হাজারো মানুষের স্বস্তি -একটি কাঠের সেতু

হাজারো মানুষের স্বস্তি -একটি কাঠের সেতু হাজারো মানুষের স্বস্তি -একটি কাঠের সেতু

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় আমলাভাঙা খালের ওপর একসময় বাঁশের সাঁকো ছিল। সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাজির হাওলা ও কাছিয়াবুনিয়া গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া আমলাভাঙা খালের ওপর এই সাঁকো ছিল দুই গ্রামের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু নড়বড়ে এই সাঁকো দিয়ে খাল পারাপার করতে হতো ঝুঁকি নিয়ে। এখানে সেতু নির্মাণের জন্য সরকারি কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছিলেন গ্রামবাসী। কিন্তু সাড়া মেলেনি। অবশেষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাশ্রমে এখানে ৩০০ ফুট দীর্ঘ একটি কাঠে সেতু নির্মাণ করে ফেলেছেন তাঁরা।

রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ইউনিয়নের দক্ষিণ কাজির হাওলা ও কাছিয়াবুনিয়া গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে আমলাভাঙা খাল। খালের উত্তর পাড়ে দক্ষিণ কাজির হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আর দক্ষিণ পাড়ে রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদ, রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, রাঙ্গাবালী হামিদিয়া রশিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজ, কাছিয়াবুনিয়া মাধ্যমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

দুই গ্রামের মানুষের যোগাযোগ সহজ করতে ২০০৮ সালে এলাকাবাসী আমলাভাঙা খালের প্রথম একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। এর পর থেকে বাঁশের এই সরু সাঁকোই ছিল দুই গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসী মিলেই মেরামত করে সাঁকোটি ওপর দিয়ে চলাচলের উপযোগী করে রাখছিলেন। পুরোনো সাঁকো পার হতে গিয়ে মানুষের পানিতে পড়ে ভিজে যাওয়ার অনেক ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে নারী ও বয়স্কদের এই নড়বড়ে সাঁকো পার হওয়া বেশ কষ্টকর ছিল।

শুধু এই দুই গ্রামই নয়, এই সাঁকো দিয়ে দক্ষিণ কাজির হাওলা, উত্তর কাজিরহাওলা, গন্ডাদুলা, নিজ হাওলা, উনিশ নম্বর ও কাছিয়াবুনিয়া গ্রামের অন্তত দুই হাজার মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতেন। সাঁকো দিয়ে পারাপারে ঝুঁকি থাকায় এলাকাবাসী সরকারিভাবে একটি সেতু নির্মাণের দাবি তোলেন। এলজিইডি কার্যালয়ে আবেদন করলেও সেখানে কোনো সেতু নির্মাণ করা হয়নি।

দেড় মাস আগে নড়বড়ে সাঁকোটি খালে হেলে পড়ে গেলে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজের প্রভাষক নাজমুল মাসুদ ও দক্ষিণ কাজির হাওলা গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ মোল্লা গ্রামবাসীকে সম্পৃক্ত করে বাঁশের সাঁকোর স্থলে একটি কাঠের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। পরে তাঁরা স্বেচ্ছাশ্রমে ৩০০ ফুট দীর্ঘ এবং ২ ফুট প্রস্থের একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে ফেলেন।

চলতি মাসের প্রথম দিকে সেতু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর এখন এই সেতু দিয়ে চলাচল শুরু হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, গাছের গুঁড়ি পুঁতে তার ওপরে কাঠের পাটাতন বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেতুর রেলিং দেওয়া হয়েছে বাঁশ দিয়ে।

প্রভাষক নাজমুল মাসুদ বলেন, ‘বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাই কাঠের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা শুনে গ্রামবাসী এগিয়ে আসেন। প্রথমে সরকারি দপ্তরে অনেক যোগাযোগ করা হয়েছে। শুধু আশ্বাস পেয়েছি আমরা, সেতু পাইনি। এ অবস্থায় গ্রামের লোকজন একত্র হয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করলে তিনি সহায়তা করেছেন। কাঠের সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রকল্পের মাধ্যমে ৯০ হাজার ও ব্যক্তিগতভাবেও সহায়তা করেছেন। এক মাস সময় লেগেছে সেতুটি নির্মাণে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহির আহম্মেদ বলেন, বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। গ্রামবাসী নিজেদের উদ্যোগে সেতু নির্মাণ করতে চাইলে চলতি অর্থবছরে উপজেলা পরিষদ থেকে তাঁদের দুই ধাপে ৯০ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও অর্থের জোগান দেওয়া হয়েছে একটি কাঠের সেতু নির্মাণের জন্য। সেখানে সরকারিভাবে যাতে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করা হবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাঙ্গাবালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুল কবির বলেন, আমলাভাঙা খালের ওপর একটি লোহার সেতু নির্মাণে পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে সাঁকোর স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে। লোহার সেতুর জন্য প্রকল্প তৈরি করে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *