স্বশরীরে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৃত মানুষ

মাছের কাঁটা গলায় আটকে প্রাণ গেল গৃহবধূর দিনাজপুর

দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ, নির্বাচন অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন একজন মৃত মানুষ। একজন সুস্থ সবল মানুষ যা যা করেন সবই করছেন তিনি। মৃত থেকে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করার প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। স্বামীর অবসরভাতা বেশ কয়েকবছর যাবত তুলতে পারলেও হঠাৎ করে ভোটার তালিকায় মৃত হওয়ায় ব্যাংক কতৃপক্ষ ভাতা প্রদান বন্ধ রাখে। বর্তমানে নিদারুন দারিদ্রতা নিয়ে জীবন ধারণ করছেনতিনি।

উপজেলার ভূমি অফিসের ৪র্থ শ্রেণির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের বাসিন্দা মৃত ফজির উদ্দিনের স্ত্রী সহিদা বেগম। বাস্তবে জীবিত থাকলেও ভোটার তালিকায় তিনি মৃত। ভোটার তালিকায় মৃত হওয়ায় স্বামীর অবসরভাতা উত্তোলনসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এমনকি ভোট দিতেও পারছেন না তিনি।

কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবিত ও মৃত’ ছোটগল্পের বিখ্যাত উক্তি এটি। সৌভাগ্যবশত প্রত্যেকে কাদম্বিনীর মতো অভাগী নন, কাজেই জীবিতাবস্থার প্রমাণ দেওয়ার জন্য জীবন ত্যাগের চুড়ান্ত পদক্ষেপ না করলেও চলে যায় নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে এখন ঘুরছেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের দ্বারে দ্বারে।

জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচন অফিসে ছয়মাস ধরে ধর্ণা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি সহিদা বেগমের। তিনি বলেন,আমি জানতাম না ভোটার তালিকা থেকে আমার নাম কর্তন করা হয়েছে। স্বামীর অবসরভাতা তুলতে ব্যাংকে গিয়ে শুনি যে, আমার নাম ভোটার তালিকা থেকে কেটে দেয়া হয়েছে। আমি নাকি মৃত। আমি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছি। আমাকে কেন মৃত হিসেবে ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তন করা হলো তার বিচার চাই। কে আমাকে মেরে ফেলেছে, এ বিষয়ে তদন্ত করা হোক।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ আমাকে ছয়মাস ধরে হয়রানি করেছে। ভোটার তালিকায় পুনরায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করেছি। এখনও ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বারবার যোগাযোগ করে এখন পর্যন্ত কাজ না হওয়ায় আমি হতাশ হয়ে পড়েছি। নির্বাচন অফিস থেকে ভাতার বই নিয়ে ঢাকায় গিয়ে তদবির করতে বলেছে। প্রচন্ড আর্থিক কষ্ট ও করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকায় গিয়ে তদবির করা অসম্ভব। এদিকে অর্থাভাবে অনাহারে বিনা চিকিৎসায় নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছি।

এ বিষয়ে স্থানীয় আব্দুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মোঃ ময়েন উদ্দিন শাহ বলেন, ওই মহিলার নাম ভোটার তালিকায় ভূলবশত কর্তন করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে জীবিত ও সুস্থ্য আছেন। তিনি ওই মহিলাকে জীবিত থাকার একটি প্রত্যায়নপত্র দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আবদুল মালেক এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, গত ২০ জানুয়ারী/২১ ভোটার তালিকায় ওই মহিলার নাম পুনরায় অন্তভূক্ত করার জন্য ঢাকা আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক বরাবরে পত্র দেয়া হয়েছে। এখনও কোন রিপ্লাই আসেনি।
অপরদিকে সহিদা বেগম ভোটার তালিকায় নাম পুনরায় অন্তভূক্ত করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *