মোস্তাফিজের হোটেলবন্দী ঈদ

মোস্তাফিজের হোটেলবন্দী ঈদমোস্তাফিজের হোটেলবন্দী ঈদ

মুম্বাইয়ের তাজমহল প্যালেস থেকে আরব সাগরের এক টুকরা ছবি স্পষ্ট দেখা যায়। ছোট ছোট নৌকা, জাহাজের আসা–যাওয়া, সূর্যের অস্ত ও উদয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে যে কেউই মন্ত্রমুগ্ধ হবে। জানালা দিয়ে উঁকি দিলে গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া ও আশপাশের ব্যস্ত মুম্বাইয়ের ছবিও চোখে পড়বে। মুম্বাইয়ে এলে গেট অব ইন্ডিয়া ঘুরে না গেলে হয় নাকি! ভারতের এই ঐতিহ্যবাহী ইমারত দেখতে দর্শনার্থীর ভিড় সব সময় লেগেই থাকে। তাজমহল প্যালেসের জৈব সুরক্ষাবলয় থেকে এসব দৃশ্য দেখে অবসর সময় কাটছে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের।

বাংলাদেশ দলের এই বাঁহাতি পেসারের আইপিএল দল দিল্লি ক্যাপিটালস তাঁবু গেড়েছে মুম্বাইয়ের এই তাজমহল প্যালেসে। করোনার কড়াকড়ির কারণে কঠিন জৈব সুরক্ষাবলয়ে থাকতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। করোনাকালের ক্রিকেটের এই রীতি মোস্তাফিজের জন্য মোটেও উপভোগ্য নয়। ইটকাঠময় শহরে মেপে মেপে চলাফেরা গ্রামীণ জীবনে অভ্যস্ত মোস্তাফিজের এমনিতেই তেমন পছন্দ না। তার ওপর জৈব সুরক্ষাবলয়ের বন্দিদশা তো দুর্বিষহ এক অভিজ্ঞতা। পেশাদার ক্রিকেটার বলেই গত দুই বছর এই অদৃশ্য বলয়ের বন্দিদশা মেনে জীবন কাটছে এই ক্রিকেটারের। এবারের রোজার ঈদও ব্যতিক্রম নয়। তাই তাজমহল প্যালেসের জানালায় মুম্বাইয়ের মানুষের ঈদ আনন্দ দেখেই হয়তো এবার কাটবে ‘সাতক্ষীরের ছেলে’ মোস্তাফিজের ঈদ।

মোস্তাফিজের এই অভিজ্ঞতা অবশ্য নতুন নয়। গত রোজার ঈদও তিনি কাটিয়েছেন হোটেলে। ভারত থেকে আইপিএল খেলে দেশে ফেরায় তাঁকে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করতে হয়েছিল ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে। ঈদের সময়টা দেশে থেকেও পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়নি এই ক্রিকেটারের। ঈদের দিনটা তাঁকে কাটাতে হয়েছে রুমে বন্দী হয়ে। তবে কঠিন সময়ে মোস্তাফিজের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী সামিয়া পারভীন। এবার আইপিএলে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে যাননি মোস্তাফিজ। অবশ্য এবারের ঈদের আগে সামিয়ার ভারত যাওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার বিধিনিষেধে শেষ পর্যন্ত সেটি হবে কি না, নিশ্চিত নয়।

মোস্তাফিজ যেখানে, করোনাও যেন সেখানে! এবারের আইপিএলে একমাত্র মোস্তাফিজের দল দিল্লি ক্যাপিটালসেরই তিন ক্রিকেটার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যে কারণে দিল্লির জৈব সুরক্ষাবলয়ে আরও স্বাস্থ্যবিধি আরোপ করা হয়েছে। দিল্লির ম্যাচগুলোর ভেন্যুও গেছে বদলে। ক্রিকেটারদের চলাফেরার যতটুকু স্বাধীনতা ছিল, সেটিও এখন সীমিত। এর মধ্যেই ক্রিকেট খেলতে হচ্ছে মোস্তাফিজদের। সেটিও প্রতিপক্ষ দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক, করমর্দন, সৌজন্যতা বিনিময় ছাড়াই।

বদলে যাওয়া ক্রিকেট দুনিয়ার এই দিকটা মোস্তাফিজের একদমই পছন্দ নয়। স্বাধীনতাপিপাসু মোস্তাফিজ খেলা না থাকলে ঢাকায় খুব একটা থাকেন না। সুযোগ পেলেই ছুটে যান সাতক্ষীরায় নিজের গ্রামের বাড়িতে। আর ঈদের ছুটি হলে তো কথাই নেই। সাতক্ষীরায় নিজের প্রিয় জগতেই খুব ভালো থাকেন জাতীয় দলের এই বাঁহাতি পেসার। সেখানেই তিনি খুঁজে পান তাঁর আসল সত্তা।

গত বছর সাক্ষাৎকারে মোস্তাফিজ বলেছিলেন, ‘গ্রামে স্বাধীনভাবে নিশ্বাস নেওয়া যায়। এখানে চলে-ফিরে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। ধরুন, লুঙ্গি পরেই এক জায়গায় রওনা দিয়েছি। কোনো ঝুটঝামেলা নেই, হইচই নেই। একেবারে নিরিবিলি থাকা যায়। গ্রামে যেভাবে চলতে পারি, ঢাকা শহরে সেটা সম্ভব নয়। সব জায়গায় হইচই। গ্রামের মানুষেরা ছোটবেলা থেকে আমাকে দেখছে। ইচ্ছেমতো ঘোরাফেরা করতে কোনো সমস্যা নেই।’

গ্রামে সাধারণত ঘের-বিলের দিকেই ঘুরতে-ফিরতে পছন্দ করেন মোস্তাফিজ। নৌকা নিয়ে ঘুরতে বেশ উপভোগ করেন তিনি। আগে থেকেই মাছ ধরায় বেশ পারদর্শী এই ক্রিকেটার। জাল দিয়ে নিয়মিতই মাছ ধরতেন একসময়। তবে অ্যালার্জির সমস্যার কারণে আগের মতো এখন আর জাল দিয়ে মাছ ধরা হয় না। কিন্তু নিজের মুঠোফোনভর্তি মাছের ছবিই বলে দেয় মাছ মোস্তাফিজের কত প্রিয়। গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে বাইক চালানোও তাঁর আরেকটি নেশা। আবার নতুন করে কবুতর পালার শখ জেগেছে মোস্তাফিজের। বাড়িতে দুই শতাধিক কবুতরও আছে তাঁর। অবসরে সেগুলোর পেছনেই সময় তিনি দেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততা মোস্তাফিজকে এই গ্রামীণ জীবন থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।

এবার যেমন আইপিএল খেলে দেশে ফিরলেই বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেতে হবে প্রায় এক মাসের সফরে। এরপর জিম্বাবুয়ে সফর। এরপর এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের ব্যস্ততা শুরু। এবারের রোজার ঈদের মতো কোরবানির ঈদও হয়তো কোনো পাঁচ তারকা হোটেলের কক্ষে কাটবে মোস্তাফিজের। তারকা ক্রিকেটার হতে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে মোস্তাফিজকে। সেই ক্রিকেটই আবার অনেক কিছু কেড়েও নিচ্ছে!

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *