মিথ্যে অপবাদে গৃহবধূ ও ইমামকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন

চরিত্রহীন অপবাদ দিয়ে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় এক গৃহবধূ ও মসজিদের ইমামকে সারা রাত খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে এলাকার কিছু বখাটে যুবকের বিরুদ্ধে। উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নে গত রোববার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, এক বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার পর মসজিদের ইমাম মো. রুহুল আমিন (২৩) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় গ্যাসের ট্যাবলেটের জন্য পূর্ব পরিচিত মসজিদের পাশের বাড়ির ভাবিকে মোবাইল করলে তিনি ট্যাবলেট নিয়ে যেতে বলেন। ইমাম রুহুল আমিন ওই বাড়িতে গ্যাসের ট্যাবলেট আনতে যান।

ওষুধ নিয়ে ফেরার সময় এলাকার কিছু যুবক ইমাম রুহুল আমিনকে আটক করে মসজিদের সামনে রাস্তার পাশে পল্লীবিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রেখে মারতে থাকে। কিছু সময় পর যুবকরা ওই গৃহবধূকেও তাঁর নিজ ঘর থেকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে এসে একই খুঁটিতে বেঁধে রাখে। এরপর দুজনকেই রাতভর মারপিট করে।

মারপিটে ইমামের এক হাত ভেঙে যায় ও দুজনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক জখম হয়।পরের দিন সোমবার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গোলাম ফারুক টুকুন ও ভাঙ্গুড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রমজান আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, ইমাম ও গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলেন।

তারা কোনো অভিযোগ না পেয়ে গৃহবধূ ও ইমামকে ছেড়ে দেয়। পরে তাদের দুজনকে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও এলাকার প্রধান এলাকার যুবকদের বাঁচাতে ইমাম ও গৃহবধূর কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নেয় বলে জানা যায়।

গৃহবধূ স্বাক্ষর না দিতে চাইলে তাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখান হয়।গ্রামের যুবকদের অভিযোগ, ওই ইমাম দীর্ঘদিন ধরে মসজিদে ইমামতি করছেন। ঘটনার রাতে ওই গৃহবধূর বাড়িতে ইমামকে প্রবেশ করতে দেখে। গৃহবধূকে ডাকাডাকি করলে ওই ইমাম দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় গ্রামবাসী তাঁকে ধাওয়া করে আটক করে এবং ওই গৃহবধূসহ মসজিদের সামনে সড়কের পাশে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।

’তবে তাদের আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া যায়নি বলে তারা জানান।গৃহবধূ বলেন, ‘বিনা অপরাধে এলাকার কিছু অসৎ মানুষ আমাকে যে কলঙ্ক দিয়ে রাস্তায় শত শত মানুষের সামনে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাতভর মারধর করেছে আমি তার বিচার চাই।’ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ইউপি সদস্য মাজেদ হোসেন জানান, ঘটনার কিছুক্ষণ পর আমি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক টুকুন বলেন, ‘গৃহবধূ ও ইমামের কোনো অপরাধ না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দিয়েছি।’ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, ‘ভুল বুঝার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। লিখিত অভিযোগ না থাকায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Comment