রাশিয়ার হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ফিনল্যান্ডের

ফিনল্যান্ড সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগদানের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। আজ রোববার তারা এ আগ্রহ প্রকাশ করে। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের আগ্রহ দেখিয়েছে ফিনল্যান্ডের প্রতিবেশী দেশ সুইডেনও। এ জন্য সুইডেনের সরকারি দল এক বৈঠক ডেকেছে। বৈঠক থেকে ফিনল্যান্ডের সঙ্গে যৌথভাবে ন্যাটোতে যোগদানের আবেদনের একটা উপায় বেরিয়ে আসতে পারে। খবর এএফপির

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে ফিনল্যান্ডের এ সিদ্ধান্ত এল। ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত দেশটির জন্য একেবারেই বিপরীতমুখী। কারণ, ৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে তারা সামরিকভাবে নিরপেক্ষ থাকার নীতিতে অটল ছিল।

সুইডেনও দুই শতকের বেশি সময় ধরে সামরিকভাবে নিরপেক্ষ থাকার নীতি মেনে চলেছে। তারাও ফিনল্যান্ডের পথেই হাঁটতে চাইছে। সোমবার তাদের ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

রোববার ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো সাংবাদিকদের বলেন, আজ (রোববার) প্রেসিডেন্ট এবং সরকারের বৈদেশিক নীতি কমিটি যৌথভাবে পার্লামেন্টে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিনল্যান্ড ন্যাটো সদস্যপদের জন্য আবেদন করবে। এটা এক ঐতিহাসিক দিন, নতুন যুগের সূচনা।

নিরপেক্ষতার নীতি বদলে ফেলে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় যুক্তরাজ্যসহ ন্যাটোর অনেক সদস্যদেশ সবুজ সংকেত দিয়েছে। তবে ইউরোপের দেশ দুটির ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার উদ্যোগে আপত্তি জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

শুক্রবার ইস্তাম্বুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চল সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অতিথিশালা। এ পরিস্থিতিতে আমরা তাদের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা সমর্থন করতে পারি না।’

ক্রোয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ন্যাটোর উপসচিব জর্ডান জার্লিক রডম্যান বলেছেন, দুই ইউরোপিয়ান দেশের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে কথা বলতে তিনি বার্লিন পৌঁছেছেন। তিনি নিশ্চিত করেন ন্যাটো দেশগুলোর মধ্যে আলোচনায় তুরস্কের উদ্বেগ গুরুত্ব পাবে।

ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মার্টিন বলেন, ‘আমরা আশা করি, পার্লামেন্ট ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করবে। শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

শনিবার মার্টিনের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে ইতিবাচক মনোভাব দেখায়। এরপর ফিনল্যান্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপিরা তাঁকে সমর্থন করেন। মার্টিন বলেন, ‘আশা করি, আগামী সপ্তাহে সুইডেনের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা আবেদন করতে পারব।’

দুই নোর্ডিক দেশই শীতল যুদ্ধের পর তাদের কঠোর নিরপেক্ষতার নীতি ভেঙে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়। ১৯৯০-এর দশকে ন্যাটোর সহযোগী হয় এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে দৃঢ় করে।

কিন্তু ন্যাটোর পূর্ণ সদস্যপদের ধারণা নিয়ে এসব দেশের তেমন কোনো মাথাব্যথা ছিল না। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পক্ষে জনগণের এবং রাজনৈতিক সমর্থন বেড়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত আছে। অন্যদিকে বাল্টিক সাগরে ন্যাটোর বাইরে থাকা একমাত্র দেশ সুইডেন।

শনিবার ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধান তাঁর রাশিয়ান প্রতিপক্ষ ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করে তাঁর দেশের ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছার কথা জানান। পরে ক্রেমলিন বিবৃতিতে জানায়, পুতিন ফিনল্যান্ডের এই ইচ্ছাকে ‘ভুল’ এবং ‘ফিনল্যান্ডের নিরাপত্তার প্রতি কোনো হুমকি নেই’ বলেও অভিহিত করেছেন।

এদিকে সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, ন্যাটোতে যোগদানে আগ্রহী ফিনল্যান্ডের মানুষের সংখ্যা তিন-চতুর্থাংশ বেড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের আগের জরিপের চেয়ে যা প্রায় তিন গুণ।

সুইডেনেরও একই অবস্থা। হঠাৎ ন্যাটোতে যোগদানের পক্ষে সমর্থন নাটকীয়ভাবে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। দেশটির ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের বড় অংশ এর মধ্যেই ন্যাটোতে যোগদানের পক্ষে সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছে।

যদিও দলের অনেক রাজনীতিবিদই ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে রক্ষণশীল। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন না যে দলটি পশ্চিমা সামরিক জোটে যোগদানের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে যাবে।

সুইডিশ ডিফেন্স রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নিরাপত্তা গবেষক রবার্ট ডালসজো এএফপিকে বলেন, সুইডেনের নেতারা বুঝতে পেরেছেন, তাঁদের অন্য কোনো বিকল্প নেই।
ন্যাটো সদস্যপদ পেতে এর ৩০ সদস্যের সবার অনুমোদন প্রয়োজন। সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড দাবি করেছে, তারা প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বিরোধিতার পর আঙ্কারা থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছে।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলিত সাভাসগলু বলেছেন, ন্যাটো দেশ হিসেবে তিনি সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেক্কা হাভেস্তো বলেছেন, তুরস্কের অনুমোদন পাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী।

 

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *