মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি

মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি কথাটি শুনতেই কেমন যেন অস্বস্তিকর মনে হয়। তবে বাস্তব হলেও সত্য যে, এক গবেষণায় দেখা গেছে এক-তৃতীয়াংশ মহিলা তাদের জীবনে যে কোন সময় এই সমস্যায় ভোগেন। মেয়ে হিসাবে, আমাদের প্রতিদিন অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। ঘর থেকে শুরু করে সবদিক থেকেই শরীর নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। তারমধ্যে এই যৌনাঙ্গে চুলকানি কিন্তু খুবই বিব্রতকর সমস্যা ।

মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি

মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানির অপর নাম ভ্যাজাইনাল ইস্ট ইনফেকশন। এটি একটি খুব সাধারণ রোগ। আমরা মেয়েরা সাধারনত যৌনাঙ্গে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাই না । তবে ৫ থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত সব মেয়েদের এই সমস্যাটি হতে পারে।  তাই এর গুরুত্বও কম নয়। চলুন আজ জেনে নিই এই রোগ সম্পর্কে।

মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি বা যৌনাঙ্গের মাংসল ঠোঁটের মতো অংশের ফুসকুড়ি, ফোলাভাব এবং লালভাব, অ্যালার্জি, ব্যাকটেরিয়া বা ইস্ট বা টিক পরজীবী সংক্রমণ, বা মিলনের সময় তৈলাক্তকরণ বা তরল পদার্থের অভাবের জন্য দায়ী করা যেতে পারে।

মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি কারণ

বিশেষঙ্গ গণ মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি হওয়ার তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলো,কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস, ভ্যাজাইনাইটিস এবং বার্থোলিনের সিস্ট।

কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস এক ধরনের অ্যালার্জি। এটি যে কোন অ্যালার্জি জাতীয় পদার্থ, কাপড়, সাবান ইত্যাদির মাধ্যমে হয়। ভ্যাজিনাইটিস ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা পরজীবী সংক্রমণের কারণে হয়। এবং, বার্থোলিনের সিস্ট হল যোনিপথের মুখের ফুলে যাওয়া, যেখানে গ্রন্থিগুলি তরল নিঃসরণ করে।মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি,  যখন এই সিস্টগুলি আহত বা সংক্রমিত হয়, তখন পুঁজ এবং ফোড়া তৈরি হয়।

এই তিনটি কারন ছাড়াও বিভিন্ন যৌনরোগের কারনেও মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি হয়ে থাকে যেমন-

ভালভা বা বাহ্যিক যৌনাঙ্গে ফুসকুড়ি নিউরোডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিস, লাইকেন স্ক্লেরোসাস, হারপিসের সাথে ঘটতে পারে। নিউরোডার্মাটাইটিসের সঠিক কারণ জানা যায়নি, তবে এটি পোকামাকড়ের কামড় বা মানসিক চাপের কারণে হতে পারে। এটি বারবার চুলকানির সংবেদন ঘটায় এবং আমরা যত বেশি চুলকাই, তত বেশি চুলকায় এবং এলাকার ত্বক শক্ত হয়ে যায়।

সোরিয়াসিস একটি অটোইমিউন রোগ যেখানে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক কোষ আমাদের আক্রমণ করে। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে ভালভাতে সোরিয়াসিসের ক্ষত বেশি দেখা যায়। মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি সহজ ভাষায়, লাইকেন স্ক্লেরোসাস হল যৌনাঙ্গের ত্বকের একটি প্রদাহ, যা খুব চুলকায়। এবং হারপিস ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়।

মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি প্রতিকার

নারীদের বয়ঃসন্ধির পর থেকেই বিভিন্ন শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। পরবর্তীতে যৌবনে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, যার মধ্যে একটি হল মূত্রাশয় সংক্রমণ। মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি, এটা শুধু মূত্রাশয় বা মূত্রনালীর সংক্রমণ নয় যেটা অনেক মহিলাই ভোগেন। অনেকেই যৌনাঙ্গের চারপাশে প্রচণ্ড চুলকানিতে ভোগেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে রয়েছে কিছু ঘরোয়া টিপস।

যে সব উপায়ে সহজেই মূত্রাশয়ের সংক্রমণ বা মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি কমানো যায় দেখেনিন।

  • আপেল সিডার ভিনেগার সংক্রমণের প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে পারে। আপেল ভিনেগারে কিছু লেবুর রস যোগ করুন এবং এতে মধু যোগ করুন। এই মিশ্রণের ব্যবহার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে।
  • যদি ঘন ঘন মূত্রাশয় সংক্রমণ হয় এবং যৌনাঙ্গের চারপাশে চুলকানি হয় তাহলে আমলকির রস দিনে অন্তত ৪ থেকে ৫ বার পান করুন।
  • যৌন সমস্যার জন্যও ক্র্যানবেরির জুস খুব ভালো। এটি শরীরে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির সমস্যা এড়ায়।
  • গরম পানির ব্যাগে গরম পানি রেখে ধীরে ধীরে সেঁখ নিলে মূত্রাশয়ের রোগ বা জ্বালা ও ব্যথা উপশম হয়।
  • বেশি করে পানি পান করলে মূত্রাশয় সংক্রমণ হয় না। মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি, যাদের পানি পানের অভ্যাস কম তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বাড়ে। তাই দিনে অন্তত ৭ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করুন।

যৌনাঙ্গে চুলকানি প্রতিরোধ

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। তাই এই রোগটি যাতে আপনার না হয় সেজন্য আগে থেকেই সতর্ক থাকুন এবং নিচের কথাগুলো মেনে চলুন।

  • সুতির অন্তর্বাস বা প্যান্টি পরুন। সিন্থেটিক প্যান্টি পরবেন না।
  • যৌনাঙ্গে রঙিন এবং ভারী গন্ধযুক্ত টয়লেট টিস্যু এবং সাবান ব্যবহার করবেন না।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • ভেজা কাপড়ে বেশিক্ষণ থাকবেন না। মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি এড়াতে গোসল বা ব্যায়াম করার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভেজা কাপড় পরিবর্তন করুন। যারা সুইমিং পুলে সাঁতার কাটে তারাও ক্লোরিনের কারণে চুলকানি অনুভব করতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।
  • ফেমিনিন হাইজিন স্প্রে ও ডুশ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
  • সহবাসের পর যৌনাঙ্গ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
  • প্রতিদিন টকদই খান, এতে ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে।
  • সর্বদা আপনার যৌনাঙ্গ পরিষ্কার রাখুন। মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি কমাতে প্রস্রাব করার সময় বা টয়লেটে যাওয়ার সময় নিয়ম অনুযায়ী সামনে থেকে পিছনে হাত দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। টয়লেট থেকে ব্যাকটেরিয়া যেন যোনিপথে প্রবেশ না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  • একাধিক ব্যক্তির সাথে সহবাস এড়িয়ে চলুন।
  • মাসিকের সময় নোংরা কাপড় ব্যবহার করবেন না। পরিষ্কার প্যাড ব্যবহার করুন।
  • সহবাসের পর প্রস্রাব করুন।
  • নিয়মিত গোসল করুন।
  • শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমান।

মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানির সমস্যা ঘরোয়া প্রতিকার দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। ঘরোয়া প্রতিকারগুলি সব ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় নাও হতে পারে,তবে ওষুধের মাধ্যমে লক্ষণগুলি উপশম করা যেতে পারে। তাই আপনার যদি যৌনাঙ্গে চুলকানি হয় তবে অবশ্যই একজন গাইনোকোলজিস্ট বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা ত্বক ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। অবহেলা করলে যৌনাঙ্গে চুলকানি আপনাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বা আপনার সন্তান এবং সঙ্গীর ক্ষতি করতে পারে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *