রোজা শুরুর আগে আবার দাম বাড়ল

প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসের আগে নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে—এটিই যেন নিয়ম। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। সারা দিন রোজা রাখার পর যাঁরা ইফতারে লেবুর শরবত পান করতে পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য দুঃসংবাদ আছে। রোজা শুরুর আগেই লেবুর দাম বেড়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগেও যে লেবু প্রতি হালি বিক্রি করা হতো ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে তা বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় আরও রয়েছে বেগুন, শসা, ধনেপাতা, পেঁয়াজ ও চিনি। এর সবই মূলত ইফতারি তৈরির উপাদান। আর সাহ্‌রিতে যাঁরা মুরগির মাংস খেতে পছন্দ করেন, তাঁদেরও আগের চেয়ে বেশি ব্যয় করতে হবে। এমনিতেই মাস দুয়েক ধরে বাজারে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে নতুন করে কিছু পণ্যের দাম আবার বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। এবার যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে, তার মূল কারণ মাহে রমজানের আগে হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়া।

অবশ্য কয়েক দিন ধরে মন্ত্রীরা বলছেন, সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। রোজায় নিত্যপণ্যের দাম নতুন করে আর বাড়বে না। যদিও বাজারে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের প্রতিফলন কম। অন্যদিকে টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে মানুষের ভিড় বাড়ছে।

প্রায় সব বাসাতেই রমজান মাসে ইফতারে বেগুনি থাকে। প্রতিবার রোজায় বেগুনের দাম বেড়ে যায়। ‘নিয়ম মেনে’ এবারও এই সবজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট কাঁচাবাজারে এক কেজি লম্বা বেগুন বিক্রি হয়েছে মানভেদে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। অথচ এক সপ্তাহ আগেও একই মানের বেগুন ওই বাজারেই বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে শসা বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ধনেপাতার দাম বিক্রেতারা গতকাল নিয়েছেন ৭০ টাকা। আর কেজিতে ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে দেশি পেঁয়াজ (প্রতি কেজি ৩৫ টাকা)।

পেঁয়াজের সরবরাহে ঘাটতি নেই

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট কাঁচাবাজার ও মিরপুর ১১ নম্বর সেকশন কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে বেগুন, শসা ও পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। রোজাকে কেন্দ্র করে ক্রেতারা এসব পণ্য বেশি পরিমাণে কিনছেন। এর প্রভাবে দাম বেড়েছে। আর লেবু ও ধনেপাতার সরবরাহ আগের চেয়ে একটু কমেছে। দাম বাড়ার কারণ, রোজার আগে এই দুই পণ্যের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে।উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী রোববার বা সোমবার পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে পারে। রোজার আগেই কিছু পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, সরবরাহ কম-বেশি হওয়ার কারণে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়তে পারে। বাজার নিয়ন্ত্রণে দিনরাত কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

কিনলে কেনেন, না কিনলে নাই

রোজার জন্য কিছু পণ্য কিনতে গতকাল দুপুরে কৃষি মার্কেট কাঁচাবাজারে যান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আজাদ আহমেদ। তিনি থাকেন কৃষি মার্কেটের কাছেই মোহাম্মদপুর শেখেরটেক ১ নম্বর এলাকায়। তাঁর সঙ্গে কথা হয় বাজারে। তিনি বললেন, এক সপ্তাহ আগে এক কেজি শসা কিনেছিলেন ৭০ টাকায়। এখন দামই চাচ্ছে ১০০ টাকা। দরদাম করতে গেলেই বিক্রেতারা বলছেন, ‘কিনলে কেনেন, না কিনলে নাই। কিন্তু এর চেয়ে কম দামে বেচা যাবে না।’সবজির পাশাপাশি খোলা চিনির দামও কেজিতে ৪ টাকা বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হতো ৮০ টাকায়। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট বাজারের ‘মা মসলা’ দোকানের মালিক মোখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে ১ বস্তা (৫০ কেজি) চিনি কিনেছিলেন ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। গতকাল একই বস্তা কিনেছেন ৩ হাজার ৬৮০ টাকায় (পাইকারি দর)।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সোনালিকা (কক) মুরগি ও গরু মাংসের দাম আরেক দফা বেড়েছে। গতকাল মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের একটি দোকানে সোনালিকা মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও এই বাজারে সোনালিকা ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আর গরুর মাংসের দাম ছিল প্রতি কেজি ৬২০ টাকা। গতকাল ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের মাংস বিক্রেতা বাবুল আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, রোজাকে কেন্দ্র করে হাটে প্রতিটি গরুর দাম আগের তুলনায় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা বেড়েছে। যে কারণে বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

কিছুটা স্বস্তির খবর হচ্ছে, সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজারে আসতে শুরু করেছে। তবে এখনো সব দোকানে নতুন দরের ১ লিটার ও ২ লিটার তেলের বোতল পাওয়া যাচ্ছে না। বেশির ভাগ দোকানে বিক্রি হচ্ছে শুধু ৫ লিটার তেলের বোতল। প্রতি লিটার বোতলজাত তেলের দাম ১৬০ টাকা এবং ৫ লিটারের দাম ৭৬০ টাকা বেঁধে দিয়েছে সরকার।বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানির পরিবেশকদের কাছে ছোট বোতল (১ লিটার ও ২ লিটার) পাওয়া যাচ্ছে না।

১ লিটার ও ২ লিটারের যে তেলের বোতল দোকানে পাওয়া যাচ্ছে, সেসব বোতলের গায়ে আগের দাম লেখা রয়েছে। বিক্রিও হচ্ছে আগের দামে। ১ লিটারের দাম ১৬৮ টাকা, ২ লিটারের দাম ৩৩৫ টাকা। ফলে সীমিত আয়ের মানুষকে এখনো বেশি দাম দিয়েই (১ ও ২ লিটার বোতলের ক্ষেত্রে) তেল কিনতে হচ্ছে।প্রতিবছর রোজার সময় নির্ধারিত কিছু খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রোজার সময় সরবরাহের বিপরীতে চাহিদা বেড়ে যাওয়াতেই মূল্যবৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে ভোক্তার অধিকার রক্ষায় যেসব আইন আছে, সেগুলো প্রয়োগ করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা দারিদ্র্যসীমার নিচে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর মাধ্যমে সরকার পণ্যের বরাদ্দ আরও বাড়াতে পারে। একই সঙ্গে সুষ্ঠু বিতরণব্যবস্থাও গড়ে তোলা প্রয়োজন। এটি করা গেলে বাজারের ওপার চাপ ও চাহিদা কমবে, তখন দামও কমে আসবে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *