সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহঃ এর আব্বা আম্মার সেই তামান্না!

সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহঃ এর আব্বা আম্মার সেই তামান্না!
.
নাজমুদ্দীন আইয়ুব (রহ.), সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর (রা.) বাবা। তার হাতে তিকরিতের শাসনভারের গুরুদায়িত্ব। কিন্তু বিয়ের বয়েস পেরিয়ে যাচ্ছে, তবুও বিয়ের নাম-গন্ধ নেই। এটা দেখে ভাই আসাদুদ্দীন শিরকুহ চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
.
— কিরে বিয়েটা করবে না?

— মনমতো পাত্রী পাচ্ছি না তো ।

— আমি পাত্রী দেখবো তোমার জন্যে?

— পাত্রীটা কে হবে শুনি?

— মালিক শাহের মেয়ে অথবা নিযামুল মুলকের মেয়ে?

— নাহ, তারা আমার কাঙ্খিত পাত্রী নয় ।

— তোমার কাঙ্খিত পাত্রীর বৈশিষ্ট্য কী বলো তো শুনি।
.
আমি চাই একজন সুশীলা স্ত্রী, যে আমার হাত ধরে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। আমাকে একটি নেক সন্তান উপহার দিবে। সে সন্তানকে যথাযথ লালন-পালন করে বড় করবে। বড় হয়ে সে ছেলে হবে একজন দুর্দান্ত ঘোড়সওয়ার, সাহসী মুজাহিদ। আরও বড় হয়ে যে মুসলমানদের জন্যে বায়তুল মুকাদ্দাস ফিরিয়ে আনবে।
.
দুই ভাইয়ে যখন কথা হচ্ছিল তখন তারা ছিলেন তিকরিতে। জেরুসালেম থেকে অনেক অনেক দূরে। বায়তুল মুকাদ্দাস ছিল ক্রুশেডারদের হাতে। কিন্তু নাজমুদ্দীনের তনুমন পড়ে ছিল আল আকসার পানে। এমনকি বিয়েটা পর্যন্ত স্বপ্নের জড়িয়ে ফেলেছিলেন। আসাদুদ্দীন ভাইয়ের কথায় আশ্বস্ত হতে পারলেন না।
.
— তুমি যেমন কনের আশায় বসে আছো, ইহজীবনে তেমনটা পাবে কিনা আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে রে!

যে ইখলাসের সাথে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যে কোনো নিয়ত করে, আল্লাহ তাকে তা দিয়ে দেন।
.
উক্ত ঘটনার কয়েক দিন পর, নাজমুদ্দীন তিকরিতেরই এক শায়খের মজলিসে বসে আছেন। কথা বলছেন। এমন সময় এক যুবতী এসে পর্দার আড়াল থেকে শায়খকে সালাম দিল। শায়খ সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তোমার জন্যে যে পাত্রটা পাঠিয়েছিলাম, তাকে ফিরিয়ে দিলে কেন? সে কম কিসে?
.
— আপনার পাঠানো পাত্র জ্ঞানে-গরিমায় কোনো অংশেই ফেলনা নয়। রূপে-গুণে পদে-অর্থেও বাছার মতো নয়।

— তাহলে ফিরিয়ে দিলে যে?

— শায়খ! এই পাত্রের মধ্যে আমার কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য নেই।

— কেমন পাত্র চাও?
.
আমি চাই এমন নেককার পাত্র, যে আমার হাত ধরে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। যে আমাকে একটি নেক সন্তান উপহার দিবে। সে সন্তানকে যথাযথ লালন-পালন করে বড় করবে। বড় হয়ে সে ছেলে হবে একজন দুর্দান্ত ঘোড়সওয়ার, সাহসী মুজাহিদ। আরও বড় হয়ে যে মুসলমানদের জন্যে বায়তুল মুকাদ্দাস ফিরিয়ে আনবে।
.
নাজমুদ্দীন অবাক হয়ে দুজনের কথোপকথন শুনছিলেন। মেয়েটার শেষ কথা শুনে তিনি একেবারে বাকহারা হয়ে গেলেন। দুজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের মনের কথা এমন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় কী করে? ভাবনার অতলে হারিয়ে গেলেন। হঠাৎ করে সম্বিত ফিরে পেয়েই বলে উঠলেন, ‘শায়খ! আমি এই পুণ্যবতী মানুষটাকে বিয়ে করতে চাই।’
.
— নাহ, তা কী করে সম্ভব! এই মেয়ে আমাদের মহল্লার সবচেয়ে গরীব ঘরের সন্তান। আর তুমি হলে আমাদের ওয়ালী!
.
নাজমুদ্দীন শায়খকে সব কথা খুলে বললেন। শায়খ সব শুনে অজান্তেই একটা আয়াত তিলাওয়াত করলেন,

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا

‘আর তাঁর (আল্লাহর) অন্যতম একটা নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্যে, তোমাদের থেকেই স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন । যেন তোমরা তাদের কাছে প্রশাস্তি লাভ করতে পারো।’
( সূরা রূমঃ ২১ )

.
দুজন মহৎপ্রাণ যুবক-যুবতীর বিয়ে হয়ে গেল। তাদের ইখলাস ও নিয়্যাতের বরকতে আল্লাহ তাদেরকে দান করলেন একটি অনন্য উপহার! অপূর্ব এক সন্তান।
সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর।
.
– মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ

By মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া

My name is Mahazabin Sharmin Priya, and I am an author who studied Mathematics at the National University. I have a deep passion for writing in various genres, including Islam, technology, and mathematics. With my knowledge and expertise, I strive to provide insightful and engaging content to readers in these areas.

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *