যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কার দাসত্ব করছেন?

ছোটোবেলায় দেখেছি আম্মুরা লং কামিজ পরতেন। এরপর একটা সময় দেখলাম শর্ট কামিজের চল শুরু হলো। ঢাকার আধুনিক ফ্যামিলিগুলোতে সবাই তখন শর্ট কামিজ পরা শুরু করলো। লং কামিজ পরাটা আস্তে আস্তে ব্যাকডেটেড হয়ে গেলো। বয়স্ক ছাড়া কেউ পরতো না। এরপর ঘুরেফিরে অনেক রকম স্টাইল এসেছে৷ অনেক স্টাইল পুরোনো হয়েছে। এখনকার কিছু ফ্যাশন হাউজের পোশাক দেখে বুঝলাম, আবারও ১৫-২০ বছর আগের সেই লং কামিজের চল চলছে। মানে ঘুরেফিরে একই জিনিস। সেই সময় যেটা ছিল “পুরোনো” আর “ব্যাকডেটেড”, এখন নতুন করে সেটাই হয়ে গেলো “ফ্যাশনেবল” আর “ট্রেন্ডি”। এটাই হলো আমাদের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি।

এই ফ্যাশন ইন্ড্রাস্টির কাজটা কী জানেন? একটা ট্রেন্ড তুলে দেয়া। ইন্ডাস্ট্রিতে এক এক সময় এক একটা স্টাইলকে ফ্যাশনেবল হিসেবে উপস্থাপন করা হবে, সেটা বাদে আর সবকিছুই তখন ফালতু, হাস্যকর আর ব্যাকডেটেড। ওরা যা বোঝাবে, সেটাই আপনাকে বুঝতে হবে। যেভাবে চালাবে, সেভাবেই আপনাকে চলতে হবে। আপনি সিম্পলি ওদের হাতের পুতুল। ওরা আপনাকে অদৃশ্য সুতোয় ধরে নাচাবে। আপনি যদি তাল মেলাতে পারেন বাহবা পাবেন, যদি না পারেন, তাহলে তকমা জুটবে- আপনি আনস্মার্ট, আনকালচারাল। কীভাবে ওরা মানুষের মগজকে দখল করে একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, ওরা বোঝাতে চাচ্ছে ওড়না ছাড়া থাকা মানেই আধুনিক এবং সুন্দর। তখন আপনি দেখবেন, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন সবখানেই মূল চরিত্রের মেয়েটির গায়ে ওড়না নেই। সাহসী এবং সৎ দেখানো হচ্ছে, যে চরিত্রটিকে সেই মেয়েটির গায়ে ওড়না নেই। বিপ্লবী মেয়েটির গায়ে ওড়না নেই। মানুষ সবসময় নিজেকে পজিটিভ এবং শক্তিশালী চরিত্রে ভাবতে পছন্দ করে। একটা বই পড়ার সময় খেয়াল করবেন, অটোমেটিক আপনি নিজেকে মূল-চরিত্রের একজন ‘হিরো’ হিসেবে কল্পনা করছেন। ভিলেইন বা কাপুরুষ হিসেবে কিন্তু কেউ নিজেকে চিন্তা করে না। এভাবেই নায়িকা এবং মূল চরিত্রের নারীদেরকে বিশেষ একটা স্টাইলে দেখানোর মাধ্যমে ওরা আমাদের মগজে স্লো-পয়জনিং এর মতো ঢুকিয়ে দেয় যে, তাদের মতো চলতে পারার অর্থই সুন্দর। সেটা হতে পারে, ওড়না ছাড়া চলা, কিংবা স্লিভলেস ব্লাউজ পরা, কিংবা চোখে কালোর বদলে নীল কাজল দেয়া ইত্যাদি।

মূল কথা হলো, আপনি যদি একই কামিজ পাঁচ বছর পরেন, একই মেইক-আপ আইটেম কয়েক বছর ব্যবহার করেন, তাহলে তো অনেক ব্যবসাই লাটে উঠবে। তাই বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিয়ান ও ব্যবসায়ীরা মানুষের ভেতর একটা হাহাকার তৈরি করে। একটা মেকি প্রয়োজন সৃষ্টি করে। নিত্যনতুন বিজ্ঞাপন এবং জনপ্রিয় মডেলদেরকে সেভাবেই বারবার উপস্থাপনের মাধ্যমে মানুষকে বিশ্বাস করিয়ে ছাড়ে যে এই জিনিসটাই সুন্দর, এই জিনিসটাই আপনার দরকার। এখনকার ট্রেন্ড বাদে আগের সবকিছুই ফালতু, খ্যাত, পচা। কাজেই আপনি যখন ট্রেন্ডি জামাকাপড় পরবেন না, মানুষ আপনার দিকে আড়চোখে তাকাবে৷ আপনার পোশাক দেখে হাসবে। আপনাকে গোঁড়া, খ্যাত, আনস্মার্ট মনে করবে। অন্যদিকে আপনি যখনই ট্রেন্ডি কাপড়চোপড় আর মেইক-আপে নিজেকে সাজিয়ে তুলবেন, তখন দেখবেন সবাই আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছে! অর্থাৎ মানুষ অলরেডি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিগুলোর খেলার পুতুলে পরিণত হয়েছে। আপনি দেখতে কেমন, আসলেই কতটা রুচিশীল পোশাক পরছেন এইটা ম্যাটার করে না। ম্যাটার করে খালি– ওরা আপনার পোশাককে রুচিশীল হিসেবে দেখাতে চায় কিনা সেটা।

চিন্তা করে দেখুন তো কোনটা বেটার? দুইদিনের এই ট্রেন্ড ফলো করে মানুষের অনুসরণ করা নাকি, তাদের কথামতো দুইদিন পর পর নতুন নতুন স্টাইলের পিছে ছোটা? নাকি এমন সৃষ্টিকর্তার আদেশ মেনে চলা, যিনি দুদিন পর পর মেকি চাহিদা সৃষ্টি করেন না। আল্লাহর নিয়মে সবসময়ের জন্য এক পোশাক। হিজাব। হিজাব কখনও পুরোনো হয় না। দুই বছর পর আউট অফ ফ্যাশন হয়ে যায় না। হিজাব চৌদ্দশ বছর আগেও যা ছিল, এখনও তাই আছে। আমাদের প্রিয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী এবং মেয়েরা যে হিজাব করতেন, এখনও লাখো মুসলিমাহ সেই একই হিজাবই পালন করে। মানুষের দাসত্বের চাইতে কি এটাই ভালো না, যে আমরা রবের দাসত্ব করি?

 

©AT

Leave a Comment