২৯ পয়েন্ট দিয়ে দেশে আসছে ইয়াবা

২৯ পয়েন্ট দিয়ে দেশে আসছে ইয়াবা

মিয়ানমার থেকে নাফ নদী হয়ে বান্দরবানের পাহাড়ি সীমান্ত দিয়ে পানির স্রোতের মতো মরণনেশা ইয়াবা দেশে আসছে। সড়ক ও নৌপথের ২৯টি পয়েন্ট দিয়ে এ মাদক সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রুপ এবং দেশের মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা ইয়াবা আনছে। ধরন অনুযায়ী টেকনাফে ৩৮ থেকে ৫০ টাকায় প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রি হলেও চট্টগ্রামে তা ১২০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।প্রতিবেদনে বলা হয়, গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় মিয়ানমারের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং দেশটির নিয়ন্ত্রণাধীন একটি গ্রুপের অধীনে কারখানাগুলোয় ইয়াবা তৈরি হচ্ছে। এসব গ্রুপ দেশটির বর্ডার গার্ড ফোর্সের সহায়তায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ব্যবহার করে ইয়াবা পাচার করছে।


সড়ক ও নৌপথের ২৯টি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা আসছে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, হ্নীলা, হোয়াক্যাং, উখিয়া বালুখালি, পালংখালী, রাজাপালং ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুমসহ বিস্তীর্ণ সীমান্ত পাচারের নিরাপদ রুট হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথেও ইয়াবার বড় বড় চালান পাচার হচ্ছে। মাছ ধরার ট্রলারে সাগর পাড়ি দিয়ে সিন্ডিকেটের সদস্যরা দেশে মাদক আনছে। টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ, মহেশখালী, কর্ণফুলী চ্যানেলে আনোয়ারা, গহিরা, বাঁশখালী, জলদি এবং চট্টগ্রামের পারকির চর, পতেঙ্গা, সন্দ্বীপ এবং সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা মাদকের পাচারের নৌরুট হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। এসব রুট দিয়ে আসা ইয়াবা চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক ও রেলপথের বিভিন্ন পরিবহণে করে কৌশলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচার হয়। বঙ্গোপসাগরের মোহনা (মেঘনা নদী) পাড়ি দিয়ে বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর, নোয়াখালীর হাতিয়া, লক্ষ্মীপুর মজু চৌধুরীর ঘাট, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, ষাটনল এবং নারায়ণগঞ্জ হয়ে রাজধানী ঢাকায় ইয়াবা পাচার হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নানান কৌশলে ইয়াবার চালান আনার পর মাদক সরবরাহকারীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। মিয়ানমারের পোস্ট অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনের (এমপিটি) সিম দিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় কথা বলা যায়। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এমপিটির রোমিং সুবিধা রয়েছে।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, ইয়াবা পাচারে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জেলেদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে। মাছ ধরার অজুহাতে মাদক কারবারিরা প্রথমে জেলেদের গভীর সমুদ্রে পাঠায়। এরপর সুযোগ বুঝে রাতে তারা শক্তিশালী লেজার লাইট সিগন্যাল ব্যবহার করে জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর জেলেদের কাছে মাদকের চালান হস্তান্তর করা হয়। এরপর সুকৌশলে মাদকের চালানটি ঘাটে দ্রুত কয়েক হাত বদল হয়ে মাদক কারবারিদের হাতে পৌঁছে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এক সময় চট্টগ্রামে প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রি হতো ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। বর্তমানে ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে তা পাওয়া যাচ্ছে। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় মাদকের দাম অর্ধেকে নেমেছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইয়াবা সেবনে আসক্তির হারও। ধরন অনুযায়ী টেকনাফে প্রতি পিস ইয়াবা ৩৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও চট্টগ্রামে তা ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপপরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকার যুগান্তরকে বলেন, ইয়াবা পাচারে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এতে টেকনাফ ও কক্সবাজার সীমান্ত এলাকার মাদক চোরাকারবারি এবং উখিয়া ও টেকনাফের একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত। সিন্ডিকেট সদস্যদের অনেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা শহরে অবস্থান করে ইয়াবা পাচার নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের শীর্ষ মাদক কারবারিরা সারা দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দরিদ্র নারী ও শিশুদের ইয়াবা পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার অনেক ব্যক্তি অর্থলগ্নি করে দূর থেকে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ইয়াবাসহ আটকদের অধিকাংশ বহনকারী (কারবারি নয়)। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ইয়াবা মজুত করারও অভিযোগ আছে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *