১৮ ঘণ্টায় গৃহহীন ৯২ পরিবার নদী ভাঙনে

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে নদী ভাঙনের কারণে মাত্র ১৮ ঘণ্টার মধ‌্যে গৃহহীন হয়েছে ৯২ পরিবার। দুর্গাপুর ইউনিয়নের ভৈরববাড়ি গ্রামে যমুনা নদীর ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব এখন এসব পরিবারের লোকজন। নদী ভাঙনের কারণে শতাধিক মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও শতাধিক ঘর বাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে।

রোববার (২৫ জুলাই) সকালে দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন এসব তথ‌্য নিশ্চিত করেছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যমুনার পানি কমতে থাকায় শুক্রবার (২৩ জুলাই) রাতে ও শনিবার (২৪ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত ভাঙন দেখা দেয় গ্রামটিতে। শুক্রবার রাতে ১৪টি বাড়ি নদী গর্ভে পুরোপুরি বিলিন হয়ে গেছে। ৭৮টি বাড়ি ভাঙন শুরু হওয়ার পর ঘরবাড়ি ভেঙে শনিবার (২৪ জুলাই) সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে একদিনে একটি গ্রামের এতোগুলো পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ায় হাহাকার শুরু হয়েছে গ্রামটিতে। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চাল ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিন ভৈরববাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বাড়িঘরের জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় জমা করে রেখেছেন। কেউ কেউ নিরাপদ স্থানে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। গ্রামটিতে যাওয়ার পথে দেখা যায় বেশ কিছু অংশ গাইড বাঁধ দেওয়া আছে। পার্শ্ববর্তী বেলটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও শতাধিক ঘর বাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে। গাইড বাঁধের পর আরও কিছু অংশে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে ভাঙন প্রতিরোধে।

হাসিবুল চৌধুরী নামে ক্ষতিগ্রস্ত একজন বলেন, ‘২৩ শতাংশের বাড়ির অর্ধেক যমুনায় চলে গেছে। আসবাবপত্র অন্যের বাড়িতে ও ঘরের বেড়া রাস্তায় রাখা হয়েছে। কোথায় থাকবো ও কোথায় গিয়ে বাড়ি করবো তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’

হালিমা খাতুন নামে একজন বলেন, ‘এই বসত ভিটায় আমার শ্বশুর ৯০ বছর বসবাস করে গেছেন। আমরাও প্রায় ৪০ বছর বাস করছি। সেই ২৫ শতাংশের বাড়িটিও চলে গেলো। এখন অন্যের বাসায় আছি। কোথায় থাকবো, কী করবো সেটা ভেবে পাচ্ছি না।’

ভৈরববাড়ি গ্রামের আব্দুল আজিজ প্রামাণিক বলেন, ‘একটি মুরগির খামার ও বসতবাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে। সব হারিয়ে এখন আমি অসহায়। আগামীতে কীভাবে চলবো তার ঠিক নেই।’

আব্দুল আজিজের প্রতিবেশী শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ করে ভিটেমাটি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। শুক্রবার বিকেলেও আমার সব ছিলো। শনিবার সকালেই সব হারিয়ে পথে বসেছি।’

জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি ভাঙন কবলিত ওই গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। নদীতে ঘরবাড়িসহ সবকিছু বিলিন হয়ে যাওয়া ১৪টি পরিবারকে তিনি পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা করেছেন। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ভাঙন কবলিত ওই গ্রামে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আমিনুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তিন বান্ডিল করে টিন ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য তালিকা করা হয়েছে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *