হাতের কনুইয়ে হালকা টোকা দিলে বৈদ্যুতিক শকের মতো লাগে কেন ?

হাতের কনুইয়ে হালকা টোকা দিলে বৈদ্যুতিক শকের মতো লাগে কেন ?হাতের কনুইয়ে হালকা টোকা দিলে বৈদ্যুতিক শকের মতো লাগে কেন ?

ছেলেবেলায় কোনো বন্ধুর হাতের কনুইয়ে টোকা দিয়ে ‘বৈদ্যুতিক শক খাওয়ানোর’ মধুর স্মৃতি কার না আছে! আপনি নিজেও হয়তো এমন শক খেয়েছেন। আর নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, শরীরের আর কোথাও টোকা দিলে এমন তীব্র ব্যথা ও ঝিমঝিমানির মিশেলে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয় না। কনুইয়ের যে জায়গায় টোকা দিলে বা আঘাত পেলে এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়, সে জায়গার নাম ‘ফানি বোন’। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন হালকা আঘাতেই এমন তীব্র ব্যথা ও ঝিমঝিমানি অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাই আমরা? উত্তর জেনে নেওয়ার আগে বলা ভালো, ‘ফানি বোন’ আদতে কোনো বোন বা হাড় নয়, এটি একটি স্নায়ু বা নার্ভ।

ব্যাপারটা স্পষ্ট করে বোঝার জন্য মানুষের অঙ্গব্যবচ্ছেদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশের দিকে নজর দেওয়া যাক। বৈজ্ঞানিকভাবে ফানি বোনের নাম ‘আলনার নার্ভ’ এবং এটি হাতের প্রধান তিনটি স্নায়ুর একটি। এটি ঘাড় থেকে শুরু হয়ে হাতের একদম শেষ প্রান্ত বা আঙুলের ডগা পর্যন্ত বিস্তৃত। আমাদের হাতের বাহুতে একটি লম্বা হাড় থাকে, যার নাম ‘আলনা’। এই হাড়ের নিচের অংশ নিয়ে (যেদিকে হাতের কনিষ্ঠ আঙুল থাকে) স্নায়ুটি কবজি পর্যন্ত বিস্তৃত। আর এই স্নায়ুর মাধ্যমে আমাদের আঙুলের ডগার কিছু তথ্য মস্তিস্কে প্রবাহিত হয়। এটি হাতের কিছু চলাচল নিয়ন্ত্রণও করে। ফানি বোনের অবস্থান মূলত আমাদের ত্বকের পৃষ্ঠের কাছাকাছি।

দীর্ঘ এই স্নায়ু অধিকাংশ স্থানেই হাড়, পেশি ও চর্বি দিয়ে সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু যখন কনুইয়ের নিচ দিয়ে হাতের নিচের অংশে নামে, তখন এটিকে খুব সরু এক পথ অবলম্বন করতে হয়। এই পথের নাম ‘কিউবিটাল টানেল’।

টানেলটি পার হওয়ার সময় যেখানে হাতের রেডিয়াস ও আলনা নামের দুটি হাড় মিলিত হয়েছে, সেখানে স্নায়ুটির একপাশ কনুইয়ের হাড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং অন্যপাশেই থাকে আমাদের ত্বক। তার মানে স্নায়ুটির ওপরপৃষ্ঠে সুরক্ষা দেওয়ার মতো তেমন কিছুই নেই, আছে শুধু ত্বক। তাই এই স্থানেই স্নায়ুটি সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় থাকে।

কেন এত স্পর্শকাতর?

যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের অর্থোপেডিক এবং রিউমাটোলজিক ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডমিনিক কিং বলেন, ‘স্নায়ুটি যখন এই টানেল পার হয়, তখনই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। যখন স্নায়ুটিতে আঘাত লাগে এবং অন্যপাশে শক্ত কিছুর (কনুইয়ের হাড়) সঙ্গে ধাক্কা খায়, তখন এটি সংকুচিত হয়ে যায়।’

এই সংকুচিত হয়ে যাওয়াকে বলে ‘আলনার নার্ভ এনট্র্যাপমেন্ট’। ডমিনিক কিং বলেন, ‘আমাদের শরীরের যেকোনো অনভূতি আমরা স্নায়ুর মাধ্যমে বুঝতে পারি। দীর্ঘ আলনার নার্ভটির অবস্থান আমাদের ত্বকের একদম কাছাকাছি। তাই এখানে আঘাত পেলে অনেকটা বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার মতো অনুভূতির জন্ম দেয়।’

আলনার নার্ভে আঘাত পেলে হাতের বড় কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন। তবে এখানে সামান্য আঘাতেও তীব্র ব্যথা যিনি সহ্য করেছেন, তিনি হয়তো এই স্নায়ুকে সবসময় সুরক্ষিতই রাখতে চাইবেন।

স্নায়ুর নাম ফানি বোন কেন?

প্রশ্ন উঠতে পারে, ‘জিনিস’টা যদি স্নায়ুই হয়ে থাকে, তাহলে নাম ‘ফানি বোন’ হলো কীভাবে? একেবারে নিশ্চিত করে কিছু বলার জো নেই। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হচ্ছে—আমাদের কাঁধ থেকে কনুই পর্যন্ত যে লম্বা হাড় আছে, সেটির নাম Humerus (হিউমেরাস), যেটি শুনতে অনেকটা Humorous–এর মতো শোনায়, যার অর্থ ‘হাস্যকর’। যেহেতু আলনার নার্ভের উৎপত্তিস্থলও একই, তাই এটির এমন নামকরণ করা হয়ে থাকতে পারে।

আরেকটি ব্যাখ্যা হচ্ছে—যেহেতু আলনার নার্ভে হালকা আঘাতেও মানুষ তীব্র ব্যথার বহিঃপ্রকাশ করে, তাই ব্যাপারটা কিছুটা হাস্যকরও বটে। এর থেকেই স্নায়ুটির এমন নামকরণ হতে পারে। তবে নামের উৎস যা–ই হোক, বিচিত্র অভিজ্ঞতার উৎস হিসেবে এর জুড়ি নেই!

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *