১২ ঘণ্টায়ও ফেরি পাচ্ছে না পণ্যবাহী গাড়ি দৌলতদিয়ায় যানজট

১২ ঘণ্টায়ও ফেরি পাচ্ছে না পণ্যবাহী গাড়ি দৌলতদিয়ায় যানজট

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় ঘাটে ফেরিস্বল্পতায় যানবাহনের চাপ কমছে না। আজ বৃহস্পতিবারও উভয় ঘাটে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার করে গাড়ির লাইন অব্যাহত গেছে। জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাস ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর ফেরির নাগাল পেলেও সাধারণ পণ্যের গাড়িকে অন্তত ১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাট ঘুরে দেখা যায়, লম্বা গাড়ির লাইন ফেরিঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ বাজার পদ্মার মোড় পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে অধিকাংশ পণ্যবাহী গাড়ি গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর আসা। এ ছাড়া আজ সকালে আসা জরুরি পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী দূরপাল্লার গাড়ি রয়েছে। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকায় বাসের যাত্রীরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। পণ্যবাহী ট্রাকের চালকেরাও বিরক্তি প্রকাশ করছেন।

দৌলতদিয়ার পাঁচটি ফেরিঘাটের মধ্যে ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট চালু রয়েছে। ৩ নম্বর ঘাট এর আগে চালু থাকলেও ঘাটের কাছে পানি কমে যাওয়ায় ঘাটটি অতিমাত্রায় উঁচু হয়ে পড়েছে। ফেরিতে যানবাহন ওঠানামা ব্যাহত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ গত সোমবার দিবাগত রাত থেকে বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া প্রতিটি ঘাটের কাছে সংযোগ সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। গাড়ির চাপ কমাতে কর্তৃপক্ষ যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে পণ্যবাহী বেশ কিছু গাড়ি টার্মিনালে ঢোকাতে শুরু করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে অধিকাংশ পণ্যবাহী গাড়ি গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর আসা। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকায় বাসের যাত্রীরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। পণ্যবাহী ট্রাকের চালকেরাও বিরক্তি প্রকাশ করছেন।


নড়াইল থেকে মাছের খাবার নিয়ে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে রওনা দেওয়া ট্রাকের চালক লিটন হোসেন বলেন, গতকাল রাত দুইটার দিকে ঘাট থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার পেছনে গোয়ালন্দ বাজার বাসস্ট্যান্ডে যানজটে আটকা পড়েন। ১০ ঘণ্টা পার হলেও এখন পর্যন্ত ফেরিঘাট সড়কে পৌঁছাতে পারেননি। তাঁর আশঙ্কা, ফেরিতে উঠতে আজ সন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে। যশোর নওয়াপাড়া থেকে পাটের সুতলি নিয়ে আসা ট্রাকের চালক তানজিব রহমান বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে বসে আছি। ফেরি ঠিকমতো চলে না। এতে করে আমাদের খাওয়াদাওয়ার কষ্ট, গোসলের কষ্ট, থাকার কষ্ট। এভাবে কত দিন চলবে?’

শরীয়তপুর থেকে আসা পণ্যবাহী গাড়ির চালক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, গতকাল রাত ১২টার দিকে ঘাট থেকে সাত কিলোমিটার পেছনে যানজটে আটকা পড়েন। ১২ ঘণ্টার বেশি হতে চলল এখনো ফেরিঘাটের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। তিনিও বলেন, ‘মনে হয় না বিকেলের আগে ফেরিতে উঠতে পারব।’ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় ২০টি ফেরি চললেও আজ ভোরে যান্ত্রিক ত্রুটিতে কে-টাইপ ফেরি ‘ঢাকা’ বিকল হয়ে পড়ে। ফেরিটি পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতিতে মেরামতের চেষ্টা চলছে। সম্ভব না হলে ডকইয়ার্ডে পাঠানোর প্রয়োজন হতে পারে। এ কারণে কিছুটা ফেরিস্বল্পতা রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি আরও জানায়, পাটুরিয়ার পাঁচটি ঘাটের মধ্যে চারটি ঘাট চালু রয়েছে। ৫ নম্বর ঘাটের আপার পকেটের সামনে নাব্যতা সমস্যা দূর করতে খননযন্ত্র বসানো হয়েছে। ৪ নম্বর ঘাটের ডাউন পকেট মেরামতের কাজ চলছে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে ৩ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে। পাশে ঘাট করার প্রস্তুতি চলছে। এদিকে যানবাহনের চাপ থাকায় স্থানীয় দালাল চক্রের সদস্যরা গাড়িচালকদের কাছ থেকে আগেভাগে টিকিট কেটে দেওয়ার কথা বলে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। খুলনা থেকে আসা পল্লী বিদ্যুতের মালবোঝাই একটি ট্রাকের চালক নূরে আলম বলেন, ‘স্থানীয় দালাল নুরু শেখ ১ হাজার ৪৬০ টাকার টিকিট আগে কেটে দেওয়ার কথা বলে ১ হাজার ৭০০ টাকা নেন। এর মধ্যে কাউন্টার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা রেখে দেন। বাকি ২০০ টাকা ওই দালাল নিয়ে যান। দালাল ছাড়া আমরা সহজে টিকিট কাটতে পারি না।’

ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক তারক পাল বলেন, ‘ফেরি ও ঘাটস্বল্পতার কারণে যানবাহনের চাপ পড়েছে। সপ্তাহের প্রতি বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পণ্যবাহী গাড়ির চাপ থাকে বেশি। যানবাহনের লাইন গোয়ালন্দ বাজার পর্যন্ত হওয়ায় শুধুমাত্র জরুরি গাড়ি সড়কে রেখে সাধারণ পণ্যের গাড়ি টেনে টার্মিনালে ঢুকিয়ে দিচ্ছি।’ বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সাত্তার বলেন, ঘাটের সংখ্যা বাড়াতে পাটুরিয়া প্রান্তে কাজ চলছে। দৌলতদিয়া প্রান্তেও বন্ধ থাকা ৩ নম্বর ঘাটটি চালু হতে দুই-তিন দিন লাগতে পারে। ঘাট ও ফেরিস্বল্পতায় পাটুরিয়া প্রান্তে ৭০০ থেকে ৮০০ পণ্যবাহী গাড়ির চাপ রয়েছে। দৌলতদিয়া প্রান্তেও সমপরিমাণ যানবাহনের চাপ রয়েছে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *