যুক্তরাষ্ট্রের একটি লবিস্ট ফার্মের পেছনে তিন বছরে বিএনপি দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১৭ কোটি টাকা) খরচ করেছে, এমন তথ্য জাতীয় সংসদে দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত গত পাঁচ বছরে যতগুলো লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে, তার প্রতিটির যোগাযোগের ঠিকানা আছে, প্রতিটির টাকাপয়সার হিসাব আছে। কে দিয়েছেন, কোন অ্যাকাউন্টে নিয়েছেন, সবকিছু আছে। এর তদন্ত দাবি করেন তিনি।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের ঠিকানায় একটি সংস্থার (লবিস্ট ফার্ম) সঙ্গে মাসিক ৫০ হাজার ডলারের চুক্তি হয়েছিল। তিন বছর তা অব্যাহত ছিল। খরচ হয় ২ মিলিয়ন ডলার। এমন ১০টি ডকুমেন্টের তথ্য তাঁর কাছে আছে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিটি দল বছর শেষে হিসাব-নিকাশ প্রকাশ করে। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করতে হবে এই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে গেছে কি না। তিনি এর তদন্ত দাবি করেন। উত্তর চান নির্বাচন কমিশনের কাছে।
অবশ্য মার্কিন প্রশাসন, নীতিনির্ধারক, মানবাধিকার গোষ্ঠী ও গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে একাধিক লবিস্ট প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছে। এদের মধ্যে রয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক বিজিআর। তাদের সঙ্গে করা চুক্তির বিষয়ে দেখা যায়, গত বছর বিজিআর বাংলাদেশের কাছ থেকে ত্রৈমাসিক ৮০ হাজার ডলার করে পেয়েছে, বছরের যার পরিমাণ ৩ লাখ ২০ হাজার ডলার (আনুমানিক ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা)।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপে বিএনপি যোগ না দেওয়ায়ও সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংলাপে যোগ না দিয়ে বিদেশের দরজায় কড়া নেড়ে লাভ হবে না। বিএনপি এর আগেও মার্কিন গণমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে নিবন্ধ লিখেছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষে এক নিবন্ধে বাংলাদেশের বিষয়ে পশ্চিমা দেশকে প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এটাকে ‘লজ্জাজনক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ। পৃথিবীর অন্য কোনো যত শক্তিশালী শক্তিধর রাষ্ট্রই আসুক না কেন, তারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে না।
খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি পারলে ক্ষমতায় এসে আইন সংশোধন করে তাঁকে জেল থেকে মুক্ত করুক। আইনের চোখে একজন পলাতক আসামি কীভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় আরও অংশ নেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাংসদ উম্মে কুলসুম প্রমুখ।