শরীফকে চাকরিচ্যুতির কারণ পাবলিকলি বলতে চান না দুদক সচিব

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির কারণ পাবলিকলি বলতে রাজি হননি এর সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

ওই চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে সারা দেশের ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে দুদক সচিবকে। এ ছাড়া এর প্রতিবাদে মানববন্ধনও করেছেন দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

পরে বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের ফটকে ব্রিফিং করতে এসে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতর বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সচিব মো. মাহবুব হোসেন। 

শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির জানতে চাইলে দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আপনারা জানেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের যে আইন রয়েছে এবং দুর্নীতি দমন কর্মচারী চাকরিবিধি ২০০৮ রয়েছে। সে অনুযায়ী দুর্নীতি দমন কমিশনের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। গতকাল (বুধবার) যেটি হয়েছে, শরীফ উদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী বিধি অনুযায়ী যে বিধিবিধানাবলি মানা প্রয়োজন, সেগুলো না মেনে অব্যাহতভাবে এই বিধির পরিপন্থী কাজ করে যাচ্ছিলেন। যার কারণে কমিশন মনে করেছে, কমিশনের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করেছেন। এটি কোনো ব্যক্তির বিষয় নয়।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো বললাম, দুর্নীতি দমন কমিশনের যে আইন এবং দুর্নীতি দমন কর্মচারী চাকরিবিধি ২০০৮ অনুযায়ী আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কী করবেন, কীভাবে তাদের কার্যক্রম চালাবেন, সেগুলো সুন্দরভাবে বর্ণনা করা আছে। কিন্তু উনি (শরীফ উদ্দিন) এই বিধিবিধানের বাইরে গিয়ে অনেক কাজ করেছেন। যেটি আমি এখানে পাবলিকলি (প্রকাশ্যে) বলতে চাই না। ফলে কমিশন মনে করেছে যে দুদকের ভাবমূর্তির রক্ষার্থে, সবার স্বার্থে ৫৪(২) ধারাটি এখানে প্রযোজ্য হয়েছে। তার মানে এই নয় যে এই ৫৪(২) ধারার প্রয়োগ আমরা সব জায়গায় করব। এটি একেবারে শেষ, একেবারে চরম পর্যায়ে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেটিরই একটি অংশ।

মাহবুব হোসেন বলেন, পাবলিকলি সব বলা ঠিক হবে না। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চালু ছিল এবং তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আসছিল, অনেকগুলো এসেছে। আপনারা জানেন যে উনি বদলির বিষয়ে, যে তদন্তকালে যে টাকা উদ্ধার হয়েছিল, সে বিষয়ে যে কার্যক্রম করেছিলেন, সে বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট থেকেও অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছিল। মানে সবকিছু মিলিয়ে চাকরিবিধি পরিপন্থীর কারণে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থাটা নেওয়া হয়েছে।

দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অযৌক্তিক বা আইনবিরুদ্ধভাবে মানববন্ধন করেছেন কি না জানতে চাইলে এ সচিব বলেন, আমি বলেছি যে দুর্নীতি দমন কমিশনের যে আইন এবং দুর্নীতি দমন কর্মচারী চাকরিবিধি পরিপন্থী কাজ করার জন্য এ পদক্ষেপটা নেয়া হয়েছে। উনি কী কী সমস্যা করেছেন, একেবারে পাবলিকলি এখানে বলতে চাই না। কিন্তু আমরা আইন মেনেই কাজটি করেছি। কমিশন সর্বসম্মতভাবে মনে করেছেন যে চাকরিবিধি পরিপন্থী কাজ যিনি করেছেন এবং অব্যাহতভাবে করছেন। ওনার জন্য অপসারণ ব্যতিরেকে আর কোনো উপায় ছিল না।

যারা মানববন্ধন করেছেন, তারা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেছেন, যে বিধিতে [৫৪(২)] চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, সেই বিধিটা উচ্চ আদালত কর্তৃক এখনো বিচারাধীন।

এ বিষয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, আমি আবারও বলি, আমরা বিধি মেনেই কাজ করেছি। এখন মানববন্ধন কে করেছে, সেটি আমার সামনে ঘটেনি। এখন উনারা কয়েকজন আমার কাছে সকালে এসেছিলেন। তারা চাচ্ছেন যাতে আদেশটি পুনর্বিবেচনা করা হয় এবং তারা বলেছেন যে তারা কাজকর্ম করতে একটু সেকি ফিল করছেন। আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি যে দুদক আইন ও চাকরি বিধিমালা অনুসরণ করে আপনারা যদি ন্যায়সংগতভাবে, সততা রক্ষা করে কাজ করেন তাহলে কারও কোনো ভয়ের কিছু নেই।

৫৪(২) ধারা শুধু দুদকের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাদের ব্যাপারে প্রযোজ্য হবে, দুদকের অন্যান্য বিভাগে (প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও তথ্য ক্যাডার) তাদের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ হবে না। এটা বৈষম্য কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বেলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এবং কর্মচারী চাকরি বিধিমালা অনেক আগে থেকে চলে আসছে। এই বিধিতে স্পষ্টভাবে বলা আছে কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যদি ওই পর্যায়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো উপলক্ষ বা ঘটনা ঘটে থাকে। আর অন্য জুডিশিয়াল ক্যাডার বলেন বা প্রশাসন ক্যাডার বলেন, তারা এখানে যে কাজ করছেন, তারা যদি কোনো অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে সেটা থেকে তাদের পরিত্রাণের উপায় নেই। দুদক আইন বা চাকরিবিধি তাদের বেলায় প্রযোজ্য হবে না, কিন্তু তাদের জন্য সরকারি কর্মচারী আইন রয়েছে। এখানে কেউ অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে তাদের বিরুদ্ধে সেই আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনের চোখে সবাই সমান।

শরীফকে নিয়ে অনেক দিন আলোচনা হচ্ছিল যে চট্টগ্রামে ও কক্সবাজারে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে শরীফের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। তিন জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধেও শরীফ মামলার সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন কমিশনে। তিনি সেটার বলি হলেন কি না? এ প্রশ্নের জবাবে মাহবুব হোসেন বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের অধীনে যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে এখানে এমন কোনো আশঙ্কা নেই, এমন কোনো উপলক্ষ নেই, এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি যে এই তদন্ত করার কারণে বা একে লক্ষ্য করার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে বিষয়টি ঘটেছে তার সঙ্গে তদন্ত বা সম্পৃক্ততা নেই। এবং শরীফের বিরুদ্ধে তিন বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। আরো সাত থেকে ১০টি অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। এবং উনি কী করেছেন, সে বিষয়গুলো বিগত পেপারগুলো দেখলে আপনারা দেখতে পাবেন। মহামান্য হাইকোর্ট থেকেও একবার আমি এখানে আসার আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম যে ভুয়া হাইকোর্টের আদেশে এ রকম কিছু করার বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। কাজেই এখানে লাইন বাই লাইন আমি বলতে পারব না। বাট তার জন্য যেটি প্রয়োজন, সেটি কমিশন বিধি মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যারা মানববন্ধন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, এখানে মানববন্ধন বলেন, কর্মবিরতি বলেন, এ রকম তথ্য আমি এখন পর্যন্ত পাইনি। আমি সকাল থেকে অফিসে রয়েছি। যদি এমন তথ্য পাওয়া যায়, তখন অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেব।

শরীফের বিরুদ্ধে তিনটি বিভাগীয় মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কমিশন কেন অপেক্ষা করল না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তখন অপেক্ষা করব, যখন কমিশন মনে করে, একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কারণে অব্যাহতভাবে আমাদের নিয়মসংগত কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে, তখন তারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এ জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু উনি অনেক সুযোগ পেয়েছেন, এবং উনাকে অনেকবার ডাকা হয়েছে এবং পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ বিধিবদ্ধভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

শরীফের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের সত্যতা দুদক পেয়েছে কি না জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য, প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষের মনে বিরূপ ধারণা দেওয়ার জন্য যত কাজ করা যায়, উনি একটাও বাকি রাখেননি। কাজেই এখানে আর বেশি কথা বলার প্রয়োজন নেই।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *