সিলেটে প্লাবিত পানি নামছে, বাড়ছে রোগব্যাধি

সিলেটের পানি যাবে কোথায়

সিলেটে বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। যেখানে কোমরসমান পানি ছিল, সেখানে এখন হাঁটুসমান পানি। কোথাও আবার রাস্তাঘাট ভেসে উঠেছে। বাড়িঘর থেকেও সরেছে পানি। তবে জেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল এখনো প্লাবিত আছে। নগরের বিভিন্ন এলাকায় জমে থাকা পানিতে নর্দমার পানিও মিশে থাকায় কালো রং ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ঘর থেকে পানি নামলেও বাড়ির বাইরে পানি রয়ে গেছে। ফলে বন্যার ভোগান্তি এখনো শেষ হয়নি।

বন্যাকবলিত লোকজন জানিয়েছেন, প্লাবিত এলাকায় পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে চলছে। বিশেষ করে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ ও ডায়রিয়ায় মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ সরকারিভাবে কোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা তাঁরা পাচ্ছেন না।

 

নগরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা কবীর উদ্দিন (৪৪) বলেন, বাসার ভেতর থেকে পানি নেমে গেছে। তবে বাসার সামনেই ময়লা-আবর্জনাযুক্ত কালো কুচকুচে পানি রয়ে গেছে। এসব পানি মাড়িয়েই কাজে যেতে হয়। সারাক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে পানি থেকে। জমে থাকা পানিতে মশাসহ নানা কীটপতঙ্গ জন্ম নিচ্ছে।

সিলেট সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পানি নেমে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখা পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছে। সেই সঙ্গে মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ছাতক, দোয়ারাবাজার—এই দুই উপজেলা আক্রান্ত ছিল বেশি। এসব উপজেলায় অনেক পানি কমেছে। নতুন করে দু-একটি উপজেলায় পানি বাড়লেও সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

কানাইঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি প্রথম আলোকে বলেন, পানি কমতে শুরু করেছে। পানিবাহিত রোগে যেন লোকজন আক্রান্ত না হন, সে জন্য সচেতন থাকতে বলা হচ্ছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট নিরসনে এরই মধ্যে তাঁর উপজেলায় ৮৫ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি, ফিল্টার, পানির জার বিতরণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন এস এম শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট জেলা ও নগরের বন্যাকবলিত এলাকায় ১৪০টি চিকিৎসা দলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অন্তত ১১ হাজার বানভাসি মানুষকে নানা ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পানিবাহিত রোগ এড়াতে পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি বিতরণও করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার নতুন করে ৪৩ জন ডায়রিয়ায়, ২ জন শ্বাসকষ্টে এবং ৩ জন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত জেলায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন ৫৩ জন।

 

এদিকে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা অপরিবর্তিত আছে। তবে নতুন করে জেলার নিচু এলাকা হিসেবে পরিচিত জগন্নাথপুরসহ তিনটি উপজেলায় পানি বাড়ছে। এসব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় ও প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলায় জেলার প্রায় ৩০০ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ আছে। অভিভাবকেরাই শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। জেলার ছাতক উপজেলার সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশে থাকা কৈতক ২০ শয্যার হাসপাতাল ভবন ও সামনের রাস্তা থেকে বন্যার পানি নেমেছে। গতকাল সকালে দেখা গেছে, সেখানে স্বাভাবিক সেবা কার্যক্রম চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে গত দুই দিন ভারী বৃষ্টি হয়নি। উজানের পাহাড়ি ঢল নেমেছে কম। এতে সুরমা নদীর পানি কমছে। তবে জেলায় উজানের পানি নামায় নিচু এলাকা জগন্নাথপুর, দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় পানি বাড়ছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ছাতক, দোয়ারাবাজার—এই দুই উপজেলা আক্রান্ত ছিল বেশি। এসব উপজেলায় অনেক পানি কমেছে। নতুন করে দু-একটি উপজেলায় পানি বাড়লেও সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *