটনায় তিনি কষ্ট পেয়েছেন। পড়াশোনায় সাহায্য করতে চা সা-সুন কি কারও সহযোগিতা পাননি, সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।