মানবদেহই মোবাইল ফোন!

বীরেন্দ্রনাথ অধিকারী

টেলিফোনের আদি রূপ টিন ক্যান টেলিফোন বা লাভার্স ফোন বহু শতাব্দী ধরে প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়। এটি পুরাকালের এমন একটি প্রযুক্তি, যাতে টানটান করে বাঁধা তন্তু বা তারের সঙ্গে দুটি পাতলা পর্দা সংযুক্ত করে তার বরাবর যান্ত্রিক কম্পনের মাধ্যমে শব্দ পাঠানো হতো। উল্লেখ্য, সেকালে কোনো তরলপ্রবাহ বা বৈদ্যুতিক প্রবাহ ব্যবহারের সুযোগ ছিল না। তবে আশ্চর্য হলেও সত্য, টেলিযোগাযোগের অত্যাধুনিক যুগে এসেও প্রাচীন টিন ক্যান টেলিফোন বা লাভার্স ফোনের অস্তিত্ব দেখা যায়। তবে তা এখন আর ফোন হিসেবে ব্যবহারের জন্য নয়, বাচ্চাদের খেলনা হিসেবে।
এতদিন ধারণা করা হচ্ছিল, মোবাইল ফোনই হয়তো আপাতত টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে সর্বশেষ সংযোজন। সাধারণ সিমকার্ডের চেয়ে ই-সিম ব্যবহারে অনেক সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, সাধারণ সিম ব্যবহারের জন্য ফোন সেটে যেমন বিশেষ ট্রে প্রয়োজন হয়, ই-সিম ব্যবহারে তা প্রয়োজন হয় না। কারণ শেষোক্তটি চিপস আকারে ফোন সেটে এমবেডেড করা থাকে। ফলে ফোন সেটে বাড়তি ফিজিক্যাল স্পেস পাওয়া যায়, যা ব্যবহার করে স্মার্টফোন উৎপাদকরা ব্যাটারির আকার বাড়ানোসহ বেশ কিছু নতুন ও অ্যাডভান্সড ফিচার যুক্ত করতে পারে। এ ছাড়া ফোন সেটে কম ছিদ্র থাকার কারণে এটি ধুলাবালি থেকে সুরক্ষিত থাকবে। ই-সিমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এতে বেশ সহজে মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিবর্তন করা যায়। অপারেটর পরিবর্তন করতে নতুন সিম কিনে তা ফোন সেটে প্রবেশ করানোর কোনো প্রয়োজন হয় না। ই-সিমের বেলায় অ্যাপের ইজেক্ট অপশনে ক্লিক করে এটি রিমুভ করে সফট কনফিগারেশনের মাধ্যমে নতুন একটি ই-সিম ফোন সেটে এমবেডেড করা যায়। এ ছাড়া ই-সিম ব্যবহার করে এক নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে সহজেই সুইচ করা যায়। একটি ই-সিমে পাঁচটি ভার্চুয়াল সিমকার্ড সংরক্ষণ করা যাবে। এত সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ই-সিম নিয়ে যখন বিশ্বব্যাপী তোলপাড় চলছে, ঠিক তখনই প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস স্মার্টফোনের বিকল্প নতুন কিছু আসছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বাজার থেকে স্মার্টফোনকে হটিয়ে দিতে সক্ষম হবে এমন নতুন ধরনের এক প্রযুক্তি আসছে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তিনি। নতুন এ প্রযুক্তির নাম ‘ইলেকট্রনিক ট্যাটু’। কী এই ‘ইলেকট্রনিক ট্যাটু’!

সৃজনশীল প্রযুক্তিবিষয়ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘চাওটিক মুন’ নামক কোম্পানির নতুন উদ্ভাবন হচ্ছে ‘ইলেকট্রনিক ট্যাটু’, যা একটি বায়োটেকনোলজিভিত্তিক কৌশল। এর মাধ্যমে মানবদেহের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্নেষণ করা যাবে। এ ট্যাটু প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা এবং ক্রীড়াসম্পর্কিত তথ্যের ডাটা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবে এবং এ তথ্যের মাধ্যমেই রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এ ট্যাটুর মাধ্যমে শারীরিক কর্মক্ষমতাকে উন্নত করাও সম্ভব হবে।
‘ইলেকট্রনিক ট্যাটু’ নিয়ে গবেষণা চলমান থাকলেও এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘চাওটিক মুন’ ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছে, এটি ত্বকে অস্থায়ীভাবে প্রয়োগ করা হবে এবং সেন্সর ও ট্র্যাকারগুলোর সঙ্গে কাজ করবে; যা একটি বিশেষ ধরনের কালির মাধ্যমে তথ্য পাঠাবে ও গ্রহণ করবে। তবে বিল গেটস ‘ইলেকট্রনিক ট্যাটু’র প্রাথমিক বাস্তবায়নকে যথেষ্ট বলে মনে করছেন না বটে, কিন্তু তিনি ভবিষ্যতে এ ট্যাটু বর্তমান স্মার্টফোনের বিকল্প ডিভাইস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। বিষয়টি কিছুটা সায়েন্স ফিকশনের মতো বলে মনে হতে পারে।

বিল গেটসের এ স্বপ্ন কবে সফল হবে, তা জানা যায়নি। তবে তিনি ও তার দল মানবদেহে সংযোজিত নতুন এ ডিভাইসটির ব্যবহার সবার জন্য উন্মুক্ত করার একটি সহজ উপায় খুঁজছেন। তেমনটি হলে মানবদেহই হবে মোবাইল ফোন ডিভাইস; আলাদা কোনো সেট ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে না। প্রযুক্তির এ এক অপার বিস্ময়, যার জন্য অপেক্ষা করছে মানব জাতি!
বীরেন্দ্রনাথ অধিকারী : মুক্তিযোদ্ধা ও প্রযুক্তিবিদ

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *