মিরপুরে বর্জ্য নিতে ছাত্রলীগ নেতার বাধা

মিরপুরে বর্জ্য নিতে ছাত্রলীগ নেতার বাধা

বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের (ভ্যান সার্ভিস) কাজের জন্য সিটি করপোরেশন যে অনুমতি দেয় এর নবায়ন আছে। এরপরও ছাত্রলীগ নেতা ও তাঁর লোকজনের বাধায় বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করতে পারছে না নগর সেবা বহুমুখী সমবায় সমিতি নামের বর্জ্য সংগ্রহকারী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।প্রতিষ্ঠানটির মালিক নাহিদ আক্তার বলেন, মিরপুরের শাহ আলী থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হায়দার আলী ও তাঁর সহযোগীরা বর্জ্য সংগ্রহের কাজে তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বাধা দিচ্ছেন। পেছন থেকে তাঁদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর (ডিএনসিসি-৭ নম্বর ওয়ার্ড) তফাজ্জল হোসেন।নগর সেবা বহুমুখী সমবায় সমিতি নামের বর্জ্য সংগ্রহকারী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে ওই নেতার পক্ষ থেকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।


নগর সেবা বহুমুখী সমবায় সমিতি ১৯৯৬ সাল থেকে মিরপুর-২ নম্বর সেকশনের এ, বি, সি, ডি, ই ও এফ ব্লকের বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে। করপোরেশনের অনুমতিপত্র নিয়ে কাজ করছে ২০০৪ সাল থেকে। সঠিকভাবে বর্জ্য সংগ্রহ কাজের স্বীকৃতস্বরূপ ২০০৬ ও ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি দুবার জাইকার ‘ক্লিন ঢাকা ওয়ার্ড কনটেস্ট’ পুরস্কার জিতেছে। বর্জ্য সংগ্রহের মাধ্যমে সমাজসেবায় অবদান রাখায় ২০১৭ সালে অনন্যা সোশ্যাল ফাউন্ডেশনের নেলসন ম্যান্ডেলা স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছে তারা। করোনা পরিস্থিতিতেও পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য ২০২১ সালের নারী দিবসের সম্মাননা পেয়েছেন নাহিদ আক্তার।
প্রতিষ্ঠানটির বর্জ্য সংগ্রহকারী কর্মীরা বলছেন, কাজ করতে গেলেই হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কাউন্সিলরের সহযোগিতা চাওয়া হলেও তিনি সাহায্য করছেন না। কারণ, কাউন্সিলরের প্রশ্রয়েই হায়দার ও তাঁর সহযোগীরা এসব করছেন। কাজ না করেও তাঁরা বিল উঠিয়ে নিচ্ছেন।

নাহিদ আক্তার বলেন, কাউন্সিলর তফাজ্জলের অনুসারীরাও ‘প্রগতি যুব সংঘ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে বর্জ্য সংগ্রহের কাজের অনুমতি পেতে করপোরেশনে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনে কাউন্সিলর তফাজ্জল সুপারিশও করেছিলেন। কিন্তু করপোরেশন ওই প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়নি। প্রগতি যুব সংঘের সভাপতি ছাত্রলীগ নেতা হায়দার এই ওয়ার্ডের ই ও এফ ব্লকের ময়লা সংগ্রহের কাজ দখল করে নিয়েছেন। তাঁর (নাহিদ আক্তার) প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য সংগ্রহের তিনটি ভ্যানগাড়িও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।শুধু বর্জ্য সংগ্রহের কাজ দখলই নয়, হায়দারের নেতৃত্বে ময়লার বিলের টাকাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ই-ব্লকের ৭ নম্বর সড়কের ২ ও ৪ নম্বর বাসার একাধিক ভাড়াটে বলেন, আগে প্রতি মাসে ৮০ টাকা দিতে হতো। কাউন্সিলরের অনুসারীরা তা বাড়িয়ে দিয়েছেন। সড়কটির ২ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাটে ১২০ টাকা এবং ৪ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাটে ১০০ টাকা বিল নেওয়া হয়েছে। সামনে মাসে ১৫০ টাকা করে দিতে হবে বলেও জানিয়ে গেছেন তাঁরা।

মিরপুর-২ নম্বর সেকশনের এফ-ব্লকে নাসিমবাগ বস্তিতে ঘর আছে প্রায় দেড় শ। আগে প্রতিটি ঘর থেকে মাসে ২০-৩০ টাকা নেওয়া হতো। হায়দার ও তাঁর সহযোগীরা প্রতিটি ঘর থেকে বিল ৮০ টাকা দিতে হবে বলে জানিয়ে গেছেন।অভিযোগের বিষয়ে হায়দার আলী বলেন, ই ও এফ—এই দুটি ব্লকের বাড়ির মালিকদের সংগঠন বাড়িমালিক সমিতির নেতারা নাহিদ আক্তারের বর্জ্য সংগ্রহের প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বাড়িমালিকেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁদের সংগঠনকে বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু ঝামেলার কারণে তিনি সরে এসেছেন। এখন স্থানীয় যুবকেরা এ কাজ করছেন।

বিলের বিষয়ে হায়দার বলেন, প্রগতি যুব সংঘ এক মাস (অক্টোবর) ময়লা সংগ্রহের কাজ করেছে। তাই তখন ওই সংঘের রসিদে বিল আদায় করা হয়েছে। যেসব ভবনে ওপরে গিয়ে ময়লা আনতে হয়েছে, শুধু সেসব ভবন থেকে ১০০ বা ১২০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।কাউন্সিলর তফাজ্জল বলেন, ‘আমি সমস্যাটি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। তবে তিনি নিজে এসবের সঙ্গে জড়িত নন।’এ বিষয়ে প্রথম আলোর কথা হয় স্থপতি ও নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ইকবাল হাবিবের সঙ্গে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের কার্যতালিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। কাজেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রাজনীতিকরণের সুযোগ দেওয়া হলে জনগণের ভোগান্তি হবে, করপোরেশনের সব উদ্যোগে কালিমা লাগবে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *