সোনার দোকান তাঁরা ডাকাতি করেন

রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশে সোনার দোকান ডাকাতিতে ৫০ জনের একটি চক্র সক্রিয়। গত ২২ বছরে তাঁরা অন্তত ৫০টি সোনার দোকানে ডাকাতি করেছেন। একটি ডাকাতি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এসব তথ্য পেয়েছে।

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, লুট করা স্বর্ণালংকার ডাকাতেরা পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে সোনার দোকানে বিক্রি করেন। ৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ঢাকার আশুলিয়া থানার বংশী নদীর পাড়ে অবস্থিত নয়ারহাট বাজারে ১৭টি সোনার দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়। ওই ঘটনায় করা ডাকাতির মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।

সিআইডি সূত্র জানায়, তদন্তের একপর্যায়ে সিআইডি ১০ ডাকাতকে শনাক্ত করে। তাঁদের রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ডাকাতদের মধ্যে আছেন আনোয়ার হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, মিন্টু হোসেন, আবদুর রহিম, সবুজ ও শাহীন। তাঁরা আদালতের নির্দেশে পাঁচ দিনের রিমান্ডে আছেন।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতেরা সিআইডিকে বলেছেন, নয়ারহাট বাজারের ডাকাতিতে তাঁরা অংশ নেন। বংশী নদী দিয়ে দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে তাঁদের চক্রের সদস্যরা বাজারের দায়িত্বে থাকা চারজন নিরাপত্তারক্ষীকে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন। এরপর ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বাজার ও আশপাশে থাকা রিকশাচালক, পথচারী, ব্যবসায়ীসহ ১৫-২০ জনকে জিম্মি করে বাজারের মুদিদোকান মাজিদ স্টোরে হাত-মুখ বেঁধে আটকে রাখেন। পরে তাঁরা এক এক করে বাজারের ১৭টি সোনার দোকান থেকে ৭১ ভরি সোনা, ৮৫০ ভরি রুপা, নগদ অর্থসহ এক কোটি টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এসব তাঁরা পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের দুটি দোকানে বিক্রি করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা সিআইডিকে আরও জানান, লুট করা স্বর্ণালংকার তাঁরা পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে দুটি দোকানে মাত্র ২৯ লাখ টাকায় বিক্রি করেন।
সিআইডি কর্মকর্তারা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত চক্রের সদস্যরা সিআইডিকে বলেছেন তাঁদের চক্রের নেতা আবদুর সোবহান। ২২ বছর আগে তিনি ডাকাতি চক্র গড়ে তোলেন। এখন চক্রের সদস্যসংখ্যা অন্তত ৫০ জন। তাঁদের একেকজন অন্তত ৩ থেকে ২৫টি পর্যন্ত সোনার দোকানে ডাকাতি করেছেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি তাঁদের চক্রের ২০ সদস্য ধানমন্ডির রাপা প্লাজায় ডাকাতি করে দেড় কোটি টাকা মূল্যমানের ২০০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করেন। ওই স্বর্ণালংকার তাঁতীবাজারের দুটি সোনার দোকানে মাত্র ৩২ লাখ টাকায় বিক্রি করেন।

ডাকাতেরা নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, বরিশালের টর্কিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় সোনার দোকান ডাকাতি করার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানায় পুলিশ। তাঁতীবাজারের দুটি সোনার দোকানের নাম উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, ডাকাতির সোনা তাদের কাছে বিক্রি করার জন্য ডাকাতদের অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখা হতো।

মামলার তত্ত্বাবধানকারী কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মো. ইমাম হোসেন বলেন, সোবহানের নেতৃত্বে গড়া ডাকাত চক্রের সদস্যরা সারা দেশে সোনার দোকানে ডাকাতি করে আসছেন। তাঁদের একেকজনের বিরুদ্ধে তিন থেকে ২২টি পর্যন্ত ডাকাতির মামলা রয়েছে। সোবহানসহ বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তিনি বলেন, তাঁতীবাজারে নাম আসা সোনার দোকানের মালিকদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Comment